ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির বোমা সন্ত্রাসের নেতৃত্বে ছিল এরা

শিবির ক্যাডাররা হঠাৎ উধাও, খুঁজছে গোয়েন্দারা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

শিবির ক্যাডাররা হঠাৎ উধাও, খুঁজছে গোয়েন্দারা

শংকর কুমার দে ॥ হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ছাত্রশিবিরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভয়ঙ্কর সাথী ক্যাডাররা। একের পর এক জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলাকালে ও রায় ঘোষণার সময়ে সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত শিবির ক্যাডারদের খোঁজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। বিএনপির ডাকে যেসব পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটানোর ঘটনায় বিএনপি-ছাত্রদলের ক্যাডারদের নেতৃত্বে ছিল শিবির ক্যাডাররাই। নাশকতার মামলা মাথায় নিয়ে সহিংস সন্ত্রাসের মাঠ কাঁপানো, দাবড়িয়ে বেড়ানো ভয়ঙ্কর প্রকৃতির সাথী ক্যাডারদের হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, সর্বশেষ জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা ধনকুবের মীর কাশেমের ফাঁসির রায় কার্যকর করার সময় থেকেই অদৃশ্য হয়ে যায় শিবিরের সাথী ক্যাডাররা। ফাঁসির রায় কার্যকরের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান করা হলেও মাঠে দেখা যায়নি তাদের কোন তৎপরতা। অথচ দেশব্যাপী যে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাস চালানো হয়ে তার অগ্রভাগে ছিল এই সাথী ক্যাডাররাই। নাশকতার মামলায় আসামি হওয়ার কারণে শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতারের জন্য খোঁজ করেও তাদের হদিস করতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ নাশকতার মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে থেকেও চোরাগোপ্তা হামলা করে সারাদেশে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও নাশকতামূলক কর্মকা-ে নেতৃত্ব দিচ্ছিল জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্রশিবিরের সাথী ক্যাডাররা। তারা সহিংস সন্ত্রাসী হামলা চালাতে আধুনিক পোশাক পরে বেশ ভুষা পাল্টে ফেলায় পারদর্শী। শিবির ক্যাডাররা জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যদের সহায়তা ও সহযোগিতা করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু কোথায় গেল সেই সব তালিকাভুক্ত ছাত্রশিবিরের সাথী ক্যাডাররা? হঠাৎ করেই কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে তারা? কোন শিবিরের সাথী ক্যাডারের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না কেন? তাহলে তারা উধাও হয়েছে কোথায়? এই প্রশ্ন গোয়েন্দা সংস্থার। গোয়েন্দা সূত্র জানান, সারাদেশে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া শিবিরের কর্মী-ক্যাডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শিবির ক্যাডারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে হলে প্রথমে তাকে হতে হবে ‘দাওয়াত প্রাপ্তি’। ছাত্রশিবিরের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। দাওয়াত প্রাপ্তির কাজে সন্তুষ্ট হওয়ার পর ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর তার কাজের ওপর ভিত্তি করে হন ‘কর্মী’ পদধারী। দুই থেকে তিন বছর কর্মী পদে থাকার পর পরীক্ষার ভিত্তিতে তাকে ‘সাথী’ পদে নিযুক্ত করা হয়। শিবিরের একটি ইউনিটে থাকে শতাধিক কর্মী ও দাওয়াত প্রাপ্তি। একজন সাথীর অধীনে থাকেন তারা। সাথীরা সংগঠনে অপারেশন কমান্ডার হিসেবে কাজ করেন। একজন শিবিরকর্মী ‘সাথী’ পদে নিযুক্ত হওয়ার পর তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। ওই প্রশিক্ষণে শিবির একাধিক সাথী অংশ নেয়। বিপরীত সংগঠনকে দমন করতে প্রতিশোধমূলক কর্মকা- পরিচালনা করার কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় প্রশিক্ষণ শিবিরে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার কৌশল সম্পর্কে দলীয় কর্মী ও দাওয়াত প্রাপ্তিদের শিখিয়ে দেয় শিবিরের সাথীরা। রাজপথে শিবিরের ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকা- পরিচালনা করার সময় একজন নেতাকর্মীদের চাঞ্চল্য রাখতে বিভিন্ন সেøাগান দেন। সেøাগান দেয়া ওই ব্যক্তিরাই সাধারণত হয় সাথী। সাথীরা হয় খুবই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিবিরের সাথী ক্যাডাররাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট মামলা রয়েছে। সন্ত্রাস ও নাশকতা কর্মকা-ে জড়িত ও মামলা থাকার অভিযোগেই তাদের গ্রেফতারের জন্য খোঁজা হচ্ছে। জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদার করার পর শিবিরের সন্ত্রাসীরা এখন ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আত্মগোপন করে আছে। গত দশ মাস ধরে সারাদেশে জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদার করার পর থেকেই মূলত গা ঢাকা দিতে থাকে শিবির ক্যাডাররা। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, ছাত্রশিবিরের সাথী, নেতাকর্মীদের মামলায় অভিযুক্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিগত সময়ে শিবির ক্যাডারদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েও শিবিরের সাথী পরিচয় দেয়নি তারা। সংগঠনের পরিচয় লুকিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত পরিচয় কিংবা ভুয়া পরিচয় দিয়ে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করে এসব সাথী ক্যাডার। সহিংস সন্ত্রাসে অভিযুক্ত সাথী ক্যাডারদের প্রকৃত পরিচয় উদঘাটনের চেষ্টার পাশাপাশি হঠাৎ কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তবে কি তারা কৌশল পাল্টাচ্ছে নাকি নাশকতার বড় ছক কষছে? প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিবিরের সাথী ক্যাডারদের অনেকেই জঙ্গীগোষ্ঠীতে যোগ দিয়ে জঙ্গী সদস্য হয়ে গেছে এমন অভিযোগেরও তদন্ত করে দেখছে গোয়েন্দারা।
×