ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দাম বাড়ালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা- বাংলাদেশ ব্যাংক

ডলারের দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

ডলারের দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি ॥ তোফায়েল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ডলারের দাম বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে কারা এর পেছনে আছে তা স্পষ্ট করেননি তিনি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এদিকে ডলারের দাম বাড়ালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া হাওড় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ব্যাংকগুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচী বা সিএসআর প্রদানের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত সরকারী-বেসরকারী সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের ব্যাংকার্স সভায় এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মে মাসে রোজা শুরু হয়ে যাবে। আমার মনে হয় এটা (ডলারের দাম বৃদ্ধি) একটা কারসাজি। হঠাৎ ডলারের মূল্য...। এই বছরের শুরু থেকে ডলারের দাম বাড়ছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে তা তিন থেকে চার টাকা বেড়ে ৮৪ টাকা ছাড়িয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার এপ্রিলে ডলারের দর প্রায় ২ শতাংশ বেশি। ডলারের দামের এই বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আমদানি বেড়ে যাওয়াকে দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রমজানের আগে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে খেজুর, তেল, ডালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ডলারের দর কমাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আশা প্রকাশ করেছেন, দর আবার ৮০ টাকার নিচে নামবে। ডলারের দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করেছি। যে কারণে বেড়েছে, সেটাকে সমাধান করার পদক্ষেপ নিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের সঙ্গে গত দুই দিনে দুইবার কথা বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তিনি (গবর্নর) পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই মধ্যে দাম ৮৪ টাকা থেকে কমে ৮২ টাকা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোকে ডলার দিচ্ছে, যার কারণে কমে যাচ্ছে। আশা করি, আরও কমবে। রিজার্ভ আমাদের ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেখানে আমরা যদি ২০০ মিলিয়ন ডলার বা ৪০০-৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যাংকে দিয়ে দেই, তাতে আমাদের কোন ক্ষতি নেই। রোজায় ভোজ্যতেলসহ আমদানি করা পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে ডলারের দাম কমানোর পক্ষপাতি বাণিজ্যমন্ত্রী। রোজায় পণ্য মূল্য যেন স্বাভাবিক থাকে, সে জন্য ৩০ এপ্রিল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। আগের রোজার মাসগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যেমন ছিল, এবারও তেমন থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তোফায়েল। এদিন ব্যাংকার্স সভায় গবর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোঃ রাজী হাসান, এস কে সুর চৌধুরী, এস এম মনিরুজ্জামান, এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস এ খান ও সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে ডলারের দাম কমানো ও হাওড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সিএসআর প্রদানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকের অস্বাভাবিক হারে ঋণ বিতরণ বেড়ে গেছে। ঋণের মান যাচাইয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া খেলাপী ঋণ কমাতে বলা হয়েছে। ঋণ আদায় না করে শুধু পুনঃতফসিল করা যাবে না। এবিবির চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, ডলারের দাম কমাতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে আন্তঃব্যাংক ডলারের গড় দরের সঙ্গে আমদানিতে ২ টাকার বেশি নিতে বারণ করা হয়েছে। ডলারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী রবিবার আরও একটি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া সিআইবিসহ সার্বিকভাবে ব্যাংকিংয়ের রীতিনীতি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ডলারের দাম কমানো ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সিএসআর দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে জোর দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বাড়ায় কিছুদিন ধরে টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলারের দাম। তবে কয়েক দিনে হঠাৎ করে প্রতি ডলারে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে কোন ব্যাংক কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আন্তঃব্যাংক ডলারের গড় দরের সঙ্গে আমদানিতে ২ টাকার বেশি না নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমদানির তুলনায় রফতানিতে কম প্রবৃদ্ধি ও রেমিটেন্সে নেতিবাচক প্রবাহের কারণে কিছুদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম সামান্য বাড়ছে। তবে রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের আমদানি দায় পরিশোধের চাপ বাড়ায় সম্প্রতি হঠাৎ করে বেড়ে ডলারের দাম উঠেছে ৮৫ টাকায়।
×