ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লিগ্যাল এইড কমিটির সভায় বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম

মুক্তিপ্রাপ্ত কারাবন্দীদের পুনর্বাসনে ভূমিকা রাখতে পারে এনজিওরা

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

মুক্তিপ্রাপ্ত কারাবন্দীদের পুনর্বাসনে ভূমিকা রাখতে পারে এনজিওরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, কারাগারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষপাতি আমি নই। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেলে কারাগারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করার কোন দরকার নেই। তিনি বলেন, বিনা বিচারে যারা দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দী রয়েছেন তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে ‘সুপ্রীমকোর্টে আইন সহায়তা কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় কাজী রিয়াজুল হক এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। তিনি বলেন, বিনা বিচারে যারা দীর্ঘদিন কারাবন্দী থাকেন মুক্তি পাওয়ার পর তাদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসনে এনজিওগুলোর ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। এনজিওগুলোর সঙ্গে লিগ্যাল এইড কমিটির অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আইন সহায়তা কার্যক্রমকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। এটা করা গেলেই অসচ্ছল ও দুস্থ বিচারপ্রার্থীদের আরও কার্যকর আইনী সহায়তা সেবা দেয়া সম্ভব হবে। সুপ্রীমকোর্টের কনফারেন্স লাউঞ্জে বুধবার সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি এ সভার আয়োজন করে। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, সুপ্রীমকোর্টের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। প্রতিদিনই লিগ্যাল এইড অফিসে ২০/২৫ জন অসচ্ছল ও দুস্থ বিচারপ্রার্থীরা ভিড় করেন। আমরা তাদের বক্তব্য শুনে প্রয়োজনীয় আইনী সহায়তা সেবা দেয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, আমাদের চিঠির প্রেক্ষিতে কারাকর্তৃপক্ষ বিনা বিচারে কারাগারে আটক ৪৬২ বন্দীর তথ্য পাঠায় লিগ্যাল এইড অফিসে। সেখান থেকে যাচাই করে ৫৮ জনকে পাওয়া যায় যারা দশ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাকিদের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, দ-প্রাপ্ত অনেক সময় যথাযথভাবে জেল আপীল দাখিল করেন না। ফলে ওই ত্রুটিপূর্ণ জেল আপীল নিষ্পত্তি না হয়ে পড়ে থাকে। এছাড়া বিশেষ আইনের মামলায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপীল দাখিল করতে হয়। অনেকেই এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপীল না করায় তা খারিজ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে এনজিওগুলোর যে প্যারা লিগ্যাল টিম রয়েছে তাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, আমাদের নিজস্ব জনবল নেই। দুটি এনজিওর সহায়তায় এই কমিটি তাদের অফিস পরিচালনা করছে। আমাদের কাজের পরিধি জনগণকে জানানোর জন্য এনজিওগুলো ভূমিকা রাখতে পারেন। কেননা এনজিওগুলো তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে থাকে। তিনি বলেন, সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রম নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। সেই স্থানটিকে ধরে রাখতে চাই। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আইন সহায়তা সেবা প্রাপ্তি নাগরিকের অধিকার। এটা সরকারের বদান্যতা নয়। একটি গণতান্ত্রিক সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ যে তার নাগরিকদের সমস্ত অধিকারগুলো দেবে, আর এটাই মানবাধিকার। তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলখানা পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পেলাম সেখানে বন্দী ধারণ ক্ষমতা ৫৩০। কিন্তু রাখা হয়েছে ১৮শ’ জনকে। এদের মধ্যে ৩০০ বন্দী রয়েছেন যারা বিভিন্ন মামলায় দ-প্রাপ্ত। সেখানকার জেলা প্রশাসক ও জেল কর্তৃপক্ষ বলল আমাদের কারাগারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা দরকার। কিন্তু আমি এ ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পক্ষপাতি নই। কারন যিনি বিনা বিচরে কারাগারে আটক রয়েছেন ওই ব্যক্তি তো রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে সেখানে থাকতে চান না। তার তো স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তাকে কারাগারে রেখে তার অধিকারগুলো খর্ব করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের পয়সাও খরচ হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রতি মাসে বাধ্যতামূলকভাবে একবার কারাগার পরিদর্শন করতে হয়। জেলা জজ মাসে একবার না হলেও দুই মাস অন্তর তাকেও কারাগার পরিদর্শনে যেতে হয়। পরিদর্শনের ওই রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী এমনকি মন্ত্রিসভায় যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ করে ১০/১৫ বছর ধরে যারা বিনা বিচারে কারাগারে আটক রয়েছেন তাদের বিষয়টি কি জেলা জজ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নজরে আসেনি? বেসরকারী জেল পরিদর্শন কমিটিও রয়েছে। তাদের ভূমিকা কি? দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে একটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে হাইকোর্ট থেকে বিনা বিচারের আটকদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আদেশ দেয়া হয়েছে। এসব আদেশে মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে যে দীর্ঘদিন কাউকে বিনা বিচারে কারাগারে থাকতে হবে না। কাজী রিয়াজুল হক বলেন, একটি ডাকাতির মামলায় বাবুল নামে এক ব্যক্তি বিনা বিচারে ২৫ বছর কারাগারে আটক ছিলো। কিন্তু ওই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছর। কিন্তু তাকে ২৫ বছর জেলে থাকতে হয়েছে। পরে তিনি মামলা থেকে খালাস পান। কিন্তু এই ২৫ বছর তাকে কে ফিরিয়ে দেবে? তিনি বলেন, সামনে জাতীয় বাজেট আসছে। এনজিওগুলো থেকে বলা হচ্ছে তারা প্রজেক্ট নির্ভর কাজ করে থাকে। যখন প্রজেক্ট শেষ হয়ে যায় তখন কাজ শেষ না হলেও আর অর্থ পাওয়া যায় না। তখন সরকারের উচিত এই প্রজেক্টগুলোকে টেনে নেয়া। সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, অসচ্ছল ও দুস্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইন সহায়তা সেবা প্রদান সরকার বা এনজিওগুলো কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার যার মাধ্যমে এই আইন সহায়তা কার্যক্রমকে কার্যকরভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সালমা আলী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিফা হাফিজ, ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ, এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা ইউনিটের প্রধান সাজেদা ফারিসা কবীর, জিআইজেডের হেড অব প্রোগ্রাম প্রমিতা সেনগুপ্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন।
×