ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার পৌরসভা মার্কেটের ভাড়া যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

কক্সবাজার পৌরসভা মার্কেটের ভাড়া  যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ পৌরসভার সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন দোকানের ভাড়ার একটি বড় অংশ মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ে নিচ্ছে। এতে পৌরসভা মোটা দাগের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুপার মার্কেটের কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা পৌরসভাকে ভাড়া দেয় মাত্র ৪শ’ থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। ওইসব দোকানের ভাড়াটিয়া ভাড়া পরিশোধ করছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মূলত যাদের সঙ্গে পৌরসভার চুক্তি আছে তারা উপভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে আয় করছে বাড়তি কয়েক হাজার টাকা। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, প্রথমত পৌরসভার দোকানের ভাড়া বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে অনেকগুণ কম। আর কোন উপভাড়াটিয়া না রেখে সরাসরি ভাড়া দিলে পৌরসভা বহুগুণে রাজস্ব পেত। কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয়ের বাজার পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, বড় বাজার এলাকার পৌরসভার পুরাতন সুপার মার্কেটে দোকান আছে ৪০টি, এর মধ্যে বেশিরভাগ দোকানের ভাড়া ৯শ’ টাকা, ২টি দোকান আছে ১হাজার তিন শ’ টাকা, আর ২ টি আছে ৬শ’ টাকা ভাড়ায়। আর নবনির্মিত পৌর সুপার মার্কেটের নিচ তলায় দোকান আছে ২৯টি। এর মধ্যে ১২টি দোকানের ভাড়া ১হাজার ২শ’ টাকা। ১২টি দোকানের ভাড়া ১হাজার ৫শ’ টাকা। বাকিগুলো ৮শ’ টাকা। দ্বিতীয় তলায় দোকান আছে ২৬টি। যার বেশিরভাগ ভাড়া ৮৫০ টাকার নিচে। আবার তৃতীয় তলায় আছে ১৫টি। এছাড়া পৌরসভার হকার মার্কেটে দোকান আছে ৭১টি এবং এন্ডারসন রোডের হকার মার্কেটে দোকান আছে ৩১টি। এছাড়া পুরাতন তরকারি সেট ২২টি, পুরাতন মাছ বাজার সেট ৯টি, আরও আছে শুঁটকি মাছের দোকান। এই খাত থেকে মাসে ৪-৫ লাখ টাকা আসে বলে পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ কয়েক কর্মচারী জানান, পর্যটন শহর কক্সবাজার পৌরসভার যে সম্পদ আছে সেগুলো ঠিকমতো পরিচর্যা করলে বর্তমানে যে টাকা আয় হয়, তার ছেয়ে ১০ গুণ বেশি টাকা আয় হতো। আমরা জানি সুপার মার্কেটের যেসব দোকান পৌরসভা ৬শ’ টাকা ভাড়া পায়, প্রকৃতভাবে সেই সব দোকানে ভাড়া ৬ হাজার টাকা নিচ্ছে দোকানদার। অথচ পৌরসভাকে দেয় মাত্র ৬শ’ টাকা। তাও মাঝে মধ্যে বাকি থাকে। যেসব দোকানের ভাড়া ১হাজার ২শ’ টাকা, সেগুলোর থেকে মালিকরা ভাড়া নেয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। পৌরসভা থেকে চুক্তি করে যারা দোকানের মালিক বনেছে, তারা কেউ দোকান করে না। বরং সবাই উপভাড়া দিয়ে বাড়তি টাকা আয় করছে। পৌরবাসীর দাবিÑ বর্তমান পৌর পরিষদ অনেক বেশি জনকল্যাণকর কাজ করছে, যা অতীতে কেউ করেনি। আমরা চাইব পৌরসভার দোকানগুলো নিয়ে যদি একটি শুদ্ধি অভিযান চালান যেত, তাহলে স্থায়ীভাবে পৌরসভার জন্য উপকার হতো বহুগুণ। এদিকে বড় বাজারস্থ পৌরসভার সুপার মার্কেটে গিয়ে কয়েক দোকানীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে আসল মালিক কেউ নেই, সবাই উপভাড়াটিয়া। এর মধ্যে কয়েকটি দোকান ৫-৬ দফাও উপভাড়া দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু দোকান আছে, পৌরসভা ভাড়া পায় মাত্র সাড়ে ৩শ’ টাকা। কিন্তু ওই দোকান থেকে আসল ভাড়া নেয়া হয়ে থাকে ৩ হাজার টাকা। যেসব দোকানের ভাড়া ৯শ’ থেকে ১হাজার ২শ’ টাকা, সেসব দোকানের ভাড়া ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা। তারা নিজের্ওা পৌরসভার দোকানগুলোর বর্তমান ভাড়া অনেক কম বলে মনে করেন। নুরপাড়ার ব্যবসায়ী আজিজ বলেন, আমরা মাঝে মধ্যে শুনি পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। আবার যে কোন কাজের জন্য বাজেট নেই। পৌরসভার যে সম্পদগুলোর ঠিকমতো ব্যবহার করা ও একটি স্থায়ী সমাধান করা হলে ভাল হতো। পৌর সচিব রাসেল চৌধুরী বলেন, পৌরসভা চালায় পৌর পরিষদ। উনারা যদি সিদ্ধান্ত নেন- কাল থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে। যদি ঠিকমতো ভাড়া আদায় হয়, তাহলে কয়েকগুণ রাজস্ব বাড়বে। নিয়ম অনুযায়ী উপভাড়া দেয়ার কোন নিয়ম নেই। এছাড়া বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ভাড়া পূর্ণ নির্ধারণ করা যেতে পারে। কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে খুব দ্রুত পরিষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেব।
×