ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পিস্তল, বিস্ফোরকসহ আইইডি সরঞ্জাম উদ্ধার

শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গী নেতা তামিম দ্বারী তিন সহযোগীসহ আটক

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গী নেতা তামিম দ্বারী তিন সহযোগীসহ আটক

আজাদ সুলায়মান ॥ কৌশলের পর কৌশল পাল্টাচ্ছে জঙ্গীরা। এক কৌশল ফাঁস হলে অন্য কৌশল আবিষ্কার করছে। সর্বশেষ কৌশল অনুযায়ী নব্য জঙ্গী তামিম-সারওয়ারের সহযোগীরা রসদ-সরঞ্জাম আনতে দেশের নৌপথ ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল। এজন্য তারা টার্গেট করেছিল আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী জাহাজে কর্মরত নাবিকদের। সে লক্ষ্যেই কয়েকজনকে নব্য জেএমবিতে ভেড়ায় জঙ্গীরা। এজন্য তারা জাহাজে নিজেদের লোক রিক্রুটের চেষ্টা করছিল। সন্দ্বীপ-হাতিয়াসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নব্য জেএমবির বেশকিছু ট্রলার রয়েছে। এমনকি ঢাকার বুড়িগঙ্গাতেও তারা একটি বড় ট্রলার যোগাড়ের জন্য দুজন জঙ্গীর ওপর দায়িত্ব দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সাভারের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের একটি বাস থেকে নব্য জেএমবির তামিম-সারওয়ার গ্রুপের তিনজনকে গ্রেফতারের পর এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য ফাঁস করে ওই তিন জঙ্গী। এরা হলোÑ ধর্মান্তরিত তামিম দ্বারী ওরফে আব্দুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল জাফরি ওরফে আমীর হামযা ওরফে আল হুযাইফা ওরফে শ্রী গৌরাঙ্গ ম-ল (৩২), কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরউদ্দিন (২৬) ও মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজা (৩২)। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, গুলি, প্লাস্টিক, বিস্ফোরকসহ আইইডি তৈরির সরঞ্জামাদি, চাপাতি, ফোল্ডিং চাকু ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। জানা যায়, তামিম দ্বারী একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। সে নব্য জেএমবির অন্যতম নেতা তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা ছিল। তামিম দ্বারী ২০০৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এরপর সে তবলীগ জামাতে যেত। তবলীগে গিয়ে পরিচয় হয় তানভীর কবিরের সঙ্গে। তানভীর তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং তার বাবা তামিমকে পালক সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ২০০৭ সালে পড়াশোনা শেষ করে। মেরিন একাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১০-১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বাংলার কাকলীসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করে। একই জাহাজে একাডেমিক জুনিয়র আবু বক্করও কর্মরত ছিল। ২০১৩ সালে ‘বাংলার কাকলী’ জাহাজ নিয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার সময় মুসলিম উম্মার ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের করণীয় কী সে বিষয়ে আবু বক্করের সঙ্গে তার আলোচনা হয়। আবু বক্কর তখন জিহাদের কথা বলে। এরপর তামিম জিহাদ সম্পর্কে আগ্রহী হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে আবু বক্কর মিরপুর ১১ নম্বরে তামিম চৌধুরীর সঙ্গে তামিম দ্বারীর পরিচয় করিয়ে দেয়। ওই সময় তামিম চৌধুরী তাকে সশস্ত্র জিহাদের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে। এদিকে, শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, মোস্তফা মজুমদার কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে ২০০৭ সালে পাওয়ার গ্রিড অব কোম্পানি বাংলাদেশে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেয়। কর্মজীবনে এসে একই মনোভাবাপন্নদের সংস্পর্শে জঙ্গীবাদে জড়ায়। গ্রেফতার কামরুল হাসানের পিতা বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, র‌্যাবের তদন্তে এমন একজনের নাম আসে, যে হলি আর্টিজান হামলার কয়েক বছর আগ থেকেই নিহত তামিম চৌধুরীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করত। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনাও করেছে। পরে র‌্যাব নিশ্চিত হয় ওই ব্যক্তির নাম তামিম দ্বারী। এমন তথ্য হাতে নিয়েই তামিম দ্বারীকে গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব-৪। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে সাভারে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে তামিম দ্বারীকে তার দুই সহযোগী কামরুল হাসান ও মোস্তফা মজুমদারসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। মুফতি মাহমুদ জানান, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিকভাবে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছে। হলি আর্টিজান হামলাপরবর্তী বেশকিছু অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ অনেকেই মারা যায়। নেতৃত্বশূন্য দলকে পুনরায় সংগঠিত করতে চেষ্টা করছিল তামিম দ্বারী। সে যে কোন সময় রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য সব স্থানে নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।
×