ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভার্চুয়াল জগতে জাদুঘর

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

ভার্চুয়াল জগতে জাদুঘর

দেশে যে একটি জাতীয় জাদুঘর আছে মুষ্টিমেয় কিছু আগ্রহী ব্যক্তি বাদে অনেকের এতদিন পর্যন্ত তা প্রায় অজ্ঞাতই ছিল। সে তুলনায় রাজশাহীর বরেন্দ্র মিউজিয়াম তুলনামূলকভাবে সমধিক পরিচিত। এর নানাবিধ সংগ্রহও অতি সুপ্রাচীন, সুসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় সর্বোপরি দেশ-বিদেশের গবেষকদের বিপুল আগ্রহ ও কৌতূহলের বিষয়। যে কোন কারণেই হোক না কেন, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ ও কৌতূহল অনেক কম। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়। কেননা, জাদুঘর একই সঙ্গে একটি দেশ, জাতি, সমাজ ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক দর্পণবিশেষ। যে কোন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাকীর্তি, প্রতœসম্পদ, সাংস্কৃতিক আচার-আচরণ, আহার-বিহার, পোশাক পরিচ্ছদসহ জীবন-যাপনের বিবর্তন জাদুঘর পরিদর্শনে খুব সহজেই সম্যক উপলব্ধি করা যায়। ঢাকা জাতীয় জাদুঘর অচিরেই সেই ব্যাপক পরিচিতি অর্জনে আরও সক্ষম ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। সম্প্রতি জাতীয় জাদুঘর আরও একটি কারণে দেশে-বিদেশে উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে। আর তা হলো, এর ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির জগতে অনুপ্রবেশ তথা ভার্চুয়াল গ্যালারির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় সার্ভিস ইনোভেশনের অর্থায়নে মঙ্গলবার থেকে যাত্রা শুরু করেছে জাদুঘরের অনলাইনভিত্তিক ভার্চুয়াল গ্যালারি। এখন থেকে শুধু ঢাকা কিংবা দেশে বসে নয়, বরং বিশ্বের যে কোন স্থান ও প্রান্ত থেকে জাতীয় জাদুঘরের ভার্চুয়াল গ্যালারি দেখা যাবে নির্দিষ্ট ঠিকানায় লগইন করে। এরপর ভেতরে প্রবেশ করে ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে অবলোকন করা যাবে জাদুঘরের অন্তর্গত প্রতœসম্পদ ও আনুষঙ্গিক নিদর্শনসমূহ। এর জন্য শুধু প্রয়োজন হবে ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি কম্পিউটার, ল্যাপটপ এমনকি মোবাইল এ্যাপ। এর ফলে আর রাজধানীর অসহনীয় ও অব্যাহত যানজট ও ঝক্কি ঝামেলা মোকাবেলা করে জাদুঘর প্রাঙ্গণে প্রবেশের প্রয়োজন পড়বে না। বরং ঘরে বসেই ক্লিক করে দেখার সুযোগ পাবেন জাদুঘরের অমূল্যসম্পদ ও নিদর্শনগুলো। এতে করে ছাত্রছাত্রীরাও প্রভূত উপকৃত হবেন। স্কুল-কলেজে শিক্ষকরা কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুযোগ পাবেন। বিনোদনমূলক ও সহজলভ্য বিষয় ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ভার্চুয়াল গ্যালারি’ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস, প্রতœসম্পদের নিদর্শনসহ প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি অনলাইনে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে দেশী-বিদেশী জনসাধারণের কাছে। আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও এই সুযোগ কাজে লাগাতে সক্ষম হবে। সর্বোপরি জাতীয় জাদুঘরের এই নতুন সংযোজন সামাজিক টেকসই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে রাখবে অনন্য ভূমিকা, যার গুরুত্ব অপরিসীম। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকারপ্রধান যখন প্রথমবারের মতো ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলেন, তখন এ নিয়ে নানা মহলে রঙ্গ-রসিকতা শুরু হয়েছিল। অথচ বর্তমানে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ জীবনের বাস্তবতা শুধু রাজধানী কিংবা বড় বড় শহর-বন্দর নয়; বরং গ্রামগঞ্জসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বর্তমানে পৌঁছে গেছে কম্পিউটার তথা তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা। প্রাথমিক শিক্ষাসহ স্কুল-কলেজগুলো হয়েছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়াসমৃদ্ধ। এমনকি গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষও আজকাল খুব সহজে ঘরে বসে স্কাইপ-ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারছে বহির্বিশ্বের সঙ্গে। অর্থ ও তথ্য আদান-প্রদানসহ লেনদেন, ব্যাংকিং, বিল জমা নেয়া, স্বাস্থ্য-চিকিৎসাসহ আবহাওয়া-কৃষি বিষয়ক তথ্যাদি বিনিময়Ñ সবই সম্ভব হচ্ছে। জাতীয় জাদুঘরের ভার্চুয়াল গ্যালারি সংযোজন এতে যোগ করল শিক্ষা ও বিনোদনের বাড়তি মাত্রা। তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। একে প্রতিনিয়ত আপডেট তথা তথ্য ও নিদর্শনসমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। বিদেশী দর্শক ও গবেষকদের আকৃষ্ট করতে হবে যাতে তারা বাংলাদেশ ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
×