ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লুটপাটের পরিকল্পিত আয়োজন

ভালো সড়ক মেরামতে ১৯ কোটি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

ভালো সড়ক মেরামতে ১৯ কোটি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মহাসড়ক অক্ষত। খানাখন্দ, ভাঙ্গা নেই কোথাও। সড়কের বেশিরভাগ এলাকা রক্ষিত। ওই সড়কের আস্তরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সওজ বিভাগের অক্ষত সড়কের উন্নয়ন ব্যয় ১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের বরাদ্দ এনে বেশিরভাগ টাকা আত্মসাতের জন্য পরিকল্পিতভাবে আয়োজনে নেমেছে সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, সম্পূর্ণ অক্ষত সত্ত্বেও চকরিয়া হারবাং ইনানী রিসোর্টের সামনে প্রকল্পটি দেখানো হয়েছে। চকরিয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে ১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে চলমান কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার অক্ষত সড়ক উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ তুলেছেন, সড়ক বিভাগের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে অক্ষত মহাসড়ক উন্নয়নের নামে বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা জুন ক্লোজিংয়ের আগেই ভাগ-বাটোয়ারা করতে লুটপাটের মহোৎসবে নেমেছে। জনপ্রতিনিধিরা বলেন, অক্ষত মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার এলাকায় ‘ওভারলে’ (আস্তরণ) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নামে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও উল্লিখিত অংশে কোন খানাখন্দের চিহ্ন নেই। তারপরও এ বিশাল অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দেয়ার ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সরজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তা কেউই চলমান উন্নয়নকাজের দেখভালে নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে সড়ক বিভাগের এক কার্যসহকারী সার্বক্ষণিক কাজের তদরকি করছেন। ফলে সিনিয়র কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছামতো যেনতেনভাবে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অক্ষত সড়কের উপরিভাগে সিডিউলবহির্ভূত নিম্নমানের বিটুমিন মিশিয়ে তার ওপর প্রতি বর্গফুটে যে পরিমাণ খোয়ার মিশ্রণে ওভারলের কাজ করার কথা রয়েছে, সে নিয়মগুলো কোথাও মানা হচ্ছে না। স্থানভেদে ওপরের স্তরে গড়ে ৫০ মিলিমিটার পুরুত্ব বজায় রাখার কথা থাকলেও এক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিবিএসের (ডাবল বিটুমিন ওয়্যারিং কোর্স সার্ফেসিং) কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনও সড়কের বেশিরভাগ এলাকা রক্ষিত আছে। তারপরও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা অক্ষত সড়কের উন্নয়নের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থের বরাদ্দ এনে কেন অপচয় করছেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ। চকরিয়া সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু আহসান আজিজুল মোস্তাফা বলেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বাজার থেকে উত্তরে হারবাং ইউনিয়নের আজিজগর জালিয়ারঢালা পর্যন্ত ও দোহাজারি অংশে সড়কের বিভিন্ন অংশের ১৫ কিলোমিটার ও কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ উপ-বিভাগের চার দশমিক পাঁচ কিলোমিটারসহ মাট ১৯ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ওভারলে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নয়নকাজের দায়িত্ব পেয়েছে কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিডেট ও হাতেম বিল্ডার্স লিমিটেড। তিনি বলেন, চলমান কাজের মধ্যে ১৯ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার ওভারলে, ১৮০ মিটার ড্রেন, ৩৫টি সাইন সিগন্যাল, বিভিন্ন অংশে গাইডওয়াল, হার্ড সোল্ডারের ওপর কার্পেটিংয়ের কাজ। একপর্যায়ে সিডিউলের নিয়ম মানা হচ্ছে না স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ওভারলে কাজে চার ধরনের ইন্ডিয়ান পাকুয়া পাথরের সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ে প্রতি বর্গফুটে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটুমিন সংমিশ্রিত পাথর বসানোর কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কের ওভারলের কাজ ৪০ ভাগ ও অন্যান্য কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন সড়কের দু’পাশে কোথাও হার্ড সোল্ডারের কাজ ও কাজের ওপর কার্পেটিং দেখা যায়নি। স্থানীয় একাধিক ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধি দাবি করেছেন, ওভারলে প্রকল্পের আওতায় নিম্নমানের কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে এসব কাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এলাকাবাসী জানান, সড়কের দু’পাশে হার্ড সোল্ডারের কাজ আগেই করা ছিল। বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হার্ড সোল্ডারের আট শ’ মিটারের কাজ করেছে বলে দাবি করলেও তা সঠিক নয়। গত ডিসেম্বর মাসে কাজটি শুরু করে চলতি মে মাসে শেষ হওয়ার কথা এবং জুন মাসে সরকারী কোষাগার থেকে বিলের টাকা উত্তোলনের জন্য জোরেশোরে রাস্তায় আস্তরণ প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার এলাকার সড়ক উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ সরকারী টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার অর্ধেক টাকাও ব্যয় হবে না বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা। অনিয়মের বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, উন্নয়নকাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। হার্ড সোল্ডার সড়কের সব জায়গায় দিতে হচ্ছে না, যেখানে দেয়া প্রয়োজন সেখানে দেয়া হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শতভাগ ভাল কাজ করছে দাবি করে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, আপনি ইঞ্জিনিয়ার নাকি, কাজের অনিয়মের ব্যাপারে আপনি কী বুঝবেন? আমি প্রকৌশলী, কাজের ব্যাপারে আপনার চেয়ে আমি ভাল বুঝব।
×