ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জব্বারের বলীখেলা

দিদার বলী চ্যাম্পিয়ন, শামসুকে হারিয়ে শিরোপা উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

দিদার বলী চ্যাম্পিয়ন, শামসুকে হারিয়ে শিরোপা উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সবুজ শ্যামলে ভরা প্রকৃতির অনাবিল পরিবেশ নিয়ে গড়া আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম আয়োজন ও বাংলা বছরকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে মেলা, খেলাসহ নানা পর্ব। বাংলার ইতিহাসে মেলাকে ঘিরে বলীখেলার আকর্ষণীয় আয়োজন হয় শুধু চট্টগ্রামেই। ইতিহাস ঐতিহ্য আর চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ধরে রাখতে ১৯০৯ সাল থেকে আবদুল জব্বার সওদাগরের আয়োজনে বলীখেলা শুরু হয়েছে। শতবর্ষ পূরণ করে ১০৮তম বলীখেলার আয়োজন শেষ হলো মঙ্গলবার। পেশিশক্তি আর বাহুবলের জোরে নগরীর লালদীঘি মাঠে এবারের চ্যাম্পিয়ন কক্সবাজারের রামু উপজেলার দিদার আর রানারআপ হয়েছেন মীরসরাইয়ের শামসু বলী। প্রধান অতিথি সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন চ্যাম্পিয়ন দিদার বলীর হাতে ক্রেস্টসহ নগদ ২০ হাজার টাকা ও রানারআপ শামসু বলীকে ক্রেস্টসহ নগদ ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন। উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখের দিনে নগরীর শিরিষতলায় অনুষ্ঠিত সাহাবউদ্দিনের বলী খেলায়ও দিদার চ্যাম্পিয়ন হন। এদিকে, বলীখেলাকে ঘিরে গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন। কিন্তু যা শেষ হবে আগামী শুক্রবার। বৃষ্টির কারণে দু’দিন মেলা জমে না উঠায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে মেলার সময় শুক্রবার পর্যন্ত বৃদ্ধি করার। বিকেল ৩টা থেকে বলীরা লাইনে দাঁড়িয়ে খেলার অপেক্ষায় ছিল। লালদীঘি মাঠের চারদিকে জনসমাগমও শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ভবনের ছাদে গিয়ে ঠেকেছে। জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে ঐতিহাসিক এই মাঠটি। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার দেশী-বিদেশী ও আলোকচিত্র সাংবাদিকরাসহ প্রশাসনের লোকজন বলীখেলা মঞ্চের চারদিক অবস্থান নেন আকর্ষণীয় মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দী করতে। সে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জব্বারের বলীখেলা ও মেলার আয়োজক কমিটি ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজনকে সুসম্পন্ন করতে ব্যস্ত ছিলেন। মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার স্পন্সরে বিকেল ৩টা থেকে বলীখেলা শুরুর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিকেল ৪টায় শুরু হয়েছে। ঢাকঢোল আর বাঁশির সুরে বলীখেলার আয়োজন শুরু হয়। অনাড়ম্বর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে চলে বলীখেলার ১০৮তম আয়োজন। চারদিকে দর্শকদের হাতেও মোবাইল ক্যামেরায় ছবি উঠছে। কেউবা করছেন ভিডিও। আবার কেউবা স্থিরচিত্র তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি আপলোড করছেন লালদীঘি থেকে। অতীতের তুলনায় এ চিত্র ছিল বেশি। তবে এবারের আয়োজনটিও আরেকটু খোলামেলা পরিসরে করার চেষ্টা করেছেন আয়োজকরা। কিন্তু স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনি খেলোয়াড়দের সম্মানির তেমন কোন পরিবর্তন হয় না এমন আক্ষেপ আয়োজকদের। বিকেল ৪টা থেকে বলীখেলার আয়োজনটি শুরু হয়। বলীখেলার আয়োজনটি মূলত সাধারণ বাউট ও চ্যালেঞ্জিং বাউটে বিভক্ত হয়ে শুরু হয় বলীখেলা। সাধারণ বাউটে অংশ নিয়েছে ৬৪ বলী। এর মধ্যে থেকে জোড়ায় জোড়ায় বলীরা কুপোকাত করেছে প্রতিদ্বন্দ্বিকে। সাধারণ বাউট থেকে ৩২ জনকে জয়ী করা হয়েছে। এরা জব্বারের বলীখেলার মেডেল অর্জন করেছেন। আর আর্থিক সহযোগিতা থাকে শুধু চ্যালেঞ্জিং বাউটের রানারআপ ও চ্যাম্পিয়নের জন্য। এবারের চ্যালেঞ্জিং বাউট তথা সেমিফাইনালে অংশ নিয়েছেন চার বলী। এরা হলেনÑ মীরসরাইয়ের শামসু বলীর সঙ্গে কুমিল্লার লিয়াকত বলী ও রামুর দিদার বলীর সঙ্গে চট্টগ্রামের রাশেদ বলী। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় সেমিফাইনালের। মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে সেমিফাইনাল থেকে ফাইনাল রাউন্ডে উঠে আসেন রামুর দিদার বলী ও মীরসরাইয়ের শামসু বলী। চ্যালেঞ্জিং বাউটের চার থেকে ফাইনাল রাউন্ডে উঠে আসে দুই বলী দিদার ও শামসুর দিকে সবার নজর তখন। চারদিক থেকে উচ্চঃস্বৈরে আওয়াজ আসছে দিদারের পক্ষে। কারণ এ মাঠে শামসু অতটা পরিচিত নয়। এর আরও একটা কারণ রয়েছে, রামুর দিদার সুঠাম দেহের অধিকারী। যেমন রয়েছে বাহুবল, তেমনি রয়েছে পেশিশক্তির প্রভাব আর কৌশলের মারপ্যাঁচ। অপরদিকে, শামসু দিদারের তুলনায় ততটা মোটাসোটা নয়। কিন্তু বডি ফিটনেস ও গড়ন অনেকটা ভাল হলেও সুঠামের কাছে কিছুই নয়। ৪টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় দিদার ও শামসুর মধ্যে বাহুবল আর কৌশলে একে অপরকে ধরাশায়ী করার লড়াই। তিন দফায় ভেঙ্গে ভেঙ্গে এ লড়াই চলে দীর্ঘ ২২ মিনিট। ৫টা ২২ মিনিটে দিদার বলী কুপোকাত করে দেন শামসু বলীকে।
×