ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ প্রসবজনিত সমস্যা নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় গত চার দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছে তারাকান্দা উপজেলার মানিকদী গ্রামের গৃহবধূ আসমা নবজাতককে রাখা হয়েছে হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে। আসমার মাথার ওপরে বিমে, ছাদে, পাশের কলামে ও মেঝেতে মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে। নবজাতকের দুশ্চিন্তার সঙ্গে সারাক্ষণ এ ফাটলের আতঙ্কে উদ্বিগ্ন গ্রাম থেকে আসা গৃহবধূ আসমা। আসমা বলেন, ‘খুব ডর করে। না জানি কখন ভাইঙ্গা পইড়া যায়। গত রাইতের ঝড় তুফানের সময় ডরে ঘুমাইতে পারি নাই’। হাসপাতালের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভেতরে ও বাইরের বারান্দায় থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের এমন আতঙ্কের মধ্যেই চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চারতলা পুরনো ভবনের ২টি ব্লকের ৮টি ওয়ার্ডের গাইনি, মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের অন্তত ১ হাজার ৫০০ রোগী রয়েছে এমন আতঙ্কে। এ ২টি ব্লকের ৮টি ওয়ার্ডের বারান্দা ও ওয়ার্ডের ভেতরের বিম, কলাম ও ছাদে মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এ ২টি ব্লকের ৮টি ওয়ার্ডে যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষীয় সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চারতলা ভবনের আলাদা ৫টি ব্লকের ২০টি ওয়ার্ডে দেয়া হয় রোগীদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। এর বাইরে হাসপাতালের ওপারেশন থিয়েটার, প্রশাসনিক করিডোর, কেবিন ও ল্যাবসহ হাসপাতালের অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য রয়েছে একই সময়ে নির্মিত আলাদা ব্লক। পাঁচ দশকের পুরনো এসব ভবনের মধ্যে প্রথম ফাটল দেখা দেয় ১, ১০, ১২ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ব্লকে। এ সময় রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে গণপূর্ত বিভাগ রিট্রোফিট (শক্তিশালীকরণ) পদ্ধতিতে এ ব্লকের মেরামত কাজসম্পন্ন করার পর রোগীদের আবার এ ব্লকে ফিরিয়ে আনা হয়। এরই মধ্যে রাতারাতি আরও ৩টি ব্লকের ১২টি ওয়ার্ডের ভেতরে বাইরে মারাত্মক ফাটল দেখা দেয়ায় রোগীদের সরিয়ে নেয়া হয়। বর্তমানে ১টি ব্লকের ৪, ৭, ১৪ ও ১৭ নম্বর এ ৪টি ওয়ার্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাকি ২টি ব্লকের ৮টি ওয়ার্ডের রিট্রোফিট কাজ করছে গণপূর্ত বিভাগ। স্থান সংকুলান না হওয়ায় সরিয়ে নেয়া এসব অনেক রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন বারান্দায়। সূত্র আরও জানায়, প্রথমে যে ব্লকের মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছিল, ওই সময়ে হাসপাতালের ২, ১১, ১২ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৩, ৮, ১৩ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলাদা ২টি ব্লককেও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত বিভাগ। মেরামত কাজে ওই সময়ে প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্ত এ সময় হঠাৎ অন্য ২টি ব্লকের ৮টি ওয়ার্ডে মারাত্মক ফাটল দেখা দেয়ায় রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ওই বরাদ্দ কেটে নিয়ে ৫, ৬, ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১, ১১, ১০ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের রিট্রোফিট কাজ শুরু করা হয়। ফলে ঝুঁকি ঘোষিত ২ ব্লকের ৮টি ওয়ার্ডের রোগীরা এখনও ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। হাসপাতালের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪ বিছানার বিপরীতে শনিবার ভর্তি ছিল ১৫২ রোগী। এর বাইরে বারান্দার রোগী তো আছেই। প্রতিটি ওয়ার্ডেই ধারণক্ষমতার অন্তত ৩ গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকছে প্রতিদিন। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার ফাটলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, হঠাৎ কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এসব রোগীদের সরিয়ে নেয়ার মতো জায়গা এ মুহূর্তে হাসপাতালে নেই। প্রয়োজনীয় মেরামত কাজের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে জরুরী পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান সহকারী পরিচালক। গণপূর্ত বিভাগের স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম কামরুজ্জামান শনিবার জানান, হাসপাতালের ২, ১১, ১২ ও ১৯ নম্বর এবং ৩, ৮, ১৩ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডকে এর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ২টি ব্লকের কাজের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬ কোটি ব্যয়ে ১টি ব্লকের কাজ শেষ করা হয়েছে। আগামী মে মাসের মধ্যে আরও ১টি ব্লকের কাজ শেষ করা হবে। পরিত্যক্ত অপর ১টি ব্লকের কাজ প্রক্রিয়াধীন বলে জানান এ প্রকৌশলী।
×