ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় বয়লারের ছাই নদীতে ॥ পরিবেশ দূষণ

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

নওগাঁয় বয়লারের ছাই নদীতে ॥ পরিবেশ দূষণ

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ শহরের বুক চিরে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদী দু’পাশের বয়লারের ছাই ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। এতে শুধু নদী ভরাটই নয়। ছাই মিশ্রিত নদীর পানি রীতিমতো পরিবেশ দূষণ করছে। বাতাসে এসব ছাই উড়ে বাড়িঘরের পরিবেশ নোংরাসহ ছাই উড়ে চোখে পড়ে অনেকেই দৃষ্টি শক্তি হারাচ্ছে। এই নদীর তীরবর্তী মানুষরা নদীর পানি দিয়ে গোসল, কাপড় চোপড় দোয়াসহ নানাবিধ গৃহস্থালী কাজ করে থাকে। নদীর পূর্ব ধারে অসংখ্য চাল উৎপাদনের অটো রাইসমিল বা চাল তৈরির চাতাল গড়ে ওঠায় ওই সব বয়লারের বর্জ্য, নোংরা পানি আর ছাই এই নদীতে ফেলায় নদীর পানি ভয়াবহভাবে দূষিত হচ্ছে। দূষণের ফলে নদীর দেশীয় প্রজাতির মাছসহ ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের। বেশি বেশি ছাই ফেলে শুধু ভরাটই নয়, নদী দখলেও তারা একাট্টা। এসব বয়লারের ছাই নদীতে ফেলে নদী ভরাট ও পরিবেশ দূষণ রোধ কল্পে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। জানা গেছে, প্রতিবছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নদীর পানি কমে গেলে বয়লারের বর্জ্য নোংরা পানি আর ছাই ফেলায় নদীর পানি দূষণ হচ্ছে। ফলে নদীতে গোসল, কাপড় চোপড় ধোয়াসহ কোন কাজ করতে পারে না। এই পানিতে গোসল করলে চুলকানী-পাচরাসহ নানাবিধ চর্মরোগ হয়। জেলায় পরিবেশ অধিদফতরের কোন অফিস না থাকায় এসব বয়লার মালিকরা কিছুই মানে না। জেলা প্রশাসন এই বয়লারের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও এসব প্রভাবশালী বয়লার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। নদীর দুই তীরে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের দাবি, অবিলম্বে নদী দূষণকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। শহরের নাপিতপাড়া, ঘোষপাড়া ও শেরপুর মহল্লার বাসিন্দাদের অভিযোগ এসব অটোমেটিক চাল কল মালিকরা বিত্তশালী ও ক্ষমতাধর হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয় না। জেলায় পরিবেশ অধিদফতরের কোন অফিস না থাকায় প্রভাবশালী বয়লার মালিকরা এসব কিছুই মানে না। টাকার জোরে কোন রকমে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র আনলেও ছাড়পত্র অনুযায়ী বয়লারের কাজ করে না তারা। তাদের ইচ্ছামতো কাজ করে থাকে। পরিবেশ অধিদফতরের নিয়ম অনুযায়ী কোন চাল কল তাদের চাতালের কাছে একটি নির্ধারিত ডোবা বা গর্তে বর্জ্য পানি আর ছাই সেখানকার পানিতে ফেলতে হবে। পানি আর ছাই যাতে পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না। অথচ নওগাঁর শতকরা ৯৯ ভাগ চাতাল মালিকরা যত্রতত্র যেখানে-সেখানে এসব ফেলে দেয়। কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না তারা। বয়লার মালিকদের কারণে ইতোমধ্যেই শহরের এক সময়ের স্রোতস্বীনি তুলশীগঙ্গা নদী মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যেতে বসেছে। এছাড়াও নওগাঁ থেকে পতœীতলা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই ধারে অসংখ্যক বয়লার আছে। একইভাবে তারা মহাসড়কের দুই ধারে ছাই ফেলে রাখে। এই সড়ক দিয়ে দ্রুত চলাচলকারী যানবাহনের বাতাসে ছাই উড়ে গিয়ে যাত্রীসহ পথচারীদের চোখে পড়ে কয়েক বছরে শতাধিক মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। জানা গেছে, জেলায় প্রায় দুই সহস্রাধিক চালকল রয়েছে। এদের মধ্যে ১ হাজার ৪শ’ চালকল তাদের সমিতির তালিকাভুক্ত। চালকল মালিকদের যত্রতত্র ছাই ফেলার কথা স্বীকার সূত্র জানায়, সমিতি পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট স্থানে ছাই ফেলার জন্য তালিকাভুক্ত মালিকদের বললেও তারা কোনই কর্নপাত করেন না। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান নদীর পানিসহ পরিবেশ দূষণ, ছাই দিয়ে নদী ভরাটসহ পরিবেশ দূষণের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এই পরিবেশ দূষণকারী বয়লার মালিকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত রাখবেন বলে তিনি জানান।
×