ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেপিএমের তিন শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী পিএফের টাকা পাচ্ছেন না

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

কেপিএমের তিন শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী পিএফের টাকা পাচ্ছেন না

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পর তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) জমা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। দীর্ঘ চাকরিজীবনে প্রতিমাসের বেতন থেকে কেটে রাখা শ্রমিক কর্মচারীদের এই গচ্ছিত আমানত চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ফেরত না পাওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীরা কর্তৃপক্ষের দুয়ারে ধর্না দিয়ে যাচ্ছেন নিমিয়ত। পিএফের অর্থ না পেয়ে অনেকে ইতোমধ্যে পৃথিবী থেকে বিদায়ও নিয়েছেন। অনেকে অসুস্থ হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। উল্লেখ্য, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় এই কাগজ কারখানার অবস্থান। কেপিএমের হিসাব বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কারখানা অবসরে যাওয়া শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। মিলের শ্রমিকদের কোন এলপিআরের (অবসরকালীন ছুটি) সুযোগ না থাকায় শ্রমিকরা অবসরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং কর্মচারীরা এলপিআরে যাওয়ার এক মাসের মধ্যে তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ফেরত পাওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক কর্মচারীরা অবসরে গিয়ে মাসের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুয়িটিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না। অপরদিকে কর্মচারী কর্মকর্তাদের এলপিআর সময় পেরুনোর পর তাদের পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও তা পরিশোধ করা হচ্ছে না। অপরদিকে মিলের আর্থিক সংকটের কারণে মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা তিন মাস ধরে নিয়মিত বেতন ভাতাও পাচ্ছেন না। মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের সূত্রে জানানো হয়, অবসরে যাওয়ার পর অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য আন্দোলনও করেছেন তারা। গেল রমজান ও কোরবানির ঈদের সময় আন্দোলনের পর এক লাখ টাকা হারে কিছু শ্রমিক কর্মচারীকে পরিশোধ করা হয়। এরপর থেকে আর কোন টাকা দেয়া হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মূলত ২০১৩ সাল থেকে সরকারী মালিকানাধীন কাগজ কলটির অবসরে যাওয়া শ্রমিক-কর্মচারীরা এই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। কেপিএমের কাছে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুয়িটি বাবদ মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কবে নাগাদ শ্রমিক-কর্মচারীরা এই টাকা ফেরত পাবেন সে বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট আশ্বাসও দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বরং আর্থিক সংকটের অজুহাত দিয়ে দিনের পর দিন অবসরে যাওয়া এসব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের মানসিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। কেপিএম সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজকলটি দীর্ঘদিন ধরেই লোকসানে আছে। কাঁচামাল সংকট, নানা অব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক দুরাবস্থার কারণে উৎপাদনক্ষমতার ২০ শতাংশও ব্যবহার করতে পারছে না কারখানাটি। কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১১০ মেট্রিকটন হলেও এই কারখানা এখন দৈনিক কাগজ উৎপাদন হয় ১০ থেকে ২০ মেট্রিক টন। এর ফলে কারখানাটি প্রতিমাসে লোকসান দিচ্ছে। লোকসান সামাল দিতে এই কারখানার প্রায় ৬ শতাধিক শ্রমিক কর্মচারীকে বিসিআইসিয়ের বিভিন্ন কারখানায় গণবদলি করেছে। এই সংকটের কারণে বিভিন্ন সময় অবসরে যাওয়া মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের অবসরকালীন পাওনা পরিশোধ এবং কর্মরত শ্রমিকদের নিয়মিত মাসিক বেতন পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কর্মরত শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ এবং মিলের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে কাঁচামাল ক্রয় করতে গিয়ে শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ অন্যান্য ফান্ডের জমা টাকা খরচ করে ফেলেছে মিল কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় কারখানার অবসরে যাওয়া ৩ শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তা তাদের অবসরকালীন প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুয়িটির প্রায় ২০ কোটি টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এদিকে অর্থ সংকটের কারণে মিলের বর্তমান শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তারা প্রতিমাসের নিয়মিত বেতন ভাতাও পাচ্ছেন না। গত মার্চ মাস পর্যন্ত শ্রমিক কর্মচারীদের প্রায় তিন মাসের বেতন ভাতা বকেয়া রয়েছে। অপরদিকে অভিযোগ রয়েছে মিলের অর্থ সংকট কাটাতে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মচারীকে বিভিন্ন কারখানায় বদলি করা হলেও অনেক কর্মচারী বদলিকৃত স্থানে যোগদান না করেই কেপিএম থেকে কাজ না করেই বেতন নিচ্ছেন। পক্ষান্তরে অনেকে বদলির জন্য আবেদন করলেও তাদের বদলি করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল কাদের জানান, অর্থ সংকটের কারণে অবসরে যাওয়া শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিসিআইসি সদর দফতরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে এই সংকটের সুরাহা করতে দিক নির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেছেন।
×