বি.এস.এস,বি-এড (কৃষি ডিপ্লোমা)
সিনিয়র শিক্ষক
কানকিরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, সেনবাগ, নোয়াখালী।
পরীক্ষকঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা।
মোবাইলঃ ০১৭১৮৮৬৩০৪৫
পঞ্চম অধ্যায়- কৃষিজ উৎপাদন
পাঠ ৪- মাশরুম চাষ পদ্ধতি
প্রথমে আমরা মাশরুম কী তা জানব
মাশরুম হলো এমন এক ধরনের ছত্রাক যা সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী, পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন। আসলে মাশরুম এক ধরনের মৃতজীবী ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ যা ভক্ষণযোগ্য।
আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরনের মাশরুম দেখা যায়। নিম্নে এগুলোর নাম উল্লেখ করা হলোঃ
# গ্রীষ্মকালীন মাশরুম- মিল্কি, ঋসি ও স্ট্র।
# শীতকালীন মাশরুম- শিতাকে, বাটন, শিমাজি, ইনোকি।
# বারমাসি মাশরুম- ওয়েস্টার।
শুরুতে আমরা ওয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।
ওয়েস্টার মাশরুম চাষের কতগুলো ধাপ আছে, যা নিম্নে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো-
১। মাশরুমের বীজ বা স্পন তৈরিঃ মাশরুমের বীজ ল্যাবরেটরিতে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়। চাষের জন্য মাশরুমের
প্যাকেটজাত বীজ কিনতে পাওয়া যায় যাকে বাণিজ্যিক স্পন বলে। আবার খড় দিয়ে চাষিরা নিজেরাও স্পন তৈরি করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে চাষিদেরকে বাজার থেকে মাদার স্পন সংগ্রহ করে স্পন তৈরি করে নিতে হয়।
২। চাষঘর তৈরিঃ মাশরুম চাষের ঘরটিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবেশের জন্য জানালা রাখতে হবে। ঘরটিতে আবছা আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মাশরুম আর্দ্র অবস্থা পছন্দ করে। ঘরটিতে ৭০-৮০% আপেক্ষিক আদ্রতার ব্যবস্থা করতে হবে। মাশরুম চাষ ঘরে অসংখ্য অণুজীবের শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
৩। স্পন সংগ্রহঃ চাষঘর তৈরির পর বিশ্বস্থ প্রতিষ্ঠান থেকে পলি প্যাকেটে তৈরি স্পন সংগ্রহ করতে হবে। ভালো স্পনের বৈশিষ্ট্য হলো প্যাকেটটি সুষমভাবে মাইসিলিয়াম দ্বারা পূর্ন ও সাদা হবে। স্পন সংগ্রহের পর তাড়াতাড়ি প্যাকেট কাটার ব্যবস্থা করতে হবে। কাটতে দেরি হলে বস্তা থেকে প্যাকেট বের করে আলাদা জায়গায় ঘরের ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে।
৪। প্যাকেট কর্তনঃ চাষঘরে বসানোর আগে স্পন প্যাকেট সঠিক নিয়মে কেটে চেঁছে পানিতে চুবিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। স্পন প্যাকেটের কোনাযুক্ত দুই কাঁধ বরাবর প্রতি কাঁধে ২ ইঞ্চি লম্বা এবং ১ ইঞ্চি ব্যাস করে কাটতে হবে। উভয় পার্শ্বের এ কাটা জায়গার সাদা অংশ ব্লেড দিয়ে চেঁছে ফেলতে হবে। এবার প্যাকেটটি ৫-১৫ মিনিট পানিতে উপুড় করে চুবিয়ে নিতে হবে। চুবানোর পর পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে সরাসরি চাষ ঘরের মেঝেতে অথবা তাকে সারি সাজিয়ে চাষ করতে হবে।
৫।পরিচর্যাঃ চাষঘরের মেঝে বা তাকে দুই ইঞ্চি পরপর স্পন সাজাতে হবে। স্পন প্যাকেটের চারপাশের আদ্রতা ৭০-৮০% রাখার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী গরমে ৪-৫ বার, শীতে বা বর্ষায় ২-৩ বার পানি স্প্রে করতে হবে। স্প্রেয়ারের নজল প্যাকেটের এক ফুট ওপরে রেখে স্প্রে করতে হবে।
৬। অন্যান্য পরিচর্যাঃ পরিচর্যা ঠিক মত হলে ২-৩ দিনের মধ্যে মাশরুমের অঙুর পিনের মতো বের হবে। প্রতি পার্শ্বে ৮-১২ টি বড় অঙুর রেখে ছোটগুলো কেটে ফেলতে হবে। ৫-৭ দিনের মধ্যে মাশরুম তোলার উপযোগী হবে। প্রথমবার মাশরুম তোলার পর একদিন বিশ্রাম অবস্থায় রাখতে হবে।
৭। মাশরুম সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ মাশরুম যথেষ্ট বড় হয়েছে কিন্তু শিরাগুলো ঢিলা হয়নি – এমন অবস্থায় হাত দিয়ে আলতো করে টেনে তুলতে হবে। পরে গোড়া কেটে বাছাই করে পলি ব্যাগে ভরে মুখ বন্ধ করে বাজারজাত করতে হবে। এগুলো ঠান্ডা জায়গায় ২-৩ দিন রেখে খাওয়া যায়। ফ্রিজে রাখলে ৭-৮ দিন ভালো থাকে।
