ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড- ৬৪ বছর বয়সে পেলেন ব্ল্যাক বেল্ট

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

রেকর্ড- ৬৪ বছর বয়সে পেলেন ব্ল্যাক বেল্ট

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তায়কোয়ান্দো একটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান মার্শাল আর্ট, যা বিংশ শতাব্দীতে কোরিয়ায় আন্তর্জাতিক খেলা হিসেবে উন্নতি ও বিকাশ লাভ করে। এটি হলো খালি হাতে প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহতের একক কৌশল। পৃথিবীতে অনেক তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় আছেন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে কদিন আগে এক ব্যতিক্রমী ঘটনার অবতারণা ঘটিয়েছে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো-দো-এ্যাসোসিয়েশন। এর মহাসচিব সোলায়মান শিকদার গত ২১ এপ্রিল সকালে এমন একজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ হাতে ব্ল্যাক বেল্ট পড়িয়ে দেন, যার বয়স শুনলে পাঠকরা নির্ঘাত ভিমড়ি খাবেন। তার বয়স ৬৪। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ালটন বিজয় দিবস তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতা’য় দেখা যায় ব্যতিক্রমী দৃশ্য। সন্ধান পাওয়া যায় এমনই এক তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড়ের (ঢাকা ক্লাবের হয়ে ৬০ কেজি ওজন শ্রেণীতে তিনি স্বর্ণপদক জয় করেন), যার বয়স তখন ছিল ৬৩। তার নাম ফজলুল করিম চৌধুরী (জাহাঙ্গীর)। তাকে নিয়ে জনকণ্ঠ তখন একটি প্রতিবেদন লেখে, যা প্রকাশিত হয়েছিল গত ৭ জানুয়ারি ‘যেখানে সফল প্রবীণ ও নবীন তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় ...’ শিরোনামে। সেই বর্ষীয়ান ফজলুল আবারও এলেন আলোচনায়। এবার আগের চেয়েও অনেক বেশি রং ছড়িয়ে। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে ফজলুল উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জানান, ‘৬৪ বছর বয়সে আমি ব্ল্যাক বেল্ট পেলাম। এজন্য রীতিমতো শিহরিত আমি। ভীষণ গর্বিত। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। এটা আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা।’ ফজলুল জানান, ব্ল্যাক বেল্টের অনেক প্রকারভেদ আছে। সেক্ষেত্রে তিনি পেয়েছেন ‘ফার্স্ট ডান ব্ল্যাক বেল্ট’। চেষ্টা চালিয়ে গেলে ও সুস্থ থাকলে সেকেন্ড এবং থার্ড ডান বেল্টও পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি। আজিমপুরে অবস্থিত সেন্ট্রাল তায়কোয়ান্দো একাডেমি ফজলুলকে এই সম্মাননা দেয়। তাকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়েছেন আল-আমিন এবং বিজয় দাস। ‘যে বয়সে মানুষ হার্টে রিং পরে, সে বয়সে আমি কোমরে ব্ল্যাক বেল্ট পরলাম। ডায়বেটিস ছিল, এখন সেটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। আশাকরি আগামী ২১-২৩ মে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারব এবং পদকও জিতব।’ সোলায়মান শিকদার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমার জানামতে ফজলুল সাহেবই বাংলাদেশের তায়কোয়ান্দোর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী ব্ল্যাক বেল্টধারী। তাকে বেল্ট পরিয়ে দিতে পেরে আমি আনন্দিত এবং নিজেও সম্মানিত বোধ করছি। এই বয়সেও ওনার আগ্রহ, শক্তি, শারীরিক সক্ষমতা, দৃঢ় মানসিকতা, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা এবং অমায়িক আচরণ আমাকে অবাক ও মুগ্ধ করে। ওনার এই অর্জন নিঃসন্দেহে তরুণ প্রজন্মকে এই খেলায় আসতে এবং পরিশ্রম করে সফলতা অর্জন করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে বিশ^াস করি।’যে বয়সে তার বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেবার কথা, সে বয়সে ফজলুল আসেন মার্শাল আটের এই খেলাটি খেলতে। নোয়াখালীর মাইজদি পৈত্রিক নিবাস হলেও ঢাকায় জন্ম নেয়া ফজলুল রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ১৯৭৮ সালে তৎকালীন জার্মানিতে চলে যান। তখন তার বয়স ৩৮। সেখানকার ফ্রাঙ্কফুটের একটি কারাতে ক্লাবে ভর্তি হন। নয় মাস প্রশিক্ষণ নেন এবং গ্রিন বেল্ট লাভ করেন। ১৯৮৫ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন, বিয়ে করেন (তার এক ছেলে ব্যাংকার ও এক মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার, স্ত্রী নীপা চৌধুরী গৃহবধূ) এবং বিভিন্ন ব্যবসা করেন (এখন কিছু করেন না, লালবাগে একটি বাড়ির মালিক। ভাড়া দিয়ে বেশ ভালই আয় করেন)। মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ বিদেশে গিয়ে তায়কোয়ান্দো শিখে আসলেও এত বছর দেশে আয়োজিত কোন টুর্নামেন্টেই অংশ নেননি ফজলুল। সেই হিসেবে গত বছরের ‘ওয়ালটন বিজয় দিবস কারাতে প্রতিযোগিতা’ দিয়েই তার অভিষেক হয়। বয়স বেড়ে যাওয়ায় এবং ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ায় শরীরটা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তাই শরীর ঠিক রাখতে শিখে রাখা বিদ্যাটা আবার কাজে লাগাতে সচেষ্ট হন তিনি। এজন্য তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ সোলায়মান শিকদারের কাছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো-দো-এ্যাসোসিয়েশনের এই মহাসচিব ফজলুলকে এই খেলায় ফেরার সব ব্যবস্থা করে দেন। ২০১৬ সালের মার্চে ফজলুল ভর্তি হন আজিমপুর বেঙ্গল তায়কোয়ান্দো সংস্থায়। নয় মাস প্রশিক্ষণের পর প্রথমে গ্রিন ও পরে রেড বেল্ট পান। ব্ল্যাক বেল্ট পাবার অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার হলো অবসান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের তায়কোয়ান্দোর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে ব্ল্যাক বেল্ট পাবার অনন্য রেকর্ড গড়লেন তিনি।
×