ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড়ে নজর দিন

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

হাওড়ে নজর দিন

বিগত ৩৫ বছরের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে এবারের এপ্রিলে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় ১১৯ শতাংশের বেশি। এর ফলে রাজধানীসহ চট্টগ্রামের অনেকাংশ তলিয়ে গেছে কয়েক ফুট পানির নিচে। সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক জলাবদ্ধতা। জনদুর্ভোগ হয়েছে অবর্ণনীয়। এতে করে মহানগরীর দুরবস্থা সহজেই অনুমেয়। তবে হঠাৎ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে দেশের হাওড়াঞ্চলের অবস্থা হয়েছে সর্বাধিক শোচনীয়। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের সুবিস্তীর্ণ অঞ্চল হয়েছে রীতিমতো দুর্যোগকবলিত। হাওড়াঞ্চলে অতিবৃষ্টির পাশাপাশি পাহাড়ী ঢলও অবশ্য এই অকালবন্যার জন্য দায়ী। মঙ্গলবারের খবর অনুযায়ী পাকনার হাওড় পুরোপুরি ডুবে যাওয়ায় অত্র অঞ্চলের ১৪২টি ফসলি হাওড়ের সব কয়টির ফসল ডুবে গেছে বলে খবর আছে। সেসব স্থানে ফসল রক্ষায় নির্মিত বাঁধ বলে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খবরÑ সব হাওড় ডুবে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান। এবার জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছিল আবাদ। ধান-চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার টন। আবাদকৃত ধানের ৯০ শতাংশই হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। দেড় হাজার কিলোমিটার বাঁধ পুরোটাই প্রায় বিধ্বস্ত এবং পানির নিচে। সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে কিনা, সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, অত্র অঞ্চলের আকাশে-বাতাসে এখন কেবলই ভাসছে কৃষকের আর্তনাদ ও হাহাকার। ধানের পাশাপাশি তাদের জীবন-জীবিকার অন্যতম উৎস মাছ এবং হাঁস-মুরগিতেও লেগেছে মড়ক। পানি হয়েছে মারাত্মক দূষণকবলিত, যাতে জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। তবে স্বস্তির খবর এই যে, প্রতিদিনের বৃষ্টিপাতে কমে আসছে দূষণের মাত্রা। আপাতত হাওড়ের ৩ লাখ ৩০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারকে প্রতি মাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা নগদ দেয়ার ঘোষণা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। তবে ওই অঞ্চলের ২৪ লাখ পরিবারকেই খাদ্য ও অর্থ ত্রাণ হিসেবে দেয়ার দাবি উঠেছে ‘হাওড়ে মহাবিপর্যয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকদের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তুলনামূলকভাবে ভাল বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে। তদুপরি বর্তমান সরকার একই সঙ্গে জনবান্ধব ও কৃষকবান্ধব সরকার হিসেবে পরীক্ষিত। সুতরাং দুর্গত ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আতঙ্কিত কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার কোন কারণ নেই। সরকারপ্রধান সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট, দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। একদা মঙ্গা এলাকা হিসেবে সুপরিচিত উত্তরবঙ্গে বর্তমানে হাহাকার নেই বললেই চলে। হাওড়ের বর্তমান পরিস্থিতিও যে সরকার দক্ষতার সঙ্গেই সামাল দিতে পারবে, এ কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়। তবে ত্রাণের চেয়েও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বেশি প্রয়োজন পুনর্বাসন, বীজ, সার, কীটনাশক ও আনুষঙ্গিক সহায়তা, যাতে তারা সহজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। মনে রাখতে হবে যে, হাওড়াঞ্চল বাংলাদেশের এক অফুরন্ত শস্য ও মৎস্যভা-ার। কাজেই এর সার্বিক সুরক্ষাকল্পে পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ জরুরী ও অত্যাবশ্যক। হাওড় উন্নয়ন বোর্ড একটি থাকলেও এর তৎপরতা আদৌ দৃশ্যমান নয়। এটিকে সর্বোতভাবে সক্রিয় ও কার্যকর করে তোলা এখন সময়ের দাবি।
×