ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নওগাঁ ২০ বিঘা জমিতে ধানের বদলে চিটা

প্রকাশিত: ০২:০২, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

নওগাঁ  ২০ বিঘা জমিতে ধানের বদলে চিটা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর আত্রাই উপজেলার দর্শন গ্রামের কৃষক প্রিন্স মাহমুদ বাজারের এক বিক্রেতার কাছ থেকে বোরো ধানের বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন। তিন মাস আগে ওই বীজ তিনি ১২বিঘা জমিতে রোপন করেছিলেন। সঠিকভাবে পরিচর্যাও করেছেন তিনি। সময় মতো ধান গাছগুলোর শীষও বের হয়েছিল। কিন্তু শীষের ধানগুলোর দানা শক্ত না হয়ে আস্তে আস্তে বেশির ভাগ ধানই চিটা হয়ে যায়। এতে ওই এলাকার কৃষকরা ধানের বদলে চিটা হওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। তারা প্রতারক কোম্পানি ও ডিলারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবীর পাশাপাশি সরকারের কাছে এর ক্ষতিপূরন দাবী করেছেন। কৃষক প্রিন্স মাহমুদ অভিযোগ করেন, তিনি নাটোরের সিংড়া সদর বাজার থেকে মেসার্স আল-আমিন নামে একটি দোকান থেকে জিরা ধানের বীজ চেয়েছিলেন। তাঁকে তখন অধিক উৎপাদনের কথা বলে গাজীপুর সিড লিমিটেড কোম্পানির তাজ জিরা নামের ধান বীজ দেয়া হয়। প্রতি কেজি ৩শত টাকা দরে দুই কেজি ওজনের ২৭ ব্যাগ বীজ কিনেন তিনি। কিন্তু তাকে ভেজাল বীজ দেয়া হয় বলে এখন প্রতিয়মান হয়েছে। আল-আমিন নামে এক ব্যক্তি ওই দোকানের মালিক। তিনি গাজীপুর সিড লিমিটেড কোম্পানির ডিলার বলে দাবি করেন। বর্তমানে ওই ডিলার পলাতক রয়েছেন। প্রতিদিনই ভুক্তভোগী কৃষকরা ডিলারের দোকানে গিয়ে তাকে খোঁজ করে বলে জানান স্থানীয়রা। প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ওই বীজের চারা লাগানো ১২ বিঘা জমির প্রায় ৯৫ শতাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। ১২ বিঘা জমিতে প্রায় ২৫০ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলেও এখন ২০ মণ ধানও হবে না। এতে সেচ খরচসহ তার প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি । প্রিন্স মাহমুদ একা নন। আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নের নন্দীগ্রাম ও ইসলামপুর গ্রামের আরও অন্তত ৩০ জন কৃষক তার মতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অধিক উৎপাদনের লোভে বাজারে দৃষ্টিনন্দন মোড়কে হাইব্রিড জাতের ধান বীজ কিনে তা রোপন করে এখন হা-হুতাশ করছেন ওই সমস্ত কৃষক। সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বোরো ক্ষেতের ধান দূর থেকে দেখে সব ধান পেকে গেছে মনে হলেও কাছে যেতেই দেখা যায় প্রায় সব ধানই চিটা। ধানের শীষগুলো হাতে নিয়ে দেখা যায় প্রতিটি ধান গাছের থোড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ ধানই চিটা। অথচ ওই সমস্ত ক্ষেতের পাশেই অন্য কৃষকদের ধান ভালো রয়েছে। তাদের ক্ষেতে ধানের দানা শক্ত হয়ে গেছে। ধানের ভারে শিষগুলো হেলে পড়েছে। দর্শন গ্রামের মনসুর আহমেদ, কাওছার আলী ও আব্দুর রাজ্জাকসহ ৬/৭ জন কৃষক জানান, বাজার থেকে বীজ কিনে তারা প্রতারিত হয়েছেন। জমি তৈরি, নিড়ানি ও সার-কিটনাশকসহ প্রতি বিঘা জমিতে প্র্রায় ১৭ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। এখন ক্ষেতে যে ধান হয়েছে তাতে লাভ তো দূরের কথা খরচের অর্ধেক টাকাও উঠবে না। আল আমিন ট্রেডার্সের ডিলার মোঃ আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আমার কোম্পানি ওই সব জমির ধানের নমুনা পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে গেছে। যদি বীজের কারণে এই সমস্যা হয় তাহলে কৃষকদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কাউছার হোসেন জানান, যেহেতু ডিলার আমার উপজেলার বাইরের, তাই তাকে আটক করে এই সব ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরন আদায়ের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। আর আগামীতে সরকারি কোন বরাদ্দ এলে এই সব ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকে প্রদান করে চেষ্টা করবো তাদের অপূরনীয় লোকসান কিছুটা পূরণের জন্য। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, সরেজমিনে আমরা কৃষকের জমির ধান পরিদর্শন করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করবো।
×