ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সালাহ্উদ্দিন আহমদ চৌধুরী লিপু

ভাঙতে হবে সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

ভাঙতে হবে সিন্ডিকেট

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা মিলে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তারা পরিবহণ খাতকে জিম্মি করে রেখেছে। পরিবহন খাতের কারো গায়ে আঁচড় পড়লে বা তাদের স্বার্থ ক্ষুণœ হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে ধর্মঘট ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে যাত্রীসাধারণকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছে। পরিবহণ শ্রমিকগণ দেশের আইন কানুন মানে না। তারা আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করছে। তারা যদি অপরাধ করে থাকে, তবুও কোন অপরাধীর বিচার করা যাবে না। এ যেন তাদের মামার বাড়ি আবদার। তথাকথিত সিটিং সার্ভিসের নামে দীর্ঘদিন বাড়তি ভাড়া আদায় করে আসছিল। গত ১৫ এপ্রিল ঢাকায় সিটিং বা চিটিং বাস বন্ধে সরকার উদ্যোগ নিলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিলে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার আর এগুতে পারেনি। ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যার দায়ে আদালত দুই ট্রাক চালককে মৃত্যুদন্ডের রায়ের প্রতিবাদে কোন পূর্ব ঘোষণা ব্যতিত গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পরিবহণ শ্রমিকরা সারাদেশে ৩৬ ঘন্টার ধর্মঘট অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে অগণিত যাত্রী সাধারণের অবর্ণীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। চলচ্চিত্র নির্মিতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরের সড়ক দুর্ঘটনার রায়ে আদালত চালককে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করলে খুলনা বিভাগে তারা পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিলে মানুষ দুর্ভোগে অসহায় হয়ে পড়ে। দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় সম্পন্ন হয়। যা দেশের ইতিহাসে সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি। চালকের অবেহেলায় মানুষের মৃত্যুর অপরাধের বিচারে এ রায় এক মাইলফলক। দেশের স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে, সেখানে চালকের অবহেলার কারণে ৪৮ জন স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছিল। তথ্য মতে, বছরে প্রায় আট হাজারেরও অধিক সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। চালকদের বেপরোয়া গতি, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, ফিটনেস বিহীন গাড়ি, অবহেলা, অদক্ষ চালকÑ সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। এখনও পর্যন্ত কোন যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন আইন প্রণীত হয়নি। বিদ্যমান ‘মোটর যান আইন-১৯৮৩’ তে যে সকল শাস্তি রয়েছে তা অতি নগণ্য। ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায় বেপরোয়া যান দ্বারা মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি তিন বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড ও জামিনযোগ্যের বিধান রয়েছে। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। শাস্তির অপ্রতুলতার কারণে প্রতিদিন মানুষের প্রানহানি ঘটিয়ে পরিবহণ শ্রমিকরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের দিন দিন আষ্ফালন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৭ মার্চ ‘সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৭’ এর চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রীসভায় অনুমোদন লাভ করেছে। প্রস্তাবিত এ আইনকে পরিবহন সংগঠনগুলো কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করে সংশোধনের দাবি তুলেছে। অতীতেও দেখা গেছে সড়কে দুর্ঘটনার মৃত্যুর শাস্তি গুরুদন্ডের আইন প্রণীত হলেও মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গুরুদন্ড লঘুদন্ডে পরিণত হয়েছে। পরিবহন খাতে নিয়ম, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরী। পরিবহন খাতে দুর্ঘটনা, নৈরাজ্য, অরাজকতা রোধে কঠোর আইন প্রনয়ন করা এখন সময়ের দাবি। যাত্রী সাধারণের ন্যায্য অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্যেগ এখনই নিতে হবে। কোর্ট হিল, চট্টগ্রাম থেকে
×