ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই

নিখিল মানখিন ॥ রাজধানীতে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। চলতি বছর মৌসুমের আগেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১৪০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বেসরকারী হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজধানীতে সারা বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ! এখন আর ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার নির্ধারিত মৌসুম নেই। ডেঙ্গু ও জিকা রোগের বাহক এডিস মশা হওয়ায় বিষয়টি রাজধানীর মশক নিধনকারী কর্তৃপক্ষসহ বিশেষজ্ঞদের বেশি মাত্রায় ভাবিয়ে তুলেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ইতোমধ্যে বিশেষ সভা আহ্বান করে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রাজধানীর ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই এবং এ রোগে আক্রান্তের চিকিৎসার সুব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিন্তামুক্ত থাকতে পারছে না নগরবাসী। চলতি বছরের মার্চে জ্বর দেখা দিলে বাবুল হোসেনকে (৩৫) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাজধানীর মেরুল বাড্ডার ১৯/সি হোল্ডিংয়ের বাসায় থাকেন তিনি। মৌসুমী জ্বর ভেবে আক্রান্তের ৪ দিন তাকে বাসায় রাখা হয়। বাবুল হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, তিনি নিজেও একজন স্বাস্থ্যকর্মী। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। তাই মৌসুমী জ্বর ভেবে প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে থাকি। কিন্তু জ্বর ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব হতে থাকে বলে জানান বাবুল হোসেন। আর হাসপাতালে ভর্তি করাতে আর কয়েকদিন দেরি হলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ডেঙ্গু রোগীর প্রাথমিক উপসর্গ অনেকটা টাইফয়েড রোগীর মতো। ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করতে পারেন না অনেক চিকিৎসক। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৪৭ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আইইডিসিআর জানায়, ২০১৬ সালে প্রায় ৩ হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২০১৫ সালের মার্চে ২ জন, এপ্রিলে ২ জন, মে মাসে ১ জন, জুনে ১৫ জন, জুলাইয়ে ১৫৬ জন, আগস্টে ৭২৭ জন, সেপ্টেম্বরে ৯৬৫ জন, অক্টোবরে ৮৮০ জন, নবেম্বরে ২৬০ জন ও ডিসেম্বরে ৯০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। সূত্রটি আরও জানায়, রাজধানীতে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭ জন, মার্চে ৩ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মে মাসে ১২ জন, জুনে ৫০ জন, জুলাইয়ে ১৭২ জন, আগস্টে ৩৩৯ জন, সেপ্টেম্বরে ৩৮৫ জন এবং অক্টোবরে আক্রান্ত হয় ৫০১ জন। ২০১২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ১২শ’ ৮৬ জন। জানা গেছে, সম্প্রতি আইইডিসিআর থেকে ২৩টি টিম সরেজমিন বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল পরিদর্শন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা বের করেন। জ্বরে আক্রান্ত কোন রোগীর প্রকৃতপক্ষেই ডেঙ্গু হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে কী করতে হবে সে সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়। রাজধানীর মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি)। দুই সিটি কর্পোরেশনই বলছে, রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ডিএনসিসির ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বরাদ্দ রাখা হয় ১৪ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ডিএসসিসির এবারের বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ সাড়ে ১২ কোটি টাকা। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির কর্মী আছেন ২৭৯ জন এবং ডিএসসিসির কর্মীর সংখ্যা ২৮৪। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত ওষুধ ছিটানোসহ নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক লোকবল, সরঞ্জাম ও যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকার পরও মশা নিধন কার্যক্রমে কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা। এই মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এটি সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমরা প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাচ্ছি। তবে বর্তমানে এ রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর সুস্থ হয়ে উঠছেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু জীবাণুর উৎস এখনও বন্ধ হয়নি। এ কারণে মৃত্যুর হার কমে গেলেও আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ কমছে না।
×