ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেন এই অন্যায্য ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

কেন এই অন্যায্য ব্যবস্থা

রানা প্লাজা ধসের চতুর্থ বর্ষ পূর্তিতে দেশের গার্মেন্টস খাতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আবার নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশের শিল্প ও রফতানি খাতের ভিত হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। কর্মসংস্থানেরও প্রধান খাত। নারীর ক্ষমতায়নেও এ শিল্পের অবদান প্রচুর। আর মাত্র ৫-৬ বছরে এ শিল্প থেকে বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্য অর্জিত হলে মালিক, শ্রমিক সব পক্ষই উপকৃত হবে এবং তাতে দেশেরও কল্যাণ। এরকম একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুনিশ্চিত বাস্তবায়নের জন্য এই খাতের সমস্যা ও সঙ্কটসমূহকে শনাক্ত করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। অথচ গত চার বছরে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে পোশাকের বিদেশী ক্রেতারা বড় কোন পদক্ষেপ নেয়নি। নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি এবং শ্রম অধিকার রক্ষায় তাদের প্রতিশ্রুত অর্থও পাওয়া যায়নি। এর চেয়ে বড় সমস্যা তৈরি পোশাকের দাম নিয়ে। বাংলাদেশ থেকে ৫ ডলারে কিনে নিয়ে ওই পোশাক বিক্রি হচ্ছে ২৫ ডলারে। অথচ ন্যায্য দামের অভাবে দেশের গার্মেন্টস কারখানা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। রবিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সামাজিক সংলাপে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান যথার্থই বিশ্ব অন্যায্য ব্যবস্থার দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় এক ধরনের অন্যায্যতা আছে। বাংলাদেশ থেকে একটি তৈরি পোশাক পাঁচ ডলারে কেনা হয়। তারপর তা বিশ্ববাজারে ২৫ ডলার কিংবা এর বেশি দামে বিক্রি হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ওই ২০ ডলার কোথায় যায়? এই অন্যায্য ব্যবস্থার কারণে সবাই এর সুফল পাচ্ছে না। আমরা ৫ ডলার নিয়ে আলোচনা করছি কিন্তু বাকি ২০ ডলার কোথায় যায় তা নিয়ে কোন পক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই। এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে রানা প্লাজার ট্র্যাজেডির পর পোশাক তৈরির কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেশ উন্নতি ঘটেছে; শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও কিছুটা বেড়েছে। তবে পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে এমনটা বলা যাচ্ছে না। এত বড় বিয়োগান্তক ঘটনা তথা বিসর্জন থেকে যে অর্জনগুলো এসেছে তাতে শতভাগ সন্তুষ্ট হতে পারছেন না শ্রমিকরা। তারা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার চান। জীবনযাপনের ন্যূনতম ব্যয়ভার মেটানোর জন্য শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাকে পাশ কাটিয়ে গেলে সেটি অমানবিক হবে। একদিকে গার্মেন্টস মালিকদের বিলাসবহুল জীবন, অন্যদিকে শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো পরিস্থিতি সমাজের অসাম্য ও অন্যায্য বাস্তবতাকেই সামনে নিয়ে আসে। যে কোন বিবেকবান মানুষ এর ইতিবাচক পরিবর্তন চাইবেন। আগামী মাসের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এবং এর কর্মপরিবেশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আলোচনা হবে। আমরা আশা করব সুনীতি সুপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে বিরাজমান সমস্যাগুলো সমাধানকল্পে সবার আগে বাংলাদেশকে ন্যায্য দাম দেবার ব্যাপারে ঐকমত্যে আসতে হবে। ইউরোপের বাজারে যে অগ্রাধিকার সুবিধা বাংলাদেশ পায়, তাতে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করার আশঙ্কার কথা আগাম উচ্চারণ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের ডেপুটি হেড ইয়োগান হেইম্যান। আমরা শুভ বার্তা প্রত্যাশী। তাতে জিএসপি ইস্যুতে দেশ আরও এগিয়ে যেতে পারবে। এ শিল্পের ভাবমূর্তি উন্নয়ন এবং এর বিকাশ ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নিতে হবে।
×