ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চর্বি ধমনির রক্তে জমাট বেঁধে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

চর্বি ধমনির রক্তে জমাট বেঁধে হৃদরোগের  ঝুঁকি বাড়ায়  না

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সম্পৃক্ত চর্বি ধমনির রক্ত জমাট বেঁধে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না বলে দাবি করেছেন তিন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তাদের এ দাবি ব্যাপক হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই তিন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ লিখেছেন, হৃদরোগ থেকে বাঁচতে ‘কম চর্বিযুক্ত’ বা ‘অল্প কোলেস্টেরল’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের কথা বলা হয়, যা ভ্রান্তিমূলক। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। তারা বলেন, হৃদরোগ, সিএইচডি মৃত্যুহার, এক ধরনের স্ট্রোক ও টাইপ-টু ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পৃক্ত চর্বি গ্রহণের কোন সম্পর্ক নেই। এর পরিবর্তে তারা বলেন, মেডিটেরানিয়ান খাদ্যাভ্যাস এবং প্রতিদিন ২২ মিনিট হাঁটা হৃদরোগ প্রতিরোগে সবচেয়ে ভাল উপায়। জার্নাল বিএমজের সম্পাদক ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্যাসকল মেইয়ার, মার্কিন জার্নাল জেএএমএ ইন্টারনাল মেডিসিনের সম্পাদক রিটা রেডবার্গ এবং স্টিভেনেজের এনএইচএসের লিস্টার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অসীম মালহোত্রা এই প্রবন্ধটি লেখেন। তাদের এই লেখার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা। তারা সমালোচনা করে বলেন, তাদের এই মতামতের নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। তাদের এই ধারণা ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করবে। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হবে যে, হৃদরোগ প্রতিরোধে কোন খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং কোনটা খাওয়া যাবে না। তারা বলেন, হার্ট এ্যাটাকের জন্য সম্পৃক্ত চর্বিসহ স্বল্প মাত্রার চর্বিতে কোন উপকারিতা নেই। তারা আরও বলেন, যারা হৃৎপি-ের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাদের স্বল্প চর্বি খাদ্যাভ্যাসের চেয়ে অফুরন্ত শক্তি সম্পন্ন মেডিটেরানিয়ান খাদ্যাভ্যাস (৪১%) অনুসরণ করা উচিত। এতে থাকবে চার টেবিল চামচ অলিভ অয়েল অথবা এক মুঠো বাদাম। কিন্তু সমালোচকরা তাদের এই যুক্তি মানতে নারাজ। তারা বলেন, এটা প্রচলিত তত্ত্বের বিরোধী এবং ব্যাপক জটিল একটা বিষয়কে সহজীকরণের চেষ্টামাত্র। ইউজিএলের অনারারি কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট এবং ক্লিনিক্যাল ডাটা সায়েন্সের সিনিয়র লেকচারার ডাঃ অমিতাভ ব্যানার্জি বলেন, লেখকরা অতি সহজ এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তারা পদ্ধতিগত কোকরেন রিভিউ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই রিভিউয়ে র‌্যান্ডম পদ্ধতিতে ১৫ জনের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, খাদ্য তালিকা থেকে সম্পৃক্ত চর্বি বাদ দেয়ায় সিএইচডিসহ হৃদরোগজনিত সম্যা ১৭ শতাংশ কমেছে। এসেক্স ইউনিভার্সিটির গবেষণা বিষয়ক পরিচালক ডাঃ গ্যাভিন স্যান্ডারকক ওই তিন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, এটা সত্য নয় এবং প্রচলিত কোন সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এটা বলা হয়নি। স্যান্ডারকক আরও বলেন, হৃদরোগের সঙ্গে চর্বি ও কোলেস্টেরলের জটিল সম্পর্ক নিয়ে আমাদের অবশ্যই গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু প্রচলিত ধারণার পরিবর্তে কোন মিথ্যকে গ্রহণ করা আমাদের উচিত নয়। রিডিং ইউনিভার্সিটির মানবপুষ্টি বিষয়ক অধ্যাপক ক্রিস্টি উইলিয়ামস বলেন, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের খাদ্যাভ্যাস বিষয়ক পরামর্শ বাস্তবতার নিরিখে নয়, বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে তাদের ‘বাদাম এবং অলিভ অয়েল’ খাওয়ার উপদেশ দেয়া হতে পারে। এর ফলে সাধারণ মানুষের কি উপকার হবে বা এটা সফল হবে কি না সে বিষয়ে কোন চিন্তা না করেই এটা করা হয়। এদিকে কিছু বিশেষজ্ঞ ওই তিন লেখককে সমর্থন করেছেন। আলস্টার ইউনিভার্সিটির স্কুল অব হেলথ স্কুলের প্রধান ডাঃ মেরি ফ্লেচার মতামত ব্যক্ত করে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমি সবচেয়ে ভাল খাদ্যাভ্যাস এবং অনুশীলনের কথা পড়েছি। প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ এবং ২২ মিনিট হাঁটা। এটা জনস্বাস্থ্য বিষয়ে দারুণ এক বার্তা। তিনি বলেন, আধুনিক যুগে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হিসেবে আমরা স্বল্পমাত্রার চর্বি এবং স্বল্প শর্করা সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করি। এটা স্বাস্থ্যসম্মত ধারণা নয়। এসব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সুতরাং নিজেকে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর রাখতে প্রাকৃতিক খাবার ও প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে। আর এটা খুবই সাধারণ এক বার্তা। ব্রিটিশ ডায়েটিক এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য গেইনর বাসেলও ওই তিনজনকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শর্করা থাকা উচিত। প্রতিটি মানুষকে প্রতিদিন প্রচুর আঁশ সমৃদ্ধ খাবারও খাওয়া উচিত। উইলিয়ামস এই নিবন্ধ প্রকাশের জন্য বিজেএসএমকে অভিযুক্তও করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, এতে হৃদরোগের জন্য সম্পৃক্ত চর্বিকে নির্দোষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
×