ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস দমনে মস্কো

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

সন্ত্রাস দমনে মস্কো

সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগ একটি ইতিবাচক ও স্বীকৃত পন্থা। সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার সদিচ্ছা ব্যক্ত করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশের এই অবস্থানের কথা সম্প্রতি তুলে ধরেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যুসহ সন্ত্রাসবাদ দমনে ঢাকা-মস্কোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিকর ও সন্তোষজনক। রাশিয়া আমাদের পুরনো মিত্র। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের রয়েছে সহযোগিতামূলক প্রশংসনীয় ভূমিকা। বৈঠকে জাতিসংঘ ও এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পারস্পরিক সমন্বয় এবং যোগাযোগ বজায় রাখতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়টি ওই আলোচনায় উঠে আসে। ধরিত্রী বিপন্ন বটে নানা কারণে, সন্ত্রাসকবলিত হয়ে পড়ছে বিশ্বের অনেক এলাকা। তবু আশার জায়গা সম্পূর্ণরূপে উবে যায়নি। কারণ মানুষ মূলত সন্ত্রাসবিরোধী। মানুষ এমন কোন কর্মকা- পছন্দ করে না যা মানুষের মানবিকতাকে আহত করে, মানুষকে সীমাবদ্ধ ও সঙ্কুুচিত হতে বাধ্য করে। আন্তর্জাতিক ম-লে চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাই, সন্ত্রাসের হুঙ্কার তবু থামছে না। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউসে হামলা চালানোর হুমকি বহাল রেখেছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গীরা। জবাবে দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছিলেন জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদাকে নিষ্ক্রিয় করতে যতটুকু সময় লেগেছে, তার চেয়ে দ্রুততম সময়ে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্র। বাস্তবে সেটা হয়নি। কিছুকাল আগে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের বাইরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বিশ্ব নেতাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডন নগরে জঙ্গী হামলার পর আমেরিকান সরকার নড়েচড়ে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরসহ গুরত্বপূর্ণ স্থাপনায় জারি করা হয়েছে সতর্কাবস্থা। নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতর, ব্রিটিশ হাইকমিশন, গ্র্যান্ড সেন্টার টার্মিনালে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। এতে বোঝা যায় সন্ত্রাস কী ভীষণ এক উৎকণ্ঠিত সময় সমরশক্তিতে বলীয়ান খোদ আমেরিকারই সামনে হাজির করেছে। ইসরাইল, ফ্রান্স ও জাপানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা বেশিÑ এমন বক্তব্য খোদ সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের চার্লসটনে কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায় ঢুকে গুলি করে নয়জনকে হত্যাকা-ের পরিপ্রেক্ষিতে এক টুইটার বার্তায় আমেরিকায় বন্দুক হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন তিনি। সে সময় টুইটার এ্যাকাউন্টে প্রকাশিত ওবামার পোস্টে বলা হয়, মাথাপিছু জনসংখ্যার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ২৯৭ জনকে হত্যা করা হয়। যা জাপান, ফ্রান্স ও ইসরাইলের চেয়ে বেশি। নিকট অতীতে দফায় দফায় প্যারিসে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি সতর্কাবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষুদ্র বা বৃহৎÑ যে পর্যায়েই সন্ত্রাস পরিচালিত হোক না কেন তার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হয় সাধারণ মানুষকেই। মানুষ জীবন পায় একবারের জন্যই, সেই জীবন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে অকালে যাতে ঝরে না যায় বিশ্ববাসীর সেটাই প্রত্যাশা। সন্ত্রাসবাদ মানবতার শত্রু হিসেবেই শনাক্ত হয়। বিশ্বের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সব সময়েই সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে। বিশ্ব নেতাদের কর্তব্য হচ্ছে এই গ্রহ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য সম্মিলিতভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। এ লক্ষ্যে এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অপর রাষ্ট্রের সুসম্পর্ক বজায় এবং সন্ত্রাস দমনে যৌথ উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশকে নিশ্চয়ই পাশে পাবে মস্কো। তবে সাম্প্রতিককালে মস্কোর নতুন মিত্ররূপে আবির্ভূত হয়েছে সন্ত্রাসবাদের স্বর্গ পাকিস্তান। এ বিষয়ে মস্কোর অবস্থান অবশ্যই পরিষ্কার হওয়া দরকার।
×