ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হেফাজতীকরণও পর্যালোচনা হবে

মাধ্যমিকের ১২টি পাঠ্যবই পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

মাধ্যমিকের ১২টি পাঠ্যবই পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এসএসসি পর্যায়ের ১২টি পাঠ্যবই পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে যেসব পাঠ্যবইয়ে ‘হেফাজতীকরণ’ বা ‘সাম্প্রদায়িক রূপ’ দেয়া হয়েছে, সেগুলোও পর্যালোচনা করা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যবইকে পরিমার্জন ও পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করা হবে ২০১৮ সালেই। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যুগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এসএসসি পর্যায়ের ১২টি বই পর্যালোচনা করে সহজ, সাবলীল করার কাজ চলছে। প্রয়োজনে ছোট করা হবে। বইগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজী, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বাংলাদেশ ও বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস, গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও হিসাব বিজ্ঞান। একেকজন শিক্ষাবিদের তত্ত্বাবধানে এসব বই পরিমার্জনের কাজ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নের সময় মডেল উত্তরপত্র দেয়া হবে পরীক্ষকদের। ১২টি বই আরও উন্নত, মার্জিত ও সহজবোধ্য করে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। বলেন, আমাদের পাঠ্যবই নিয়ে আরেকটা বড় অভিযোগ- এটার মান সম্পর্কে ও বোঝার সম্পর্কে। সেখানেই ১২টি বই চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া কারিকুলাম, পরীক্ষা পদ্ধতি, ফলপ্রণয়ন পদ্ধতিসহ অন্যান্য দিক পর্যালোচনা চলছে। আমাদের মূল লক্ষ্য- শিক্ষা ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। সে লক্ষ্যে শিক্ষাবিদ ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি শিক্ষার মানোন্নয়ন, সংস্কার, সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমাধানের পরামর্শ দিচ্ছে। বেলা ১১টায় শুরু হয়ে এ বৈঠক দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাস উদ্দিন আহম্মেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ, শহীদ জায়া শ্যামলি নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপক মনজুর আহমেদ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম অংশ নেন। এছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। একটি সংগঠনের দাবির মুখে এবার পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিমার্জনের ক্ষেত্রে এটা বিবেচনায় নেয়া হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, হেফাজতীকরণের বিষয়ে জানতে চাইছেন তাই তো? আমি পরিষ্কার করে বলি, আমাদের বাংলা সাহিত্যের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীকে। আমরা আশা করতে পারি যে ঘটনাটা ঘটেছে শ্যামলী নাসরিন সেখান থেকে আমাদের উদ্ধার করবেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল্যবোধ আছে সেগুলোকে রক্ষা করে তিনি বইটা পরিমার্জন করবেন। উনি একজন শহীদ জায়া। অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, আমি অর্থনীতি বইটির দায়িত্বে আছি। সেখানে আমি বড় ধরনের কোন সমস্যা পাইনি। তবে কোন ভুল থাকলে সংশোধন করা হবে। জটিলতা থাকলে সহজ করা হবে। সংবিধানের বিরুদ্ধে কিছু থাকলে বাদ যাবে। অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, পাঠ্যবইয়ে রাতারাতি বা বৈপ্লবিক কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। সংস্কার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যুগের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে তা করা হয়। বইয়ের বোঝা কমানোর কাজ চলছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পঞ্চম শ্রেণীতে ৫/৬টি বই থাকলেও ষষ্ঠ শ্রেণীতে তা ১৩টি হয়ে যায়। এটা আমরা চাইলেই কালকের মধ্যে বাদ দিতে পারব না। আলাদা একটি কমিটি এর ওপর কাজ করছে। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় সময় কমিয়ে আনার কাজ চলছে বলেও জানান মন্ত্রী। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু অসৎ শিক্ষকের কারণে প্রশ্নপত্র বিতরণ প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। এটি করে শিক্ষকরা ছেলেমেয়েদের চরিত্র নষ্ট করে দিচ্ছেন। আর যেসব শিক্ষক ক্লাসরুমে উত্তরপত্র বলে দিচ্ছে- এ ধরনের শিক্ষক আমরা রাখব না। শিক্ষা আইন করা হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোন গাইড বই চলবে না, কোচিং বাণিজ্যও চলবে না। উত্তরপত্র মূল্যায়নের নতুন ব্যবস্থা এবার এসএসসি পরীক্ষা থেকে অনুসরণ করা হচ্ছে জানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, একই খাতা ২০ জন শিক্ষক দেখেছেন। এরপর দেখা হয়েছে এর মধ্যে পার্থক্য কি আছে। তারপর এর ভিত্তিতে একটি মার্কিং স্কিম তৈরি করা হয়েছে। মডেল উত্তরও শিক্ষকরা আলাপ-আলোচনা করে তৈরি করে দিয়েছেন।
×