ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মজিবর রহমান

প্রতিষ্ঠার আট বছরেই ঈর্ষণীয় সাফল্য

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

প্রতিষ্ঠার আট বছরেই ঈর্ষণীয় সাফল্য

সাফল্য সবসময়ই আনন্দের। শিক্ষা, খেলাধুলা, ব্যবসা, চাকরি, সমাজসেবা-জীবনের সর্বক্ষেত্রে। তবে প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য বিষয় ক্রীড়া। এক্ষেত্রে অর্জনটা যদি আসে বিদেশের মাটিতে, বড় কোন আসরে, সেই সাফল্যের তৃপ্তি অনেক মধুর। সেটা আরও মর্যাদার হয়ে ওঠে যখন তা মুখ উজ্জ্বল করে দেশ ও জাতির। বহমান ঋতু বৈচিত্র্যে চিরন্তন ধারায় প্রকৃতির ডাকে বর্ষার আগমনী বার্তা। কিন্তু প্রকৃতির এই রূপ পরিবর্তনের মাঝে উষ্ণতা, উত্তাপ যেন একটুও বদলায়নি। সবই আছে সেই আগের মতোই। বিষয়টা লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ঘিরে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে নতুন আদলে গড়া ক্লাবটি পা দিয়েছে আট বছরে। ২০১০ সালের আজকের এই দিনে স্বানমখ্যাত ক্রীড়া সংগঠক মনজুর কাদেরের হাত ধরে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাব নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৪ সালে ভুটান কিংস কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন মানে বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে গৌরব গাঁথা বাস্তব এক অনুভূতি। তার আগে ২০১১ সালে নেপালের সাফাল পোখরা গোল্ডকাপ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। অতীতে বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক আসরে ট্রফি জয়ের রেকর্ড যে কোন ক্লাবের নেই তা নয়। দেশের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান শিরোপা জয় করেছিল ভারতের ডুরান্ড কাপে। তবে পরিসংখ্যানে ওপরে রাখতে হচ্ছে শেখ জামাল ধানমন্ডিকেই। কারণ কিংস কাপের আগে পোখরা বিজয়ের গৌরবময় সাফলের পাশাপাশি ভারতের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আইএফএ শীল্ডে রানার্সআপ (২০১৪) দলটিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। যেখানে যুক্ত রয়েছে আরেকটি অর্জন, ২০১৫ সালে আরও বড় মাপের আসর এএফসি কাপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশের ক্লাব পর্যায়ে যুগ-যুগান্তরের সেরা সাফল্য বলা যায়। এত অল্প সময়ে শেখ জামালের এই সাফল্য শুধু দলটির জন্যই গৌরবের নয়, জাতির জন্যও বিরাট গর্বের। এই সাফল্যে মুখরিত হয়েছিলেন এদেশের লাখো কোটি ফুটবল অনুরাগী। আর ঘরোয়া ফুটবলের ঈর্ষণীয় ইতিহাস, শিরোপার পর শিরোপা জয় ক্লাবটিকে অতি অল্প সময়ে পরিণত করে পরাশক্তিতে। খেলোয়াড়রা মাঠে খেলেন প্রশিক্ষকের দিক নির্দেশনায়। লক্ষ্য পূরণে নিঃসন্দেহে তাদের ভূমিকা, কৃতিত্ব অপরিসিম। কিন্তু সব সাফল্যের পেছনেই একজন নেপথ্য বা বড় কারিগর থাকেন। যার হাতের সুনিপুণ ছোঁয়ায় বদলে যায় সবকিছু। সাদামাটা পরিবেশটা হয়ে ওঠে ছিমছাম পরিপাটি, এক গোছালো সংসারে। পর্দার অন্তরালে থাকা সাফল্যের এই মহানায়ক আর কেউ নন মনজুর কাদের। যাকে দেশ বরেণ্য ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য সমালোচকরাও। কথার ফুলজুরি ছুটিয়ে নয়। কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন তার মতো নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়া সংগঠক এদেশে হাতে গোনা। সদালাপী কাদের গাঁটের অঢেল অর্থ খরচ করে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দেশের খেলাধুলায়। উদারমনা এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব যেখানেই হাত দেন সেখান থেকেই মুক্তা কুড়িয়ে আনেন। দেশের ঐতিহ্যবাহী আবাহনীর সফল ম্যানেজার হিসেবেও তার রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। চার বছরের দায়িত্বে আবাহনী হ্যাটট্রিক শিরোপা লাভ করে ঘরোয়া ফুটবলে। আর একবার রানার্সআপ। তবে মনজুর কাদের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছিলেন নব্বইয়ের দশকে সাদামাটা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে রাতারাতি ‘ড্রিম টিমে’ পরিণত করে। তৎকালীন মোহামেডান, আবাহনী ও ব্রাদার্সের একচ্ছত্র অধিপত্যে খর্ব করে তিন ক্লাবের সেরা, তথা তারকা ফুটবলারদের দলে ভিড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে পরিণত করেন ‘জায়ান্ট টিম’ হিসেবে। মুক্তিযোদ্ধা কেসি যেন ময়দানী যুদ্ধে আরেকটি ঢাকার ফুটবলের ‘ফ্রন্ট’ তৈরি করে খবরের শিরোনাম হয়ে ওঠে। পরবর্তী মিশন নতুন আদলে তৈরি করা লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব সভাপতি মনজুর কাদেরের আরেক চমক। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। সেটাও নজর কাড়া সাফল্য দিয়েই। জেলা ফুটবল লীগ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতায় জেলা লীগ আলোর মুখ না দেখায় পদত্যাগ করেন তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের এই সাবকমিটি থেকে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সন্মানিত পরিচালক হিসেবে এখনও নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সন্তান শহীদ শেখ জামালের নাম যুক্ত করে লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড ( অতীত নাম ধানমন্ডি ক্লাব) নতুন রূপে আবির্ভাব হওয়ার পর ফুটবলে একটি ঝড় তোলা নামে পরিণত হয়। দেশের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নামে দলটি। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবই সবচেয়ে উন্নতমানের, মেধাবী বিদেশী ফুটবলার ও কোচ দলে যুক্ত করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। প্রায় কোটি টাকা পারিশ্রমিকে এই ক্লাবে খেলেছেন হাইতি জাতীয় দলের ফুটবলার সনি নর্দে। শেখ জামাল ধানমিন্ড বর্তমানে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ক্লাব। জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে সুসজ্জিত, চোখে পড়ার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে মনজুর কাদের বলেন, একটি আধুনিক ক্লাবের যা কিছু দরকার সবই আছে বর্তমানে এখানে। যদিও পরিবেশবাদীদের মামলা-মোকদ্দমার কারণে ঝুলে গেছে ক্লাবটির আধুনিকায়নেরও বেশ কিছু কাজ। মনজুর কাদের বলেন, আমি মনে করি সাফল্যের জন্য কেবল ভালমানের কোচ-খেলোয়াড়ই যথেষ্ট নয়। ক্লাবের পরিবেশ একটি মুখ্য বিষয়। ফলে ভালমানের দল গড়ার পাশাপাশি পরিবেশের দিকেও নজর দিতে হয়েছে। ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে মদখোর, জুয়াড়ী, হেরোইনসেবী, ভাসমান পতিতা উচ্ছেদ করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের সবচেয়ে চমৎকার প্রশিক্ষণ মাঠ। ঢাকায় খেলতে আসা অনেক বিদেশেী দল এখানে অনুশীলন করে ভূয়সী প্রশংসা করে ক্লাবের পরিবেশ ও মাঠের। এটা দেশের জন্যও সন্মানের। লে. শেখ জামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সে আরও রয়েছে বাস্কেটবল, টেনিস কোর্ট, ক্রিকেট বে। পাশাপাশি একটি সুইমিংপুল নির্মাণের পরিকল্পনাও। শুধু পুরুষ নয়। মহিলা ফুটবলেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব অক্ষুণœœ রেখেছে সুনাম। ক্রিকেটও নামের সুবিচার করে খেলার চেষ্টা করে আসছে দলটি। নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য সামাল দিয়ে সূচারুভাবে ক্লাব পরিচালনা অনেক কষ্টের। তবু আমি সেটা করেছি সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন। কারণ একটাই খেলাধুলার সঙ্গে আমার রয়েছে আত্মার সম্পর্ক। মনের টান না থাকলে এটা সম্ভব হত না। উল্লেখ্য, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতির পদে তিনি বর্তমানে নেই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ক্লাবের অস্টম বার্ষিক সাধারণ সভায় তাকে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ মৌসুমে দলটির স্বর্ণালী সাফল্যের সঙ্গী। ভুটানের কিংস কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন, পেশাদার ফুটবল লীগে চ্যাম্পিয়ন, ফেডারেশন কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন এবং কলকাতার আইএফএ শিল্ডে রানার্সআপ।
×