ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পায়রা নদীর ওপর লেবুখালী সেতু

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি

আনোয়ার রোজেন ॥ বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে পায়রা নদীর ওপর লেবুখালী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় ২০১২ সালে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি সড়ক অধিদফতরে ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ও অগ্রাধিকার প্রকল্প তালিকাভুক্ত’ একমাত্র প্রকল্প। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও মূল সেতুর কাজ এখন পর্যন্ত শুরুই হয়নি। এর মধ্যে শেষ হয়ে গেছে প্রকল্পের মেয়াদ। তাই যথারীতি নেয়া হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির উদ্যোগ। মূল প্রকল্পে ১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৪১৩ কোটি টাকা। নতুন রেট সিডিউল অন্তর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন কারণে দেখিয়ে এখন প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় ১ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৯৪৩ কোটি টাকা, যা মূল প্রকল্প ব্যয়ের তিন গুণেরও বেশি। একই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আরও ৫ বছর বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, এ বিষয়ে এরই মধ্যে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এতে যথাসময়ে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ার কারণ হিসেবে প্রশাসনিক অনুমোদন ও পরামর্শক নিয়োগে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সম্মতি পেতে বিলম্ব, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণে দেরি, ঠিকাদার নিয়োগে বিলম্ব এবং ২০১৫ সালে রেট সিডিউল পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এসব কারণে এরই মধ্যে মেয়াদ শেষ হয়ে আসা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আরও ৫ বছর বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পটির জন্য বাড়তি ৫ বছর সময় দিতে নারাজ কমিশন। কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ৩ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা রুটে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কুয়েত ফান্ডের অর্থায়নে প্রাথমিকভাবে ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে লেবুখালী সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ৭৭ কোটি ২ লাখ এবং কুয়েত ফান্ডের ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। ২০১২ সালের ৮ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। পরে প্রায় ৫ কোটি ব্যয় বাড়িয়ে ৪১৮ কোটি টাকা মোট ব্যয় ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী প্রকল্পটির বিশেষ সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এরপরও প্রকল্পটির কার্যক্রমে গতি আসেনি। সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রমের পুনর্বিন্যাস ও ব্যয় হ্রাস বা বৃদ্ধি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ২০১৫ সালের রেট সিডিউল অন্তর্ভুক্তির কারণ দেখিয়ে প্রকল্পটির ব্যয় ১ হাজার ৩৫৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা ধরে সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৪০৭ কোটি ৩১ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা ৯৪৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির অগ্রগতি না হওয়ার কারণ হিসেবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রতিনিধি ওই পিইসি সভায় জানান, প্রকল্পটি ২০১২ সালের ৮ মে একনেকে অনুমোদন লাভ করে। পরে ২ মাস পর ৯ জুলাই প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায়ের নক্সা প্রণয়ন ও নির্মাণ তদারকি কাজের পরামর্শক নিয়োগের জন্য ওই বছরের ১২ আগস্ট আগ্রহ ব্যক্তকরণের অনুরোধপত্র (ইওআই) ইস্যু করা হয়। পরে উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনাপত্তি সংগ্রহ করতে অনেক সময় লেগে যায়। সব প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এছাড়া পূর্ত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রাক-যোগ্যতা দলিল ও প্রাক-যোগ্য ঠিকাদারের মধ্যে দরপত্র ইস্যু করা হয় ২০১৫ সালের জুন মাসে। এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল। ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াগুলো শেষ করতেই অনেক লম্বা সময় পেরিয়ে যাওয়ায় নতুন করে সময় ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। জানা গেছে, সংযোগ সড়কসহ সেতুটি নির্মাণ এবং তীর সুরক্ষা নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লং ঝিয়াং রোডস এ্যান্ড ব্রিজ বিল্ডার্স কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের মে মাসে বরিশাল নগরীতে অফিস নিয়েছে। কোম্পানির সাইট অফিস, পরীক্ষাগার, পরিদর্শনবাংলো, ডরমেটরিসহ বিশাল ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। নদীর দুই পাড়ে ‘সংযোগ সেতু বা ভায়াডাক্ট’ থাকছে ৮৪০ মিটার। সেতুটির দুই প্রান্তে ৮৯০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে প্রায় ১২ হেক্টর জমি হুকুম দখল প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। লেবুখালীতে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে পণ্যবাহী গাড়ি, ট্রাক, লরি বিনা ফেরিতেই উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করতে পারবে। আর খুলনা হয়ে পশ্চিমাঞ্চলে যেতে পার হতে হবে কেবল বেকুটিয়া ফেরি। উল্লেখ্য, বরিশালÑপটুয়াখালীÑকুয়াকাটা মহাসড়কের ফেরি পয়েন্টগুলোর মধ্যে পটুয়াখালী ও আলীপুর, কলাপাড়া ও হাজীপুরে নির্মিত সেতুগুলো সম্প্রতি চালু হয়েছে।
×