ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধ মাছ, পোনা রেণু আমদানি করলে জেল জরিমানা

মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ১৫.৫০ ভাগ কমেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ১৫.৫০ ভাগ কমেছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মাছ, মাছের পোনা, রেণু আমদানির মাধ্যমে দেশে রোগ-জীবাণু বা ক্ষতিকর কিছু প্রবেশ রোধে ‘মৎস্য সঙ্গনিরোধ আইন- ২০১৭’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ও পূর্ব অনুমতি ছাড়া মাছ, মাছের পোনা, রেণু ও উপকারী জীবাণু আমদানি করলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদ- বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ- পেতে হবে। এদিকে চলতি বছর প্রথম ত্রৈমাসিকে মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার গত বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী লাকী আখান্দের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শিল্পী গত শুক্রবার মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। সচিবালয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ অনুমোদনের কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, এটা একটা নতুন আইন। বিভিন্ন দেশ থেকে মৎস্য পোনা, রেণু আমদানি করা হয়। সেগুলোতে যেন রোগ-জীবাণু বা ক্ষতিকর কিছু না থাকে সে জন্য আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এ আইন করার বিষয়টি এসেছে। আমাদের দেশে যেসব মৎস্য জাতীয় প্রাণী আসা নিষিদ্ধ সেগুলো যেন না আসে। যেমনÑ পিরানহা, আফ্রিকান মাগুর এগুলো আনা আমাদের আইনে নিষিদ্ধ। যদি ভুলক্রমে চলে আসে তবে এ আইন প্রটেকশন দেবে। তিনি বলেছেন, আইনে সঙ্গনিরোধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, মৎস্য রোগের প্রাদুর্ভাব বা বিস্তার রোধে আমদানির মাধ্যমে আনা মৎস্য পণ্য, উপকারী জীবাণু বা প্যাকিং দ্রব্যাদি পৃথকীকরণ এবং পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত কোন স্থান বা আঙ্গিনায় মৎস্য সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অন্তরীণ বা পর্যবেক্ষণে রাখাই হচ্ছে সঙ্গনিরোধ। তিনি জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের আমদানি অনুমতি ছাড়া কোন আমদানিকারক বাংলাদেশের ভেতরে মৎস্য, মৎস্য পণ্য বা উপকারী জীবাণু বা প্যাকিং দ্রব্যাদি আমদানি করতে পারবে না। ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে মাছ আনতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। খসড়া আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ ও পূর্ব অনুমতি ছাড়া মৎস্য, মৎস্য পণ্য বা উপকারী জীবাণু বা প্যাকিং দ্রব্যাদি বাংলাদেশে কেউ আমদানি করলে তিনি দোষী হবেন। এটা অপরাধের মধ্যে পড়বে। তিনি আরও বলেছেন, কেউ নিষিদ্ধ মৎস্য, মৎস্য পণ্য বা উপকারী জীবাণু বা প্যাকিং দ্রব্যাদি উৎপাদন করা, স্বত্বাধিকারী হওয়া, দখলে রাখা, মজুদ করা, বহন করা, বিক্রয় করা, বিক্রয়ের উদ্দেশে বিজ্ঞাপন প্রচার, বিতরণ বা পরিবহন করলেও তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এসব অপরাধের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দ-। এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইনের অন্যান্য বিধান লঙ্ঘনেও একই শাস্তি পেতে হবে। খসড়া আইনে একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, মৎস্য অধিদফতর এই কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে। মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক হবে এ কর্তৃপক্ষের প্রধান। আমদানির অনুমতি, মৎস্যবিষয়ক সনদপত্র গ্রহণ, সংশোধন ও বাতিল এগুলোর এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের ওপর দেয়া আছে। সরকার জনস্বার্থে সময়ে সময়ে মৎস্য, মৎস্য পণ্য বা উপকারী জীবাণুর আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। এদিকে চলতি বছর প্রথম ত্রৈমাসিকে মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার গত বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৬২ দশমিক ০৩ শতাংশ। মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০১৭ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১০টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১০১টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৪৭টি। ৫৪টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অপরদিকে গত বছরের একই সময়েও ১৩টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওই সময়ে সিদ্ধান্ত হয় ৭৯টি। এর মধ্যে ৪৯টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন ছিল ৩০টি। বাস্তবায়নের হার ছিল ৬২ দশমিক ০৩ শতাংশ। শফিউল আলম জানান, গত তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতি বা কর্মকৌশল ৫টি, ৮টি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ১০টি। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতি বা কর্মকৌশল অনুমোদিত হয়েছে ৩টি। চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে ৫টি। এ সময়ে সংসদে ৯টি আইন পাস হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা দৃশ্যত পিছিয়ে। এ বছরের সিদ্ধান্তের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল অবগতির জন্য কতগুলো সামারি। খুব ক্যাজুয়াল সিদ্ধান্ত, সাবসটেনটিভ সিদ্ধান্ত নয়। এ জন্য পার্সেন্টেজ কমে গেছে। গত বছর এ ধরনের সিদ্ধান্ত কম ছিল। এ জন্য এ পরিসংখ্যানগত পার্থক্য হয়েছে। লাকী আখান্দের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী লাকী আখান্দের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শিল্পী গত শুক্রবার মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
×