ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযান জোরদার হলেই জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা ভারতে পালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

অভিযান জোরদার হলেই জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা ভারতে পালাচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান জোরালো করা হলেই জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা সীমান্তের চোরাইপথে পালিয়ে চলে যাচ্ছে ভারতে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে চোরাইপথে পালিয়ে গিয়ে ভারতের তিন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়েছে এমন জঙ্গী ও সন্ত্রাসীর সংখ্যা সহস্রাধিক। ভারতে অনুপ্রবেশকারী জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), নব্য জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী (হুজি) ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। ভারতে অবস্থান করে সেখানে বসেই এসব জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, বাংলাদেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা যে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে সেই বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। ২০১৪ সালরে ভারতের বর্ধমান খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠন জেএমবির যোগসূত্র থাকার ঘটনা ফাঁস হয়। ২০১০ সাল থেকেই বাংলাদেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা সীমান্ত টপকিয়ে ভারতের ৩ রাজ্যে গিয়ে আত্মগোপন করেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্যাডার বলে পরিচিত অনেক সন্ত্রাসীও ভারতের বিভিন্ন রাজ্য অবস্থান করার বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা সীমান্তের চোরাইপথে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে এমন সংখ্যা প্রায় আট শত জন। ২০১৫ সালে তাদের সংখ্যা হবে প্রায় ৬৫৯ জন। ২০১৬ সালে তা বেড়ে গিয়ে প্রায় তিনগুণ সংখ্যক যা প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি হতে পারে। তবে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করার তৎপরতা চালাচ্ছেÑ এমন জঙ্গী ও সন্ত্রাসীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২৯০ জন হতে পারে। এসব জঙ্গী ও সন্ত্রাসীর সম্পর্কে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই তদন্ত করে দেখছে। তবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আবার সীমান্তের চোরাইপথে বাংলাদেশ-ভারত আসা-যাওয়ার মতো খবরও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, ভারতে গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর সেখানে অন্তত ৫৪ জন আটক হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই জঙ্গী সংগঠন জেএমবি। এছাড়া বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীও রয়েছে যারা বাংলাদেশে মোস্ট ওয়ান্টেডও রয়েছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা এতদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়ার মতো এলাকার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করলেও এখন ব্যবহার করছে আসাম ও ত্রীপুরা সীমান্তের চোরাইপথ। গত জুলাই মাসে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গীরা নিহত ও গ্রেফতার হতে থাকার প্রেক্ষাপটে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সংখ্যা এখন বাড়ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভারতে কত জন জঙ্গী ও সন্ত্রাসী পালিয়ে গেছে তার সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী নব্য জেএমবি প্রধান সালাউদ্দিন সালেহীন ভারতে আছে। গত এপ্রিলে জঙ্গী হামলায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সন্দেহভাজন হত্যাকারী শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ এবং গুলশান হামলায় সম্পৃক্ত রিপনও ভারতে পালিয়ে আছে। নব্য জেএমবির ২০ থেকে ২২ জন সদস্য এখনও সক্রিয় রয়েছে, যারা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতে আসা-যাওয়া করছে। এক স্থানে বেশিদিন অবস্থান করে না। নিরাপদে সীমান্তের এপার-ওপার করানোর জন্য তাদের দালাল বাহিনী রয়েছে। যারা ভারতে পালিয়ে যায় তারা মুসলিম নাম পরিবর্তন করে হিন্দু নামে পরিচয় দিচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা এ ধরনের তথ্য দিয়েছে বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের অবহিত করা হয়েছে। তারাও যে কোন সময় জেএমবি বা নব্য জেএমবির নেতৃত্বে এবং নতুন করে নাশকতা বা হামলার পরিকল্পনা করতে পারে। এ কারণে এ সক্রিয় সদস্যদের গ্রেফতারের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী পলাতক মাহফুজ ও আবু ইউসুফ, খালেদ, জুনায়েদ, রিপন সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। তবে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী বাহিনীর অভিযানের মুখে জঙ্গীগোষ্ঠীর ভারতে পালানোর প্রবণতা একটি স্বাভাবিক ঘটনা হবে সেটা অনুমান করা যায় বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তার দাবি।
×