ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাতীয় জাদুঘরের ভার্চুয়াল গ্যালারি উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

জাতীয় জাদুঘরের ভার্চুয়াল গ্যালারি উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একই সঙ্গে একটি দেশ ও সমাজের দর্পণ হচ্ছে জাদুঘর। আপন দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জানতে জাদুঘর পরিদর্শনের গুরুত্ব অসীম। তবে ঢাকা শহরের যানজট কিংবা পথের ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে যাওয়াটা খুব সহজ নয়। আর ঢাকার বাইরের বাসিন্দাদের জন্য চাইলেই জাদুঘরে আসাটা আরও কঠিন। সেই কঠিন কাজটি এবার সহজ হয়ে গেল দর্শনার্থীদের জন্য। ভার্চুয়াল গ্যালারির মাধ্যমে নতুন যাত্রা শুরু হলো জাতীয় জাদুঘরের। দর্শনার্থীরা এবার ঘরে বসেই জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারিতে রাখা ইতিহাস-ঐতিহ্যসমৃদ্ধ নিদর্শনগুলো দেখার সুযোগ পাবেন। এ জন্য প্রয়োজন হবে শুধু ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ। এরপর অন্তর্জাল জগতের আশ্রয়ে সুযোগ মিলে যাবে জাদুঘর অবলোকনের। দেশে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল মিউজিয়াম চালু করেছে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার থেকে অনলাইনভিত্তিক ভার্চুয়াল গ্যালারির যাত্রা শুরু হলো। বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে জাতীয় জাদুঘরের ভার্চুয়াল গ্যালারি দেখতে লগইন করতে হবে ঠিকানায়। এরপর ভেতরে প্রবেশ করে ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে জাদুঘরের ভেতরকার নিদর্শনগুলো দেখা যাবে। এ গ্যালারি প্রবর্তনে সহযোগিতা করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্প এবং অর্থায়ন করেছে সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড। মঙ্গলবার বিকেলে ভার্চুয়াল গ্যালারির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। জাদুঘর পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি শিল্পী হাশেম খানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান ও এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য জাদুঘরের চেয়ে আমাদের জাদুঘর আলাদা। কারণ, পৃথিবীর খুব কম দেশেরই হাজার বছরের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। আমাদের জাদুঘরে যেসব নিদর্শন রয়েছে তা সবই আমাদের নিজস্ব। এই ঐতিহ্য আমাদের আত্মবিশ্বাসী জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। বর্তমানে দেশে যে ধর্মান্ধতা বিরাজ সেটার পেছনেও নিজেদের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে না জানার অজ্ঞতা কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, জাদুঘরের ভার্চুয়াল গ্যালারি আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিনোদনমূলক সহজলভ্য ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ভার্চুয়াল গ্যালারি’ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি দেশী-বিদেশী জনগণের কাছে অনলাইনে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রাখবে। জাতীয় জাদুঘরের এই নতুন সংযোজন সামাজিক টেকসই উন্নয়নে নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। আশা করি, জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের সহযোগিতায় নির্মাণকৃত ভার্চুয়াল গ্যালারির সেবার মান উত্তরোত্তর আরও তথ্যনির্ভর ও আকর্ষণীয়ভাবে হালনাগাদ করে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে দেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলেন, তখন অনেকেই এটা নিয়ে রসিকতা করেছিলেন। আজকে সবাই স্বীকার করছেন, এটি আমাদের জীবনের বাস্তবতা। গ্রামগঞ্জের মানুষও স্কাইপ-ফেসবুকের মাধ্যমে বর্হিবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। জাতীয় জাদুঘরকে ভার্চুয়াল করার কথা অনেক আগেই বলেছিলাম। সরকারের সহযোগিতা নিয়ে সেই কাজ শুরু করেছি। আমরা দিনে দিনে এ ভার্চুয়াল গ্যালারিকে আরও উন্নত করে তুলবো। দেশের বাইরে যারা আছেন, তারাও আমাদের এই জাদুঘর দেখতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যবিষয়ক তথ্যসেবা অনলাইনের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে আধুনিক বিশ^মানের জাদুঘরের যাত্রায় একধাপ এগিয়ে গেল জাতীয় জাদুঘর। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই স্থায়ী প্রদর্শনীর অমূল্য নিদর্শনসমূহ খুব সহজে দিগন্ত পাড়ি দিয়ে দেশী-বিদেশী দর্শকদের আকৃষ্ট করবে এবং পরবর্তীতে সরেজমিনে জাতীয় জাদুঘর ভ্রমণে আগ্রহী করে তুলবে। সভাপতির বক্তব্যে হাশেম খান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আজ এক নতুন মাইলফলকে পদার্পণ করল। জীবনানন্দের কবিতা সন্ধ্যা ‘ঘাসের আঁচলে ফড়িংয়ের মতো’ বৈশাখী সন্ধ্যায় পাঠ করা হলো রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা। বাকশিল্পীর শিল্পিত উচ্চারণে প্রকৃতির আয়নায় হাজির হলো মানবসত্তা। জীবনানন্দের কবিতার সূত্র ধরে উঠে এলো বাংলার গ্রাম, মাঠ, নদী, রৌদ্র, আলো-ছায়া কিংবা সন্ধ্যার সৌন্দর্য। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে বসেছিল এই কবিতা সন্ধ্যা। জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিয়ে সাজানো প্রযোজনাটির শিরোনাম ছিল ‘ঘাসের আঁচলে ফড়িংয়ের মতো’। চারুকণ্ঠ আবৃত্তি সংসদ প্রযোজিত প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ছিলেন আনোয়ার পারভেজ।
×