ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ২০ মে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ২০ মে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সর্বাত্মক নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে বিরাজমান কোন্দল নিরসনের মিশন শুরু করেছে দলটি। সারাদেশে দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে আগামী ২০ মে দেশের সকল জেলা-মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও জেলা ও মহানগর কমিটির দফতর, প্রচার ও তথ্য সম্পাদকদেরও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। শুধু অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব ও বিভেদের কারণে দেশের অনেক স্থানেই আওয়ামী লীগের নিশ্চিত বিজয় হাতছাড়া হয়েছে। আর এসব দ্বন্দ্ব-বিভেদের কারণে প্রায়ই ক্ষমতাসীন দলকে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। ভাতৃঘাতী সংঘর্ষে অনেকস্থানেই প্রাণ হারিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কজন নেতাকর্মী। ত্যাগী ও আদর্শবান নেতাকর্মীদের হটিয়ে নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব বলয় সৃষ্টি, সুযোগ-সন্ধানীদের অধিক্য এবং নানা অনৈতিক কর্মকা-ের জড়িয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে খ্যাত আসনগুলোতেও সংগঠনের অবস্থা নাজুক অবস্থায় ঠেকেছে। এসব কারণে নির্বাচনের এক বছরেরও বেশি সময় থাকতে কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। মুখে যত কথায় বলুক, অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, এটি নিশ্চিত ধরে নিয়েই এখন দলের ঐক্যকে সুদৃঢ় করার কাজকেই প্রাধান্য দিয়েছে দলটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা কিছুদিন ধরেই কোন্দল-দ্বন্দ্বে জর্জরিত জেলা-মহানগরের নেতাদের ঢাকায় তলব করে সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলে তৃণমূলে দলের ঐক্যকে সুদৃঢ় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকা জেলার নেতাদের পাশাপাশি দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করে সারাদেশের প্রকৃত চিত্র জানার চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে তৃণমূলের অনেক নেতাই এ মিশন কতটা সুফল বয়ে আনবে সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, দেশের অনেক জেলা ও থানায় দ্বন্দ্ব-কোন্দল এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক করে সমাধানের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল নাও হতে পারে। তাই বিরোধ মীমাংসায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রচেষ্টার পাশাপাশি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বসতে চান তৃণমূল নেতারা। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বসলেই সত্যিকার অর্থে বিরোধ মীমাংসা সম্ভব হবে। সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের বৈঠকে তৃণমূল নেতাদের এমন মনোভাবের কথা জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে। এর জের ধরেই আগামী শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বৈঠকের কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কর্মপরিকল্পনা, কৌশল, দ্বন্দ্ব-বিভেদ নিরসন, দলের প্রার্থিতা নির্বাচন, নির্বাচনী প্রচারের কৌশলসহ নানা দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ২০ মে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সকল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দফতর ও উপ-দফতর সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় সভার সংবাদে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন তৃণমূল নেতারা। তাদের মতে, একমাত্র সভানেত্রী শেখ হাসিনাই পারবেন দলের ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে। কোন্দলে জড়িত মন্ত্রী-নেতারা যতই প্রভাবশালী হোন না কেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করার দুঃসাহস তারা কখনই দেখাতে পারবেন না। আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের সকল স্থানের চিত্র আছে। নানা জরিপের মাধ্যমে দেশের কোথায় কোন নেতা-মন্ত্রী বা এমপিরা কোন্দলে জড়িত, অপকর্মে জড়িত থেকে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কাদের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত হতে হয়েছেÑ তার বিস্তারিত তথ্যই প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। ফলে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে কোন মন্ত্রী-এমপিই তা অস্বীকার করতে পারবেন না। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই কয়েক দফা মাঠ জরিপ চালিয়ে সারাদেশে দলের সাংগঠনিক চিত্র সংগ্রহ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০০ নির্বাচনী আসনে দলের মন্ত্রী-এমপিদের সর্বশেষ জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার, বিপক্ষ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থান এবং আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারেও মাঠ জরিপের মাধ্যমে বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন তিনি। কোন্দল-বিভেদ সৃষ্টি এবং অনৈতিক কর্মকা-ের কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মন্ত্রী-এমপিই যে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না তা নানাভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগপ্রধান। আর এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ২০ মে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন শেখ হাসিনা। সূত্র জানায়, ওই মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল নেতাদের বেশ কয়েক দফা নির্দেশনা দেবেন। একই সঙ্গে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জড়িত নেতাদের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করবেন। সুনির্দিষ্টভাবে কোন্দলে জড়িত নেতাদের সতর্ক করার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ হয়ে না চললে তাদের কপালে যে দুর্ভোগ নেমে আসবে সে কথাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ফলে ২০ মে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন সারাদেশের নেতারা।
×