ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের সন্দেহ

সাকুরা বারের মধ্যেই যুবদল নেতা জনি খুন হতে পারেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

সাকুরা বারের মধ্যেই যুবদল নেতা জনি খুন হতে পারেন

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ যুুবদলের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে রাজধানীর শাহবাগের পরীবাগ সাকুরা বারে যুবদল নেতা মোঃ জনি ওরফে বাবা জনি (২৯) হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার। তবে পুলিশের সন্দেহ, বারের ভেতরই এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। বারের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যুবদল নেতা জনির হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। নিহত জনির মোবাইল কললিস্ট নিয়ে পুলিশ তদন্তে চলছে। তবে পুলিশ দুদিনেও এই হত্যাকাণ্ডের কোন রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ এই হত্যাকা-ের ২১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে চারদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে নিহতের স্ত্রী মর্জিনা বাদী ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, দলীয় পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব, বারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আর্থিক লেনদেন ও ফুল ব্যবসাসহ নানা কারণ মাথায় নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জনকণ্ঠকে জানান, বিকেল ৩টার দিকে ৪৪ জনের মধ্যে ২১ জনকে আসামিকে চারদিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের অধিকাংশ বারের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, বারের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ওসি জানান, বেশ কয়েকজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি, শীঘ্রই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হবে। রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, বারের মালিকসহ আটক ৪৪ জনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে যাচাই-বাছাই করে সন্দেহভাজন ২১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ফুটেজ দেখে খুনীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। নিহতের স্ত্রী মর্জিনা জানান, রবিবার দুপুরে জনির মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। যিনি ফোন করেছিলেন তাকে জনি বলছিলেন, আমাকে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মারতে পারবে না। মর্জিনা অভিযোগ করেন, ২০১২ সালে রাজধানী ঢাকার শাহবাগে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন ফুল ব্যবসায়ী সেলিম। সেলিম হত্যা মামলায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনিকে আসামি করা হয়েছে। যারা জনিকে আসামি করেছে তারাই জনিকে খুন করেছে। এদিকে নিহত জনির পরিবার দাবি করছে, দলীয় পদকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহতের বড় ভাই নয়ন আহমেদ জানান, জনি মিরপুরের কল্যাণপুরে থাকত। সে শাহবাগ থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিল। মিজান নামের আরেকজন এ পদপ্রার্থী ছিল। এই পদপ্রার্থী নিয়ে জনি ও মিজানের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এরই জের ধরে জনিকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন। তবে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য রহস্য থাকতে পারে বলেও অভিমত দিয়েছেন নয়ন আহমেদ। তিনি জানান, সাকুরা বারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। নয়ন দাবি করেছেন, তার ভাই জনিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জনি শাহবাগে ফুলের ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। এবার তিনি যুবদলে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। এরই জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। সূত্রগুলো জানায়, রবিবার গভীর রাতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। ঠিক ওই সময় জনিসহ আরও তিনজন বার থেকে দৌড়ে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ওই তিনজন পালাতে পারলেও জনি ১৫-২০ জন যুবকের হাতে ধরা পড়ে। তারা জনিকে প্রচুর মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। সাকুরার কয়েকজন কর্মচারীকেও এ সময় জনিকে পেটাতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে গভীর রাতে সাকুরা বারের পেছন দিক থেকে জনিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের এলাকা থেকে সাকুরা বারের ম্যানেজার মোস্তফা কামাল এবং তার ছেলে ড. আশিফ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সিকিউরিটি গার্ডসহ ৪৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় রেখেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। ঘটনার পর থেকে সাকুরা বার বন্ধ রাখা হয়েছে। মার্কেটের নিচে মোতায়েন রাখা হয়েছে পুলিশ। এই মার্কেটে ৩২টি দোকান আছে। ঘটনার পর পুলিশ মার্কেটের দায়িত্বরত দুই সিকিউরিটি গার্ড মফিজ ও আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে। সাকুরার সিকিউরিটি গার্ড রতন, ওয়েটার মেহেরাজ রাজু, রহিম, বাবুর্চি মনিরকেও থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নিহতের বাবার নাম আবদুল কুদ্দুস। গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার দক্ষিণ রাজনগর গ্রামে। তিনি মিম (১৫) ও আয়েশা মনি (৭) নামে দুই মেয়ের জনক। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল জনি।
×