ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মীম নোশিন নাওয়াল খান

প্রিয় বন্ধু টেডি বিয়ার

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

প্রিয় বন্ধু টেডি বিয়ার

ছোটদের খুব প্রিয় নাম ‘টেডি বিয়ার।’ টেডি বিয়ারের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা সুন্দর খেলনা ভালুকছানার নাম, যেটা হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে প্রিয় খেলার সঙ্গী। নানা রঙের, নানা সাইজের টেডি বিয়ার সবারই আছে। শরীরে প্রাণ না থাকলেও ছোটদের খুব প্রিয় বন্ধু সে। আচ্ছা বল তো, এই খেলনা ভালুকছানার নাম কীভাবে টেডি বিয়ার হলো? এটার পেছনে কিন্তু একটা মজার গল্প আছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন রাষ্ট্রপতির নাম ছিল থিওডর রুজভেল্ট, যার ডাক নাম ছিল টেডি। তিনি শিকার করতে খুব পছন্দ করতেন। ১৯০২ সালে একবার তিনি মিসিসিপির জঙ্গলে শিকার করতে বের হন। তার সঙ্গীরা প্রায় সবাই কোন না কোন জন্তু শিকার করেছিলেন, কিন্তু রুজভেল্ট সারাদিন ঘুরেও কোন জন্তু শিকার করতে পারেননি। এরপর তার সঙ্গের সরকারী কর্মকর্তারা একটি খয়েরি রঙের ভালুকছানা ধরে আনেন এবং গাছের সঙ্গে বেঁধে দেন, যেন রুজভেল্ট সেটা শিকার করতে পারেন। কিন্তু রুজভেল্ট সেটাকে দেখে জানান, তিনি ভালুকছানাটাকে শিকার করবেন না। পরদিন এই ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় কার্টুন ছাপা হয়। সেই কার্টুনে আঁকা ভালুকছানা দেখে মরিস মিচটম নামের এক ব্যক্তি একটি খেলনা ভালুকছানা তৈরি করেন এবং রুজভেল্টের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তার দোকানে এটি সাজিয়ে রাখেন, যার সামনে লেখা ছিল ‘টেডি’স বিয়ার।’ একই সময়ে রিচার্ড স্টিফের করা নকশায় জার্মানির দ্য স্টিফ ফার্ম খেলনা ভালুকছানা তৈরি করে। এভাবেই টেডি বিয়ারের জন্ম। আর টেডি’স বিয়ার থেকেই তার নাম হয়ে ওঠে টেডি বিয়ার। শুধু খেলনা বা উপহার হিসেবেই কিন্তু এটা জনপ্রিয় নয়, টেডি বিয়ারকে নিয়ে প্রচলিত আছে নানা কাহিনী। শিশুরা অনেকেই একা একা ঘুমাতে ভয় পায়। অনেক দেশে একা ঘুমাতে যাওয়া শিশুরা টেডি বিয়ার সঙ্গে নিয়ে ঘুমায়। তারা বিশ্বাস করে, টেডি বিয়ার তাদের সব ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও কিছু দেশে বিশ্বাস করা হয়, টেডি বিয়ার মানুষের মধ্যে ভালবাসা ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করে। শুধু ছোটদের কাছে না, টেডি বিয়ার বড়দের কাছেও সমান জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে টেডি বিয়ারের প্রতি মানুষের ভালবাসা বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ১৯১২ সালে টাইটানিক জাহাজডুবির পর জার্মান খেলনা তৈরির কোম্পানি স্টিফ কালো রঙের ৫০০টি টেডি বিয়ার তৈরি করে শোক প্রকাশের জন্য। এই টেডি বিয়ারগুলো নিলামে ২০ হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যে বিক্রি হয়। এছাড়া উইনি-দ্য-পুহ-এর সঙ্গে তো তোমরা সবাই পরিচিত। জনপ্রিয় এই কার্টুন টেডি বিয়ারও কিন্তু একটা সত্যিকারের ভালুকছানার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। পুহ-এর লেখক এ এ মিলনের ছেলে ক্রিস্টোফার রবিনের পোষা ভালুকছানার উপর ভিত্তি করেই পুহ-এর গল্পগুলো লেখা হয়েছিল, যার অনেকগুলো গল্প নিয়ে ওয়াল্ট ডিজনি কার্টুন তৈরি করেছে। আগেই বলেছি সত্যিকারের ভালুকছানা যদিও নানা রঙের হয় না, বর্তমানে হরেক রঙের, হরেক সাইজের টেডি বিয়ার পাওয়া যায়। তবে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট টেডি বিয়ারের কথা জান? বিশ্বের সবচেয়ে ছোট টেডি বিয়ারের উচ্চতা ০.২৯ ইঞ্চি। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রতিষ্ঠান এই টেডি বিয়ার তৈরি করে। এই টেডি বিয়ারটাকে যেমন তুমি লিলিপুটের সঙ্গে তুলনা করতে পার, তেমনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেডি বিয়ারকে তুলনা করতে পার দৈত্যের সঙ্গে। ২০০৮ সালে আমেরিকায় তৈরি করা বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেডি বিয়ারটা ছিল ৫৫ ফিট লম্বা! টেডি বিয়ার কিন্তু মহাশূন্যেও গিয়েছে। ১৯৯৫ সালে প্রথম একটি টেডি বিয়ারকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়। এছাড়া টেডি বিয়ারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে। বছরের একটা দিনকে আলাদা করে ঘোষণা করা হয়েছে ‘হাগ এ্যা টেডি ডে।’ বিভিন্ন স্থানে টেডি বিয়ার নিয়ে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। এভাবেই টেডি’স বিয়ার থেকে খেলনা ভালুকছানা হয়ে উঠেছে আজকের সবার প্রিয় এবং আদরের বন্ধু টেডি বিয়ার।
×