ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি রেখে পরে অফিস থেকেনিতে বলা হচ্ছে

রাজধানীর এক লাখেরও বেশি নাগরিক স্মার্টকার্ড পায়নি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

রাজধানীর এক লাখেরও  বেশি নাগরিক  স্মার্টকার্ড পায়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারিগরি ত্রুটিসহ নানা সমস্যার কারণে স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না অনেকেই। এসব কারণে যারা স্মার্টকার্ড পায়নি তাদের পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গত বছর অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীতে প্রায় ১৪ লাখ স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হলেও নানা সমস্যার কারণে এক লাখের বেশি নাগরিকের স্মার্টকার্ড পাওয়া যায়নি। যাদের স্মার্টকার্ড পাওয়া যায়নি তাদের আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি রেখে দিয়ে পরে অফিস থেকে স্মার্টকার্ড নিতে বলা হচ্ছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা মূলত বিভিন্ন সময় আইডিতে ভুল সংশোধন করেছেন বা ভোটার এলাকা স্থানান্তর করেছেন তাদের কেউই তাৎক্ষণিকভাবে স্মার্টকার্ড পাননি। যারা ভোটার এলাকা স্থানান্তর করেছেন তাদের আগের ঠিনাকায় স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আইডি ভুল সংশোধন করা হলেও স্মাটকার্ডে আগের ভুলই থেকে যাচ্ছে। আইডিকার্ড সংশোধনের বিয়য়টি বিবেচনায় না নিয়েও স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করায় এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে যাদের স্মার্টকার্ডে ভুল রয়েছে তাদের নতুন করে স্মার্টকার্ড সংশোধনের জন্য আবারও আবেদন করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, স্মার্টকার্ডে ভুল থাকলেও সমস্যা হবে না। কারণ সার্ভারে সঠিক তথ্যই সংরক্ষিত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যাদের স্মার্টকার্ডে ভুলত্রুটি রয়েছে তারা পরে ইচ্ছে করলে কার্ড সংশোধন করে নিতে পারবেন। তবে তারা জানান এখনি স্মার্টকার্ডের ভুল সংশোধনী শুরু হয়নি। আগামী বছর থেকে ভুল সংশোধনের কাজ শুরু হবে। ফলে যাদের স্মার্টকার্ডের ভুল রয়েছে তাদের আপাতত ভুল কার্ডই সংগ্রহ করতে হবে। পরে স্মার্টকার্ডের ভুল সংশোধন করে নিতে পারবেন। ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম বলেন, ‘ঢাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণের হার প্রায় ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ নাগরিক নানা কারণে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কার্ড নিতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ে স্মার্টকার্ড নিতে না পারলেও পরে থানা নির্বাচন অফিস থেকে তা সংগ্রহ করা যাবে বলে তিনি জানান। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক আবদুল বাতেন জানান, ভাসমান ভোটার, ফরম পূরণে নাগরিকদের গাফলাতিসহ নানা জটিলতায় অন্তত ৪০ শতাংশ নাগরিকের কেন্দ্রে উপস্থিতি হয়নি। তিনি বলেন, সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সুচারুভাবে কার্ড বিতরণের উদ্যোগ চলছে। গত বছরের ৩ অক্টোবর রাজধানীতে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়। চলতি বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিতরণ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে চোখের আইরিশ ও দশ আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬৩ জন। স্মার্টকার্ড নিয়েছেন ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০ জন। বাকিরা নানা সমস্যার কারণে স্মার্টকার্ড পাননি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার ৫২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৭ ভোটারের স্মার্টকার্ড বিতরণ করছে ১৫টি থানা নির্বাচন অফিস। ইতোমধ্যে কোতোয়ালি, উত্তরা, গুলশান, ধানম-ি, মতিঝিল, সবুজবাগ ও রমনা থানা নির্বাচনী এলাকায় বিতরণ শেষ হয়েছে। চলমান রয়েছে মিরপুর, লালবাগ, ক্যান্টনমেন্ট, মোহাম্মদপুর, ডেমরা, পল্লবী, তেজগাঁও ও সূত্রাপুর এলাকায়। রাজধানীর যেসব এলাকায় বিতরণ চলছে অথবা শেষ হয়েছে সেসব এলাকায় নানা সমস্যার কারণে ১ লাখ ১ হাজার ১১৩ জন তাদের স্মার্টকার্ড পাননি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত নাগরিকদের ভুল সংশোধনের সময় ও সুযোগ না দিয়ে স্মার্টকার্ড ছাপানোর কারণেই অনেকেই স্মার্টকার্ড পাচ্ছে না। তারা বলছেন, স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করার সময়ও এই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ঢাকা সিটিতে বিভিন্ন থানায় স্মার্টকার্ড বিতরণ সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত ভুল সংশোধনের কাজ অব্যাহত রয়েছে। যারা একবার ভুল সংশোধন করছেন তাদের স্মার্টকার্ড পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তবে এনআইডির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে কার্ড বিতরণের ৭৫ দিন আগে সংশ্লিষ্ট উপজেলার জনগণের ভুল সংশোধনের সুযোগ রেখে ঘোষণা দেয়া। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও মূলত পর্যাপ্ত প্রচারের অভাব, ভাসমান ভোটার, স্থানান্তরিত ভোটার, চাকরিজীবী, কারিগরি ত্রুটি ও সমন্বয়হীনতার কারণে স্মার্টকার্ড বিতরণে আশানুরূপ ফল মিলছে না। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৯ কোটির বেশি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া এক প্রকার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এনআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত প্রিন্টার তাদের নেই। বর্তমানে ১০টি প্রিন্টার দিয়ে বিভিন্ন শিফটে স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্মার্টকার্ড সবার হাতে পৌঁছাতে হলে ১৮টি প্রিন্টার মেশিনের তিন শিফটে স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করতে হবে। এদিকে চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এখনও স্মার্টকার্ড তৈরি সব ব্লাঙ্ককার্ড বুঝে পায়নি এনআইডি। তারা জানিয়েছে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্লাঙ্ককার্ড এসে সেই কার্ড প্রিন্টারে দিয়ে স্মার্টকার্ড ছাপা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফ্রান্সের ওই প্রতিষ্ঠান ৫ লাখ ২০ হাজার ব্লাঙ্ককার্ড সরবরাহ করেছে। জানা গেছে সঠিক সময়ে বাকি কার্ডগুলো সরবরাহ করা না হলেও সঠিক সময়ে স্মার্টকার্ড বিতরণও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। অবশ্য এনআইডির মহাপরিচালক জানিয়েছেন ৩০ জুনের মধ্যে বাকি কার্ড দিতে বলা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী না দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের তথ্য ভা-ারে ১০ কোটি ১৭ লাখেরও বেশি নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত আছে। চলমান বিতরণ কার্যক্রমের আওতায় ৩১ জানুয়ারি, ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত নাগরিকদের মধ্যে থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে নয় কোটি স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নিবন্ধিত নাগরিকদের লেমিনেটেড পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয়নি। এসব নাগরিকদের জন্য আপাতত কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড পরিচয়পত্র দেয়া হবে।
×