ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙ্গনে দুই হাজার পরিবার গৃহহারা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙ্গনে দুই হাজার পরিবার গৃহহারা

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ রাজীবপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙ্গনে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে তীরবর্তী এলাকার মানুষ। মোহনগঞ্জ ইউনিয়নসহ পার্শ¦বর্তী ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙ্গন চলছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রায় দুই হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিদিনই নদের গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে মোহনগঞ্জ বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানা স্থাপনা। এ অবস্থায় ভাঙ্গন রোধে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়ায় তাদেব ক্ষোভ বাড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে তারা মানববন্ধন করেছেন। এলাকাবাসী জানান, সরকার যদি এখনই ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ না নেয় তাহলে একদিন এ জনপদ হারিয়ে যাবে। রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের মোহনগঞ্জ বাজার, নয়ারচর, নেওয়াজি, শংকরপুর, হাজীপাড়া, ফকিরপাড়া ও ব্যাপারীপাড়াসহ প্রায় ২৫ গ্রামের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ১৫ দিনে নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ও শত শত একর ফসলি জমি। মোহনগঞ্জ গ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত চারবার বাড়ি ভেঙ্গেছি। ঘরবাড়ি আবারও ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। তাদের বাড়িঘর দু’-একদিনের মধ্যে না সরালে নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের জোহরা বেগম জানান, ১০ দিন হয় ভাঙ্গনের মুখে ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। এখনও ঘর তুলতে পারিনি। টাকা নেই। মেম্বার-চেয়ারম্যানরাও কোন সাহায্য দেয় না। এ অবস্থায় কোথাও যাওয়ারও কোন উপায় নেই। দিনে একবেলা খাবার জোটে আর বাকি দুই বেলা উপোস থাকতে হয়। একই এলাকার ভাঙ্গনের শিকার সোবহান মিয়া জানান, মানুষের জায়গার ওপর ঘর রেখেছি। ভিটেমাটি, আবাদি জমি সবই নদে বিলীন হয়েছে। কোথাও যে ঘর ওঠাব সে জায়গাও নেই। পরিবার নিয়ে বিপদে আছি। মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই তার ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। তার ইউনিয়নেই প্রায় দেড় হাজার পরিবার ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। আমি উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীকে নিয়ে অনেকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেছি। কোন কাজ হয়নি। শুধু বলে বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন চলছে। আমরা এ দুটি উপজেলায় প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার স্থায়ী নদীতীর সংরক্ষণ কাজ এবং প্রায় ২০ কিলোমিটার ড্রেজিংসহ একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছি, যেটা প্রক্রিয়াধীন। মোহনগঞ্জ বাজার এলাকায় ভাঙ্গন রোধে গত বছর কিছু কাজ করেছি। এ বছরও ৩শ’ ৩০ মিটার কাজের অনুমোদন পেয়েছি। শীঘ্রই সেখানে কাজ শুরু হবে।
×