ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অসময়ে বৃষ্টি

বাগেরহাটে চাষী হতাশ

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

বাগেরহাটে চাষী হতাশ

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ ধানের বাম্পার ফলন হলেও অসময়ে গত ৪-৫ দিনে ঝড়বৃষ্টিতে বাগেরহাটের কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। ধান কাটার বা ঘরে তোলার মৌসুমে অতি ঝড়বৃষ্টিতে ফসলহানির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে নিচু জমির ধানের মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় চাষীরা হাপিত্যেশ করছেন। তরমুজ-বাঙ্গিসহ সবজি ক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার রামপাল, মংলা, কচুয়া ও সদর উপজেলার অধিকাংশ নিচু জমির ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা বুক সমান পানির মধ্যে নেমে কাঁচা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে চেষ্টা করছেন। অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘের ও মাছ চাষের নামে খালের মুখ বন্ধ করায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শত শত হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তরমুজ, বাঙ্গি, কুমড়া, পটলসহ সবজি ক্ষেতের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় দিশেহারা কৃষকরা ভরাট খালের অবৈধ বাঁধ খুলে দেয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। গোটাপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামের কৃষক বাচ্চু মল্লিক জানান, ধনখালি বিলে তার ৪ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। বোরো ধানের চাষ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি ধান কেটে ঘরে তুলতেন। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে গত সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনে আধা-পাকা অবস্থাতেই ধান কেটে ফেলেন। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে তা আর ঘরে তুলতে পারেননি। এ বিলে ৫০০ বিঘার ওপর জমি রয়েছে। শতাধিক কৃষকের সকলেই অসময়ের অতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রামপালের বাইনতলা ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামের স্বামী হারা ফিরোজা বেগম হাপিত্যেশ করে বলেন, দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান ভাল হইছিল, কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে সব শেষ, মাঠে মাঠে পানি থৈ থৈ করছে..। আগামী দিনগুলো কিভাবে চলবে এ চিন্তায় তিনি দিশেহারা। খানপুরের কৃষক সাধন পাল ও নিরাপদ পাল বলেন, পাকা ধান কাটার সময় হঠাৎ হওয়া ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে জলমগ্ন হয়ে ধান ঝরে পড়ছে। এই ধান আর ঘরে তোলার আশা নেই। অনুরূপ বাগেরহাটের অধিকাংশ নিচু অঞ্চলের বোরো চাষিরা হাপিত্যেশ করছেন। কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব উদ্দিন জানান, এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে ইরি, বোরো ধানের চাষ হয়। ফলন খুবই ভাল হয়েছে। কিন্তু অসময়ে অতি বৃষ্টিতে মাঠে কাটার অপেক্ষায় থাকা পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ধানের মাঠ তলিয়ে থাকায় পাকা ধান মাঠেই ঝরে পড়ছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে তিনি জানান। বাউফল নিজস্ব সংবাদদাতা বাউফল থেকে জানান, বাউফলের কৃষকের স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেছে। তাদের চোখমুখে কেবল হতাশার ছাপ। গত ৫ দিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে তাদের ক্ষেতের রবি শস্য। দাশপাড়া ইউনিয়নের খলিলুর রহমান নামের এক কৃষক বলেন ‘দিন পনেরো আগে এক দফা বর্ষায় অনেক ক্ষতি হইছে হ্যারপর আবার টানা ৫ দিনের বর্ষায় সব শ্যাষ হইয়া গ্যাছে। একটা ডাইলের দানাও ঘরে তুলতে পারি নাই‘। কালাইয়া ইউনিয়নের কৃষক ফরহাদ হোসেন জানান, এ বছর তরমুজের আবাদ করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তিনি। শুধু খলিল কিংবা ফরহাদ নয় একই প্রতিচ্ছবি এ উপজেলার হাজার হাজার কৃষক পরিবারের। গত ৫ দিনের টানা বর্ষণে সব ফসল তলিয়ে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা। ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রয়েছে ঋণের বোঝা। সব মিলিয়ে চরম হতাশা আর দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে তাদের। এরই মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার কালাইয়া বন্দরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুগ ডালের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর রবি মৌসুমে মোট ২৮ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের রবি ফসলের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে মুগ ডালের। প্রায় ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এর চাষ করা হয়। এ ছাড়াও ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে খেসারি, ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে মরিচ এবং বাকি জমিতে সোলা, ফেলন, সয়াবিন, তরমুজ, চিনাবাদাম ও অন্যান্য ফসলের চাষ করা হয়। বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার জামান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি।
×