ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জুলহাজ ও তনয় হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

জুলহাজ ও তনয় হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ আজ রাজধানীর কলাবাগানে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির খালাত ভাই, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা ও ইউএসআইডিতে কর্মরত থাকা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যার এক বছর। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের একটি সিøপার সেল হত্যাকা-টি ঘটায়। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পুরস্কার ঘোষিত দুই জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শিহাব হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিল। অপরজন রশিদুন্নবী। এছাড়া গ্রেফতারকৃত জঙ্গী সবুর হত্যাকা-ের বিষয়টি আগ থেকেই জানত। হত্যায় জড়িত আরও পাঁচ জঙ্গীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জড়িত পলাতক জঙ্গীদের সাংগঠনিক নাম জানা গেলেও প্রকৃত নাম-ঠিকানা জানা যায়নি। তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত বছরের ২৫ এপ্রিল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ৩৫ নম্বর লেক সার্কাস কলাবাগানের সাত তলা আছিয়া নিবাসের দোতলায় ডাঃ দীপু মনির খালাত ভাই জুলহাজ মান্নান (৪২) ও তার বন্ধু তনয়কে (৩২) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে জঙ্গীরা। জুলহাজ মান্নান সমকামীদের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। তিনি রূপবান নামের একটি সাময়িকী সম্পাদনা করতেন। সাময়িকীটিতে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে লেখালেখি প্রকাশিত হতো। আর জুলহাজের বন্ধু তনয় পিটিএ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে শিশু নাট্য প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। হত্যাকা-ের পর বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লা জানিয়েছিলেন, ওই দিন চার যুবক একই ধরনের পোশাক ও পিঠে ব্যাগ নিয়ে বাড়িটির গেটে আসে। তাদের দুই জনের হাতে পার্সেলের প্যাকেট ছিল। তারা কুরিয়ার সার্ভিসের লোক পরিচয়ে ভেতরে ঢোকে। কলিং বেল দেয়ার পর বেরিয়ে আসা মাত্র চারজন জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে দ্রুত বেরিয়ে যায়। ঘটনার সময় একজন গেটে চাপাতি ও পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। যাওয়ার সময় আনোয়ার হোসেন লিংকন নামের এক কলেজ ছাত্র পিছু নিলে তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। এরপর ডলফিন গলিতে পুলিশের সঙ্গে হত্যাকারীদের গোলাগুলি হয়। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা মমতাজ আহত হন। পুলিশ হত্যাকারীদের একটি ব্যাগ কেড়ে রাখতে সক্ষম হয়। তবে যার কাছ থেকে ব্যাগ রাখতে সক্ষম হয়, তাকে আটক রাখতে পারেনি। পুলিশকে গুলি করে ওই হত্যাকারী পালিয়ে যায়। সেই ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল, চাপাতি, গামছা ও লুঙ্গি ছিল। মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনসহ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকা-ের ঘটনায় গত বছরের ১৫ জুন গ্রেফতার হয় পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত জঙ্গী সুমন হোসেন ওরফে শাকিব ওরফে শিহাব ওরফে সাইফুল। শিহাব আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে কলাবাগানে জোড়া খুন ছাড়াও ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকসহ বহু হত্যাকা- সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পায়। শিহাবের তথ্য মোতাবেক কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটায় নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি সিøপার সেল জঙ্গী সংগঠনটির শরীয়াহ্ বোর্ডের সদস্য ও সামরিক বিভাগের প্রধান সেনাবাহিনীতে ক্যু করার চেষ্টার অপরাধে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া সারাদেশ থেকে প্রশিক্ষিত জঙ্গীদের নিয়ে সিøপার সেল গঠন করে। সেই সেলের সদস্যদের পাঠানো হয় ঢাকায় শিহাবের কাছে। শিহাব মেজর জিয়ার বিশ্বস্ত। শিহাবের প্রধান কাজ অপারেশনে অংশ নেয়া সিøপার সেলের জন্য বাড়ি ভাড়া করা এবং তাদের কাছে অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহ করা। শিহাবের (৩৬) বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। সে এসএসসি পাস। এরপর তাকে পরিবার মাদ্রাসায় ভর্তি করে। মৌলভীবাজারের একটি মাদ্রাসায় পড়ার সময় মাদ্রাসাটির এক শিক্ষকের মাধ্যমে উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী হয় শিহাব। ’৯৮ সালে উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে ২০০০ সালে হুজিতে যোগ দেয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত হুজিতেই ছিল। ’১৫ সালে ওই শিক্ষকের কথামতো আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেয়। দলের নির্দেশে শিহাব সীমান্ত এলাকায় তৈরি এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহ করে দলের সিøপার সেলের কাছে সরবরাহ করে। কলাবাগানের হত্যাকা-ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় দুই মাস আগে। মেজর জিয়ার নির্দেশে শিহাব হত্যাকারীদের বাড়ি ভাড়া করে দেয় কলাবাগানেই। হত্যাকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে জুলহাজ মান্নানের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে থাকে। কয়েক দফায় বাড়িটি রেকি করে। এরপর শিহাব হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র হত্যাকারীদের কাছে সরবরাহ করে। সীমান্তবর্তী এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে। এরপর তা ঢাকায় এনে হত্যাকারীদের হাতে তুলে দেয়। হত্যাকারীদের চূড়ান্ত ট্রেনিং হয় কলাবাগানের সেই বাড়িতেই। কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় রশিদুন্নবী নামে আরেকজন গ্রেফতার হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় শিহাব ও রশিদুন্নবী নামে দুজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে। তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এছাড়া হত্যাকা-ে জড়িতদের মধ্যে আরও ৪-৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
×