ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরায় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত সেই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

সাতক্ষীরায় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত সেই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরায় দারোগা ও সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতনের শিকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ, মারপিটের ঘটনায় বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলের কার্যালয়ে সাক্ষী দিতে গিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই রমজান ও প্রতিপক্ষ মুন্নাদের হুমকি- ধমকির মুখে অসুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের রসুলপুরের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদকে নির্যাতনের ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানার আলোচিত এসআই রমজান আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর আগে দারোগার বিরুদ্ধে সহকারী পুলিশ সুপারের তদন্তের আগেই রমজান নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে দরখাস্ত পাঠান। প্রেসক্লাবেও এই দরখাস্তের কপি দেয়া হয়। দারোগার পক্ষ থেকে দেয়া দরখাস্তে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদকে কথিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা রশিদকে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার কুশখালিতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। অভিযোগ, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ৮ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মোল্যা (৭৫) ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে মারপিট করে সদর থানার এসআই রমজান ও সদর উপজেলার কুশখালি গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে মুন্না এবং তার সহযোগী মিলনসহ অন্যরা। সন্ত্রাসীদের পক্ষে যেয়ে গভীররাতে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা ও মারপিটের ঘটনায় সদর থানার এসআই রমজানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় অভিযোগ অনুসন্ধানে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মেরিনা আক্তার ২৬ এপ্রিল সকাল ১০ টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলের কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য নোটিস প্রদান করেন। নোটিস পেয়ে বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মোল্যা ভ্যানে চড়ে বুধবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের কার্যালয়ে হাজির হন। এ সময় সেখানে উপস্থিত এসআই রমজান ও প্রতিপক্ষ মুন্না অফিসারের কাছে সত্য না বলার জন্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মোল্যাকে হুমকি- ধমকি দেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভ্যানে করে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মোল্যাকে তার কার্যালয়ে আনা হয়েছে জানতে পেরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা সদর সার্কেল মেরিনা আক্তার সাক্ষ্য না নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রসুলপুরের নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মারা যান। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মরহুমের নিজ গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালিতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা সদর সার্কেল মেরিনা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মারপিটের ঘটনায় অভিযোগ অনুসন্ধানে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আব্দুর রশিদ মোল্যাসহ অন্যদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় ভ্যানে চড়ে বুধবার তার কার্যালয়ের সামনে আসার পর জানতে পেরে তিনি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ মোল্যাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। পরে দরকার হলে তিনি নিজে ওনার বাড়িতে গিয়ে ঘটনা শুনে বুঝে আসবেন বলে উনার নিকট আত্মীয়দের জানিয়েছিলেন বলে জানান। । গতকাল সকালে ওনার ছেলে ফোন করে জানান যে, ভোর রাতে তার বাবা মারা গেছেন। উল্লেখ্য, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হওয়ার পর সম্প্রতি আব্দুর রশিদ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন। এরপর বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি মারা যান।
×