ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাইরেটেড সফটওয়্যারের ভয়াল থাবা ২

মূল্যবান ফাইল নষ্ট বা চুরি হওয়ার বিরাট ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

মূল্যবান ফাইল নষ্ট বা চুরি হওয়ার বিরাট ঝুঁকি

ওয়াজেদ হীরা ॥ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রার পেছনে তথ্য প্রযুক্তির রয়েছে বড় ভূমিকা। সকল কর্মকা-ে এখন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। প্রযুক্তিগত ব্যবহার বাড়লেও আর্থিক বিবেচনা আর অসচেতনতার কারণে অধিকাংশ মানুষ ভুল পথে এগোচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এখনই সচেতনতা আর সমাধান প্রয়োজন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধমান প্রযুক্তির বাজারের অন্যতম ঝুঁঁকি হিসেবে দায়ী করা হয় পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার। যা ভয়াবহভাবে থাবা বসিয়েছে প্রত্যেকটি অংশে। ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সর্বত্রই যেন চুরি করা সফটওয়্যারের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দিন দিন বেড়েছে পাইরেটেড সফটওয়্যারের বাজার। প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন অনিয়ন্ত্রিত এই অতি মাত্রার ব্যবহারের ফলাফল খুবই ভয়াবহ হতে পারে। গত পাঁচ বছর আগে যেখানে হ্যাকিং নিয়ে চিন্তা ছিল কম। আর বর্তমানে অতি মাত্রার পাইরেডেট সফটওয়্যার ব্যবহার আর বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়ন এই হ্যাকিংয়ের আশঙ্কাও কয়েক গুণ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা। বাংলাদেশে কি পরিমাণ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে তার ধারণা দিতে পারেনি দেশীয় কোন সংস্থা। তবে আন্তর্জাতিক সার্ভের আলোকে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য যে বার্তা দিচ্ছে তা আগামীর উন্নয়নের বাংলাদেশের জন্য ভাল বার্তা তো নয়ই বরং আশঙ্কাজনক। বিজনেস সফটওয়্যার এ্যালায়েন্স (বিএসএ) পরিচালিত গ্লোবাল সফটওয়্যার সার্ভের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার হয়েছে ২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের। সার্ভের রিপোর্টটি ২০১৬ সালে প্রকাশ করা হয়। এই রিপোর্ট লেখার সময় নতুন কোন তথ্য প্রকাশ হয়নি। প্রকাশিত ওই রিপোর্ট অনুসারে যে পরিমাণ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার হয়েছে টাকার হিসেবে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ওপরে। এর আগে ২০১৪ সালে এ অংক ছিল ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকারও বেশি। ২০১৩ সালে দেশে পাইরেটেড সফটওয়্যারের বাজার পরিধি ছিল ১৪ কোটি ৭০ লাখ বা ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা প্রায়। প্রকাশিত তথ্য জানাচ্ছে প্রতিবছরই বাংলাদেশে বাড়ছে পাইরেটেড সফটওয়্যারের বাজার। যার মানে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশে সফটওয়্যারের চাহিদা আছে তবে শুরু থেকেই পাইরেটেড ব্যবহারে অভ্যস্থ হওয়ার কারণে এবং তা সহজলভ্যতার জন্য মানুষ ঝুঁকছে পাইরেটেড সফটওয়্যারের দিকেই। শুধু যে পাইরেটেড সফটওয়্যারের বাজার বাড়ছে তাই নয় সেই সঙ্গে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের নানা ঝুঁকিও। কেননা, প্রযুক্তিবিদরা জানিয়েছেন, পাইরেটেড সফটওয়্যারে নেই আপডেটের সুবিধা। ফলে মূল্যবান ফাইল লাষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে তথ্য চুরি হতেও সময়ের বিষয় মাত্র। আর কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলে তার লেনদেনে থাকছে নানা রকম ঝুঁকি। প্রযুক্তিবিদরাও জানান, দেশে পাইরেটেড সফটওয়্যারের বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর যত বেশি বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে প্রযুক্তিতে নানা সমস্যার আশঙ্কাও থাকছে সে দিকে দৃষ্টি দেয়ার এখনই সময় বলেও জানান অনেকে। আগারগাঁও আইডিবি ভবনের ড্যাফোডিল কম্পিউটার লিমিটেড, সাইবার কমিউনিকেশন, মাল্টি লিঙ্ক, ইউনিভার্সাল সিস্টেমসসহ প্রায় সব দোকানেই কম্পিউটারের সঙ্গে পাইরেটেড কপিই দেয়া হয়। দ্বিতীয় তলায় বাই এন্ড উইন দোকানে সিডি, ডিভিডির বেশির ভাগই পাইরেটেড আর মানুষ জেনে শুনেই তা কিনে নিচ্ছে। দোকানের কর্মীও জানালেন এখানে লুকোচুরির কিছুই নেই, সবই হয় প্রকাশ্যে। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি মাহবুব জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টা উদ্বেগজনক। তবে বর্তমানে পাইরেটেড ব্যবহার কমছে বলে আমি মনে করি। কেননা যারা এটি ব্যবহার করে তারা জানে এটা বিপজ্জনক আর এটি দিয়ে সব কাজ করাও যায় না।’ তবে এর জন্য অধিক প্রচার এবং সচেতনতা আনতে সরকারকে কাজ করার আহ্বানও জানান তিনি। বাংলাদেশের সরকারী-বসরকারী বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে হরহামেশাই ব্যবহার হচ্ছে পাইরেটেড সফটওয়্যার। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, পাইরেটেড ব্যবহার এটা তেমন কিছুই নয়! অন্যায়ও নয়! অনেকটা অজ্ঞতার কারণে আবার কোন কোন সময় কিছু অর্থ বাঁচানোর জন্যই এর ব্যবহার। পাইরেডেট সফটওয়্যার ব্যবহারকে সরাসরি ‘চুরি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. অধ্যাপক সোহেল রহমান জনকণ্ঠকে জানান, ‘মানুষকে আগে এই সচেতনতা তৈরি করতে হবে যে এটা চুরি করছি। আর চুরি করা খারাপ সেটা সবাই বুঝে।’ আগে সচেতনতা এর পর আইনের প্রয়োগ খুবই প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। ব্যক্তিগত ল্যাপটপ নষ্ট হওয়াতে তা দেখানোর জন্য নিয়ে বেসরকারী চাকরিজীবী হাসনাত জামিল আসেন মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে। সেখানে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ল্যাপটপে কোন কাজই তিনি করেন না। তার বাচ্চা শুধু গেমস খেলেন। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ল্যাপটপে নতুন উইন্ডোজ দিলেন। এক ফাঁকে তিনি জানালেন, বাচ্চাদের এই গেমসের সফটওয়্যারগুলো বেশ দাম থাকে। অনেকেই বাজার থেকে অল্প দামের ডিভিডি কিনে নেন। পরবর্তীতে তা কম্পিউটার বা ল্যাপটপে বড় সমস্যা ধারণ করে। জানা গেছে, বিশ্বের অন্যসব অঞ্চলের তুলনায় পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি এশিয়া-প্যাসিফিকে। এখানে প্রতিবছর গড়ে ৬১ শতাংশ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। অন্যদিকে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রবণতার দিক থেকে এ অঞ্চলে শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। দেশে ব্যবহৃত পিসিগুলোয় ইন্সটল করা সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে ৮৬ শতাংশই পাইরেটেড। বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নানাভাবে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। তবে এর বড় অসুবিধা হলো আপডেট না থাকা। পাইরেটেড ব্যবহার করলে আপডেট পাবে না এটাই স্বাভাবিক। আর তখন থেকেই নানা সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। রাজধানীর একাধিক কম্পিউটার মার্কেটে খোঁজ নিতে গেলে একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ব্যক্তিরা জানালেন বিভিন্ন সময় চটের বস্তায় বা অল্প হলে শপিং ব্যাগে করে নিয়ে আসে এই সফটওয়্যারের সিডি ডিভিডিগুলো। কারা দিয়ে যায় আর কখনই বা আসে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি কোন দোকানদার। এরই মধ্যে ৯ এপ্রিল এলিফ্যান্ড রোডে শপিং ভর্তি ডিভিডি দেখে দোকানদার পরিচয়ে জানতে চাওয়া হয় দাম। যুবকটি জানান, একেকটি একেক রকম দাম। কোথা থেকে এই সিডি ডিভিডি পাওয়া যায় জানতে চাইলে বলেন কোন সময় গুলিস্তান আবার কখনও বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জ। কারা দেয় সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেনি। মাঝে মধ্যে ফোন করে ‘মাল ডেলিভারি’ দেয় বলে জানান যুবকটি। কেন পাইরেটেড কপি বিক্রি করেন জবাবে বলেন, ‘পাইরেটেড কি? আমি ব্যবসা করি লাভ হয়। যখন এই ব্যবসা ভাল যায় না আমি কাম করি।’ পাইরেটেড সফটওয়্যার বিক্রি করছে অথচ নিজেও জানে না এটা অন্যায়। সে লাভের আশায় ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে কাজটিকে। আর মানুষের মধ্যেও নেই সচেতনতাবোধ। সাধারণ মানুষও বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে অল্প কিছু অর্থ বাঁচাতে ৪০-৫০ বা ১০০ টাকার সিডি ডিভিডির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। আর শিক্ষিত মানুষের এই অসচেতনাকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর সংঘবদ্ধ চোর অন্যের স্বত্বকে চুরি করে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। প্রতিনিয়তই এই ব্যবসাটা হচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশে এই ব্যবসাটা চলমান। গাজীপুরের কম্পিউটার ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম ঢাকা থেকে কম্পিটারের যন্ত্রাংশ কেনার পাশাপাশি কিছু প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের কপি কিনলেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ‘আমরা এই সফটওয়্যারগুলো রাখতে চাই না। কিন্তু এসব সফটওয়্যারের সিডির জন্য আমার অনেক কাস্টমার হাত ছাড়া হয়ে যায়। যে শুধু সিডি ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ক্রয় করে। যখন এসকল সিডি/ডিভিডি না পায় অন্য দোকানে চলে যায়। আর দামও কম।’ রাজধানীর বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, পছন্দসই সফটওয়্যার কেনার উদ্দেশে ক্রেতাদের ভিড় আছে তবে সেটা ওরিজিনাল সফটওয়্যার কেনার উদ্দেশ্যে নয়। দোকাদারদের নীরব উত্তর, প্রকৃত সংস্করণ কেউ কেনেন না। তাই পাইরেটেড সংস্করণই বিক্রি করতে হয় তাদের। ব্যবসায়ী ওয়াদুদ খালেক জানান, দেশের সফটওয়্যার বিজয় তিন শ’ টাকা দিয়ে কেনতে দর কষাকষি করে। দশ বারো হাজার টাকা কে খরচ করবে। তবে কেউ অরিজিনাল চাইলে আমরা দেই। জানা গেছে, এ্যাডোবি সফটওয়্যার বা বিভিন্ন গেমসের আসল সফটওয়্যার পেতে হলে টাকা যেমন বেশি খরচ হয় একটু ঝামেলাও বেশি হয়। বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, মাইক্রোসফটের অনেক সফটওয়্যার পাওয়া গেলেও ওই সব পাওয়া যায় না। যা পেতে হলে অনলাইনের মাধ্যমে মাস্টার কার্ড দিয়ে কিনতে হয়। অনেকে ঝামেলা এড়াতে ও খরচ বাঁচাতে ঝুঁকে পরে পাইরেটেড কপির দিকেই। প্রযুক্তি যত প্রসার হচ্ছে সেই সঙ্গে দেশে পাইরেটেড কপির বাজার বাড়ছে। এই কারণে তথ্য চুরি বা হারানোসহ আর্থিক ঝুঁকি যেমন থাকছে সেই সঙ্গে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আর এ কারণে লোকসানে পড়ছেন মূলধারার ব্যবসায়ীরাও। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার জনকণ্ঠের এ প্রতিবেদককে বলেন, সফটওয়্যার পাইরেসি এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়েই রয়েছে। পাইরেসি বন্ধে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। যদিও এটি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি মনে করেন, নিজস্ব সফটওয়্যারের কপিরাইট সংরক্ষণের বিষয়ে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে পাশাপাশি সরকারেরও উচিত পাইরেসির বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নেয়া। যদিও পাইরেসি বন্ধের আইন আছে দেশে। তবে সে আইনের প্রয়োগ নিয়ে রয়েছে নানা কথা। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার কপিরাইট আইন করে। ২০০৫ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। আইন অনুযায়ী, নাটক, সাহিত্য, অডিও-ভিডিও, চলচ্চিত্র, ফটোগ্রাফি, ভাস্কর্য ও সম্প্রচার কর্মের স্বত্ব নির্মাতা বা প্রণেতার মৃত্যুর ৬০ বছর পর্যন্ত বহাল থাকে। এ সময়ের মধ্যে কেউ কারও সৃষ্টিকর্ম নকল বা বিকৃত করলে পাইরেসি আইনের ৮২ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদ- ও ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া চলচ্চিত্রে পাইরেসির ক্ষেত্রে কারাদ-ের মেয়াদ পাঁচ বছর ও অর্থদ- ৫ লাখ টাকা। এছাড়াও ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নামে আইন করে সরকার। আইনটি ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। তবে আইনের আগে সবার মধ্যে সচেতনতার কথা বলেছেন বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক সোহেল রহমান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মানুষকে বুঝাতে হবে এটা। এর জন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে। প্রচারও বেশি প্রয়োজন। এর পর আইনের প্রয়োগ হলে ফলাফল ভাল আসবে। একজন মানুষ যখন জানলোই না তখন তার ওপর আইন প্রয়োগ কোন কাজে আসবে না।’ পাইরেটেড সফটওয়্যার বা এর উচ্চবাজার নিয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধিন সংস্থা কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ (সিসিএ) নিয়ন্ত্রক আবুল মানসুর মোহাম্মদ র্সাফ উদ্দিন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দেশ অত ধনী হয়নি। এখন যে অপারেটিং সিস্টেমের উইন্ডোজ যে আছে তা যদি এখন বন্ধ করে দেয়। আর পাইরেটেড গ্রহণ করা হবে না, তখন কিন্তু দেশ পিছিয়ে যাবে। তাহলে এখন যে কাজগুলো হচ্ছে তা বাধাগ্রস্ত হবে। আসলে সরকার হয়ত এখনই চায় না। তবে একসময় হয়ত করবে বলেও মনে করেন তিনি। পাইরেসি বিষয়টি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দেখে থাকে জানিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে ভবিষ্যতে সুফল আসবে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে, শিল্পী-লেখক ও ভোক্তাদের সচেতনতার অভাবেই সরকার কপিরাইট আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আন্তর্জাতিক কপিরাইট দিবসের অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও দক্ষ লোকবলের অভাব, অপর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং আইনগত নানা জটিলতায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কপিরাইট অফিসটি ধুকছে। কপিরাইটের বিষয়টি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হলেও অনলাইন তথা সাইবার সংক্রান্ত সবকিছুই প্রযুক্তি বিভাগের অধিন। আর প্রযুক্তিবিদরা জানিয়েছেন, পাইরেটেড সফটওয়্যার তথ্য এর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এই বিভাগকেই সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে কোন মন্ত্রণালয় বা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে বলেও মত দিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা। আইসিটি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের স্বার্থেই একটু মনিটরিং বাড়ানো দরকার। কেন মানুষ আসল সফটওয়্যার কেনে না তার সমস্যা নিরুপণ এবং সমাধান করা প্রয়োজন। আর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইরেটেড সফটওয়্যারের বাজার চাহিদা যে হারে বেড়েছে তা হঠাৎই বন্ধ করা যাবে না, এ জন্য পরিকল্পিতভাবে এবং একটু সময় নিয়ে সমাধান করার মত দিয়েছেন তারা।
×