ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ শতাংশ ভ্যাট জুলাই থেকে কার্যকর

সঞ্চয়পত্রের ুদ হার কমছে না ॥ বাজেটের আকার ৪ লাখ ৭শ’ কোটি হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

সঞ্চয়পত্রের ুদ হার কমছে না ॥ বাজেটের আকার ৪ লাখ ৭শ’ কোটি হতে পারে

এম শাহজাহান ॥ দারিদ্র্য বিমোচন, দক্ষতা উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রাকে আরও বেগমান করতে বাড়ছে বাজেটের আকার। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৪ লাখ ৩শ’ থেকে ৭০০ কোটি টাকা। নতুন বাজেট ঘোষণার পরের মাস অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট রাখার পক্ষে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ কারণে নতুন বাজেটে করের বোঝা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের শেষ মেয়াদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কর ও ভ্যাট ‘রিলাক্স’ পাবেন দেশের নাগরিকরা। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে করুণীয় নির্ধারণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বৈদেশিক ঋণ এবং অনুদানের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ থাকবে নতুন বাজেটে। সঞ্চয় উৎসাহিত এবং পেনশনারদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আপাতত সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানো হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম সহনীয় রাখতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হবে সাড়ে ৭ শতাংশ। আগামী বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ঘাটতি রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। আপাতত জ্বালানি তেলের দাম কমানোর চিন্তা-ভাবনা নেই। এছাড়া পদ্মা সেতুসহ অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে বিদ্যুত উৎপাদন এবং রাস্তাঘাট নির্মাণ, পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিকায়ন এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে। এছাড়া এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যথারীতি বেশি বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আগামী বাজেটে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার পদক্ষেপ থাকবে। বর্তমান বাজেটে এই ভর্তুকি রয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এদিকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে টেলিলক, এ্যাসেলশিয়াল ড্রাগস, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ এবং পাওয়ার ডেভলপমেন্ট বোর্ডসহ (পিডিবি) সরকারী ২৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে জনশক্তি রফতানির বাড়ানোর পদক্ষেপ থাকছে। রেমিটেন্স বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী কালো টাকা সাদা করার যথারীতি সুযোগ থাকছে এবং অর্থ পাচাররোধে মানি লন্ডারিং আইন বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে। নতুন বাজেটে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন বহুল আলোচিত ভ্যাট আইন-২০১২ আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৫ শতাংশ ভ্যাট রাখার পক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তিতায় এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়ার কারণে ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হতে পারেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং এটি বাস্তবায়ন হলে ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারবেন। পুরো জিনিসটি না বুঝে তারা আন্দোলন করেছেন। জোর দেয়া হবে দারিদ্র্য বিমোচন দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে ছোট থেকে বড়, ধনী থেকে গরিবসহ দেশের সবাইকে ভাল রাখার প্রয়াস থাকবে নতুন বাজেটে। পুরোপুরি দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে ব্যাপকভিত্তিতে শিল্পায়নের বিকাশ ঘটানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে চলতি বাজেটের চেয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে আগামী চার বছরের মধ্যে দেশের প্রায় সব গরিব মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচীর আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে- দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। অতিদরিদ্রতা দূর করা এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাত। দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচীকে আরও গতিশীল ও কার্যকরী করতে সামাজিক নিরাপত্তায় ১৪৫টি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা কার্যক্রম, প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রম, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কর্মসূচী, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা কার্যক্রম, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কার্যক্রম, ভিজিডি কার্যক্রমে বরাদ্দ বাড়ানোর আভাস পাওয়া পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চার বছরের মধ্যেই দেশ থেকে অতি দরিদ্রতা দূর হবে। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে বাজেট বরাদ্দ এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন বছরের বাজেটের আকার এবারের তুলনায় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি হচ্ছে। আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হবে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করব্যবস্থা থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হলেও নেয়া হয়েছে খুবই কম। উল্টো সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে। সঞ্চয়পত্র থেকে অধিক অর্থায়ন হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ কম নিতে হয়েছে। নতুন অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে বড় অঙ্কের অর্থায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে সঞ্চয়পত্রের ওপর উৎসাহ বাড়ানো হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত সেই চিন্তা-ভাবনা থেকে সরে আসছে সরকার। ঘাটতি বাড়ছে আসছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি হবে মোট ডিজিপির ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি রয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী বছর তা ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। সচিবালয়ে সম্প্রতি বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী মুহিত জানান, এবারে বাজেট ঘাটতি আমরা বেশি রাখছি। বাজেট ঘাটতি ৫ দশমিক ৪ হতে পারে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে অধিকাংশ আমদানি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক ও ট্যারিফ ভ্যালু তুলে দেয়া হতে পারে। আগামী ১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন।
×