ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নব্য জেএমবির আইটি বিশেষজ্ঞ জেনি গ্রেফতার ॥ ৫ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

নব্য জেএমবির আইটি বিশেষজ্ঞ জেনি গ্রেফতার ॥ ৫ দিনের রিমান্ডে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীর উত্তরা থেকে তামিম-সারোয়ার গ্রুপের (নব্য জেএমবি) ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিশেষজ্ঞ মো. মুশফিকুর রহমান ওরফে মুশফিক মার্টিন জেনিকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বুধবার ভোরে উত্তরার নিজ বাসা থেকে জেনিকে বিপুল পরিমাণ আইইডি সামগ্রীসহ আটক করে র‌্যাব। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ছাত্রত্বের আড়ালে জঙ্গী কার্যক্রম চালানোসহ জঙ্গী সংগঠনের অন্য সদস্যদের কাছে আইইডি সরবরাহ করতো সে। ক্যান্টনমেন্টের কাছে একটি সরকারি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গী সংগঠনটির সদস্যদের। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইইডি সরবরাহ করে জেনি। জেনি যেসব আইইডি প্রস্তুত করতে সক্ষম সেসব রিমোটের মধ্যে ১০০ মিটার দূর থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব। র‌্যাব সূত্রে এ খবর জানা গেছে। র‌্যাব সূত্র জানান, জঙ্গী সংগঠন সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্যরা সরকারি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছে এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইইডি সরবরাহ করছে জেনি এমন তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজা শুরু হয় তাকে। আইটি বিশেষজ্ঞ জেনিকে বুধবার ভোরে উত্তরার নিজ বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ আইইডি সামগ্রীসহ আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রত্বের আড়ালে জঙ্গী কার্যক্রম চালিয়ে আসার কথা জানিয়েছে মো. মুশফিকুর রহমান ওরফে মুশফিক মার্টিন জেনি। জেনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়। দীর্ঘ প্রায় এক যুগেও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সেমিস্টার এখনও শেষ হয়নি তার। জেনি বুয়েটে ২০১৫ সালে গবেষণাপত্রে (থিসিস) বিদ্যুতের ‘স্মার্ট মিটার প্রজেক্ট’ নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্ধিত ফি জমা দিয়ে মুশফিকুর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষে ছাত্রত্ব ধরে রেখেছিলেন। তার সহপাঠীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বুয়েটের শিক্ষক হয়ে গেছেন। থিসিসে নিয়ম অনুযায়ী ১৬০ ক্রেডিটের মধ্যে ১০৮ ক্রেডিট সম্পন্নের পর থিসিস নেওয়া যায়। থিসিসের ১৪টি ক্লাসের মধ্যে দুটিতে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। ২০১৬ সাল থেকে অনিয়মিত হয়ে যান মুশফিকুর। বাসা-বাড়ির জন্য বিদ্যুতের মিটারের রিডিং দেখার জন্য বাইরে থেকে লোক আসতে হয়। এই মিটারকে এমনভাবে স্মার্ট মিটারে রূপান্তর করা হয়েছে যে সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিডিং চলে যাবে যাতে সেখান থেকে বিল তৈরি হয় যাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে থিসিস করেও জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায় সে। মুশফিকুর জেনি নব্য জেএমবির তামিম-সারোয়ার গ্রুপের ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোিিসভ ডিভাইস (আইইডি) বিশেষজ্ঞ। সে সংগঠনের অন্য সদস্যদের কাছে আইইডি সরবরাহসহ বড় ধরনের নাশকতার জন্য জঙ্গীদের উদ্বুদ্ধ করে আসছিল বলে জানা গেছে। র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বুধবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বুধবার ভোরে রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ আইইডি সামগ্রীসহ তামিম-সারোয়ার গ্রুপের (নব্য জেএমবি) মো. মুশফিকুর রহমান ওরফে মুশফিক মার্টিন জেনিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব। র‌্যাব কর্মকর্তা জাহাঙ্গির হোসেন মাতুব্বর জানান, গত ২০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত জেনিসহ তামিম-সারোয়ার গ্রুপের ১৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেসব জঙ্গী সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ক্যান্টনমেন্টের কাছে একটি সরকারি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আর তাদের প্রয়োজনীয় আইইডি সরবরাহ করে জেনি। এমন তথ্যের ভিত্তিতে এই আইটি বিশেষজ্ঞ জেনিকে খোঁজা শুরুর পর তার সন্ধান পেয়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জেনির বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম একজন স্বনামধন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। জেনির জঙ্গীবাদে জড়ানো সম্পর্কে অবগত ছিলেন তার মা। কেন তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তার মা বলেছেন, তাকে (জেনি) ধরে ফেলার ভয়ে আমি জানাইনি। তবে আমি জানতাম একদিন আপনারা তাকে ধরে ফেলবেন-জেনির মা এমন কথা জানিয়েছেন র‌্যাবকে। র‌্যাব কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেনিকে রিমান্ডে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে আর কে কে জড়িত? তার ও তাদের সহযোগীদের আরও কৌশল কি? এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
×