ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ সাসেক্সের উদ্দেশে দেশ ছাড়বে জাতীয় ক্রিকেট দল

ইংল্যান্ড সফর কঠিন বলছেন মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

ইংল্যান্ড সফর কঠিন বলছেন মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাশরাফি বিন মর্তুজা ২০১৪ সালের শেষের দিকে ওয়ানডে দলের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দল বদলে গেছে। সাফল্য পাচ্ছে। সেই বদলে যাওয়া চেহারা এখনও বিদ্যমান। কিন্তু সামনে কী তা থাকবে? সামনে আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি সিরিজ রয়েছে। এরপর ইংল্যান্ডে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফরটা কেমন হবে? বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বললেন, ‘খুব কঠিন সফর হতে যাচ্ছে।’ মঙ্গলবার এ দুই সফর নিয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনেই এমন কথা জানালেন মাশরাফি। কিন্তু কেন কঠিন সফর হবে? মাশরাফি দেখালেন যুক্তি, ‘বাস্তবতার দৃষ্টিতে বললে এটা খুব কঠিন সফর হতে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষ যারা আছে, তাদের দিকে তাকালে মনে হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এতো সহজ হবে না। কিন্তু বলাও যায় না; আমরা ওই কন্ডিশনে ইংল্যান্ডকে দুইবার (২০১০ ও ২০১৫ সালে) হারিয়েছি। কার্ডিফে (২০০৫ সালে) একবার অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়েছি। যদিও এগুলো ইতিহাস, তবে আমার কাছে এখনও মনে হয় এটা সম্ভব। আমরা কিভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিব, সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আমরা যদি মানসিকভাবে প্রস্তুত না হতে পারি, তাহলে ২০-২৫ দিনের প্রস্তুতি ক্যাম্পও তেমন একটা কাজে দিবে না।’ এ সফরের উদ্দেশে আজ গভীর রাতে সাসেক্সে উড়াল দিচ্ছে মাশরাফিবাহিনী। শুরুতে সাসেক্সে প্রস্তুতি ক্যাম্প করবে মাশরাফিরা। সাসেক্সে গিয়ে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। ১ মে ডিউক অব নোরফলকের বিপক্ষে এবং ৫ মে সাসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর আয়ারল্যান্ডে চলে যাবে দল। সেখানে গিয়ে তিনজাতি সিরিজ খেলবে। আয়ারল্যান্ডে ৭ মে গিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ ছাড়াও স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড খেলবে। ১২ ও ১৯ মে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ১৭ ও ২৪ মে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে মাশরাফিবাহিনী। ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে ২৫ মে ইংল্যান্ডে রওনা হবে বাংলাদেশ দল। সেখানে গিয়ে শুরুতে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। ২৭ মে পাকিস্তানের বিপক্ষে ও ৩০ মে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। এরপর ১ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ দল। ৫ জুন অস্ট্রেলিয়া এবং ৯ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। আপাতত এ সূচী। যদি বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে পারে, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। এবারের সফরটি তিনটি ধাপে হবে। শুরুতে সাসেক্সে প্রস্তুতি ক্যাম্প। এরপর আয়ারল্যান্ড সফর। তারপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেয়া। ৩৬ দিনের সফর আপাতত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠলে দিন আরও বাড়বে। দল কিভাবে এগিয়ে যাবে? মাশরাফি জানান, ‘ক্যাম্পটা তো প্রস্তুতি। আয়ারল্যান্ডে তো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ, টুর্নামেন্ট বলতে পারেন। সেখান থেকে (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির) উইকেট কতটা আলাদা, সেটা বলা যাচ্ছে না। শুনেছি আয়ারল্যান্ডে এখনও শীত। আর ইংল্যান্ডে মাত্র গ্রীষ্ম শুরু হয়েছে। সুতরাং আমার মনে হয় যে, দুই রকম আবহাওয়ায় উইকেটের আচরণও দুই রকম হতে পারে। এর আগে ১০-১২ দিনের ক্যাম্পটা আমাদের খুব কাজে লাগবে। কয়েকটা প্রস্তুতি ম্যাচ এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচ; প্রস্তুতির দিক থেকে বলব যে, আমরা যদি খুব ভালভাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসটা ঠিকঠাক রাখতে পারি, তাহলে আশাকরি ভালই হবে।’ ম্যাচ জিতলে আত্মবিশ্বাস এমনিতেই বেড়ে যায়। তা যে কোন দলেরই। কিন্তু মানসিক ব্যাপারটা কিভাবে আসবে? মাশরাফির জবাব, ‘ক্যাম্প সবসময় সাহায্য করে। উইকেট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কন্ডিশনটা বলা যায়। আর এখন যেহেতু গ্রীষ্মের একদম শুরু, এ সময় আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হবে। এটাও মাথায় রাখতে হবে। ২০১৫ সালে আমরা যেমন চেয়েছিলাম তেমনই হয়েছে। আবার নিউজিল্যান্ড সফরের আগেও ক্যাম্প ছিল। কিন্তু এবার ব্যর্থ হয়েছি। এটা বলা তাই কঠিন যে, ক্যাম্প থাকলেই ভাল কিছু হবে।’ আয়ারল্যান্ডের সিরিজটাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি হিসেবে নিচ্ছেন নাকি ওইটাতেও জেতার লক্ষ্য? মাশরাফি বলেন, ‘অবশ্যই জেতার লক্ষ্য থাকবে, আমি জানি না কে কি বলবে। আমার কাছে মনে হয় জেতার জন্যই খেলতে হবে। অনেক হিসেব-নিকেষের ব্যাপার আছে। ওইখানে জিততে পারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভাল কিছুর সুযোগ তৈরি হবে। না হলে চাপ বেড়ে যাবে। আমার কাছে মনে হয় মানসিক প্রস্তুতিটা ভাল না হলে সবকিছুই কঠিন হয়ে যাবে।’ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির আগে কিছু অনুশীলন ম্যাচ হেরে গিয়েও বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। এবার কোন লক্ষ্যের কথা বলবেন কিনা; বাংলাদেশ কতদূর যেতে পারে? মাশরাফি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রথমত আগেরবার যদি দেখেন, প্রস্তুতি ম্যাচে জেতাটা ব্যাপার না। ব্যক্তিগতভাবে আমি যে জিনিসটা করতে চাই, সেটা প্রস্তুত করতে পারছি কিনা, সেটা বড় ব্যাপার। অনেক সময় দেখা যায়, মূল ম্যাচে তা হয় না। ব্যর্থ হলেও প্রস্তুতি ম্যাচে কিছু করা যায়। কিছু হলেও আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, প্রস্তুতি ম্যাচে রান না এলে না আসুক; একেকজনের অবশ্য এ বিষয়ে একেক রকম চিন্তা। আমার সারাজীবন এটাই মনে হয়েছে, আমি উইকেট না পাই; আমার এ রকমই হয়। তবে যেটা করতে চাই, সেটা করতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। গত বিশ্বকাপে (২০১৫ সালে) আমরা একটা ম্যাচ জিতেছিলাম খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গিয়ে। আবার যদি বলেন, প্রথম ম্যাচটা আফগানিস্তানের কাছে জেতার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আইসিসির টুর্নামেন্টে দেখা যায় ২৫০ থেকে ৩৫০ (রানের)-এর উইকেট দেয়া হয়। সুতরাং এখানে তেমন কোন পার্থক্য থাকবে না। আমরা যদি মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারি, শুরুর দিকে ভাল করতে পারি, তাহলে বলা যায় না, অনেক কিছুই হতে পারে। তবে আমরা এমন একটা গ্রুপে যেখান থেকে আসলেই আগে বলা যায় না আমরা কতদূর যাব বা কি করব।’ প্রতিপক্ষ বিবেচনায় আপনার ব্যক্তিগত এবং দলের চাওয়া কী? মাশরাফি মানসিকতাতেই গুরুত্ব দিচ্ছেন, ‘পুরো দলেরই যেটা থাকা উচিত, সেটা হলো মানসিকভাবে দ্রুত রেডি (প্রস্তুত) হওয়া।’ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ভাল খেলে আসছিল। কিন্তু গত কয়েকটা সিরিজে সফলতা কমে এসেছে। এই বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি; টি২০ অবসরের পর ঠিক কী ভাবছেন? মাশরাফি জানান, ‘আপনার সঙ্গে একমত। আফগানিস্তানের সঙ্গে যে ম্যাচটা আমরা হেরেছিলাম, সেটা শঙ্কার বাইরে ছিল। ইংল্যান্ডের সঙ্গে সুযোগ মিস করাও কষ্টকর ছিল। কারণ আমরা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেও হেরেছি। আফগানিস্তান সিরিজটা জিতলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা কষ্টদায়ক ছিল। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে হারের পরে। বাকি যা আছে (হারগুলো) সেখানে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। নিউজিল্যান্ডে সুযোগ ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নিউজিল্যান্ড থেকে আমরা আলাদা একটা চ্যালেঞ্জে ঢুকেছি, আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড়। এ্যাওয়েতে এখন আমাদের ভাল খেলতে হবে। হোমের সঙ্গে মেলালে এ্যাওয়েতে (বিদেশের মাটিতে) আমাদের পারফর্ম হয়তো আকাশ-পাতাল ব্যবধান। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্লেষকরা ভাল বলতে পারবেন, এ্যাওয়েতে জেতা কতটা কঠিন। তবে শ্রীলঙ্কায় তৃতীয় ওয়ানডেটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। এই বছরটা ধরেই এ রকম চ্যালেঞ্জ। আমার বিশ্বাস, অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত দলের দিকে যদি তাকান তারা এ্যাওয়ে ম্যাচ বেশিরভাগই হারে। আমার বিশ্বাস, এই টিম এ্যাওয়ে ম্যাচে অন্য দলের চেয়ে অনেক দ্রুত সফল হবে। ড্রেসিংরুমে আমার এমনই একটা বিশ্বাস হয় যে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত দলের চেয়েও এই দল ভাল করবে।’ টি২০ ছাড়ার পর এখন শুধু ওয়ানডে। অধিনায়ক হিসেবে কী লক্ষ্য? মাশরাফি জানালেন আলাদা কোন লক্ষ্য নেই, ‘না। আমার অধিনায়ক হিসেবে আলাদা করে তেমন কোন লক্ষ্য নেই। এখান থেকে আলাদা করে চাপ নেয়ার কিছু নেই।’
×