ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

ঢাকার দিনরাত

এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবহাওয়ার বিচারে ঢাকা বদলে গেছে আমূল। পঞ্জিকায় বৈশাখ বহাল থাকলেও রাজধানীর আকাশে যেন আষাঢ়ের মেঘ; দিনভর-রাতভর মেঘলা আকাশ, যখন তখন ঝমঝম বৃষ্টি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দশ ডিগ্রীর চাইতেও বেশি নিচে নেমে গেছে; অর্থাৎ গত সপ্তাহে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেখানে ছিল ছত্রিশ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে, সেখানে চলতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে এসেছে পঁচিশের নিচে। এ আকস্মিকতার ধকল সয়ে ওঠা সহজ নয়। ফলে ঠা-াজ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। বন্দরনগরীর মতো রাজপথে সাম্পান নামানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও ঢাকার কান কোন সড়ক যে জলাবদ্ধতার কব্জায় চলে গেছে সেটি সত্যি। মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বাস থামিয়ে হাওয়া সম্ভবত বৈশাখে ঢাকায় প্রথম ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হলো গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে। ঠিক অফিস ছুটির সময়টাতেই টানা দেড়-দু’ঘণ্টা বৃষ্টি। সিটিং সার্ভিস বন্ধে অভিযান বন্ধ হলেও তখনও ঢাকায় গণপরিবহনের চলাচল স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। তারওপর বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিপর্যস্ত পরিস্থিতি। বর্ষায় আটকে পড়া অফিস ফেরত মানুষ একসঙ্গে রাস্তায় নেমে এলে কিছুটা হুড়োহুড়ি সৃষ্টি হয়। বাস-মিনিবাসের প্রবাহ তো হঠাৎ করে বাড়ানো যায় না। তাই প্রতিটি বাস-মিনিবাসেই গাদাগাদি ঠাসাঠাসি অবস্থা। জনকণ্ঠ থেকে বেরিয়ে বাংলামোটর মোড় থেকে বিআরটিসির একটা খুচরো বাসে কোনমতে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। বাসটি খিলক্ষেতের ডিপোতে যাবে, রুটের গাড়ি নয় ঠিক। বাসের ভেতর তিল ধারণের ঠাঁই নিশ্চয়ই মিলবে, কিন্তু আর একজনও যাত্রীর জায়গা হবে নাÑ এমনই ঠাসাঠাসি অবস্থা। ফের হালকাচালে বৃষ্টি শুরু হলো। বাসটি মহাখালী রেলক্রসিং পার হতেই ট্রাফিক পুলিশ এসে বাস-চালকের আসনের নিচে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করল। রাত তখন সাড়ে নয়টা। হাঁসফাঁস বিরক্ত যাত্রীদের কেউ কেউ হৈহৈ করে উঠল। ট্রাফিক পুলিশদের গাড়ি থামানোর মানে আর কার অজানা! সাধারণত বিআরটিসির বাস তারা থামায় না। তাছাড়া কোন যুক্তিসঙ্গত কারণও নেই থামানোর ট্রাফিকের বিশেষ বিশেষ মিশন ছাড়া। যাত্রীদের কারও কারও বিরূপ মন্তব্য নিশ্চয়ই কানে গেল পুলিশের। চালকের কাছ থেকে কাগজপত্র ছোঁ মেরে নিয়ে সুবোধ লোকের মতো রোড ডিভাইডারে উঠে দ্রুত এলাকাছাড়া হলেন। বেচারা চালক আর কী করবে। লাফিয়ে বাস থেকে নেমে পুলিশ বক্সের দিকে হাঁটা ধরল। একজন যাত্রী বললেন, ঢাকার রাস্তায় একয়দিন অর্ধেক বাসই নামছে না। তাই ট্রাফিক পুলিশের আয় কমে গেছে। যাহোক, বৈধ হোক আর অবৈধ হোক যে কোন একটা উপায়ে ঘটনার সুরাহা হওয়ার একটা সময়সীমা রয়েছে। হয় পুলিশ কিছুমিছু নিয়ে বাস ছেড়ে দেন। তা না হলে কেস দেন। তাতে পাঁচ থেকে পনেরো মিনিটই না হয় লাগতে পারে। অথচ চালকের দেখা নেই, মীমাংসার খবর নেই। ঝড়বাদলের পর রাত করে ঘরে ফেরা এক বাস ভর্তি সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলার জন্যই যে (কিংবা বলা ভাল শাস্তি দেয়ার জন্য) বাসটিকে আটকে রাখা হয়েছে তাতে আর সন্দেহ কী! একেই বলে ক্ষমতার অপব্যবহার। সাধারণ মানুষ এই প্রবণতার কাছে জিম্মি। বাধ্য হয়ে এেেক একে সব যাত্রী নেমে গেলেন বাস থেকে। উবার-চালক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মোবাইল এ্যাপভিত্তিক নাগরিক পরিবহন সেবা উবার ঢাকায় ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। গত সপ্তাহে যে দুবার উবারের গাড়িতে সওয়ার হয়েছি সে দুটিরই চালক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র। একজনের কথা তুলে ধরব এখানে। অনেকেরই মনে থাকার কথা নব্বুই দশকে ‘বিকল্প ট্যাক্সি সার্ভিস’ চালু হয়েছিল সোনালী ব্যাংকের অর্থায়নে। এ প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছিলেন লেখক ও বিশিষ্ট ব্যাংকার লুৎফর রহমান সরকার। ঢাবি শিক্ষার্থীরা ওই ট্যাক্সিক্যাব চালাত। পরে ধীরে ধীরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প ট্যাক্সি দেখলেই শনাক্ত করা যেত। ফলে চালক-ছাত্রদের কারও কারও ভেতর অস্বস্তিবোধ কাজ করাটাও অস্বাভাবিক ছিল না। যে গাড়ি মধ্যরাতে আমাকে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে বসুন্ধরা হয়ে উত্তরায় বহন করে নিয়ে গেল তার চালক বিবিএর ছাত্র। মাত্র দ্বিতীয় দিনের মতো সে সার্ভিসে নেমেছে। অকপটে সে তার গল্প বলে গেল আমাকে। তার প্রকৌশলী বাবা দশ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে গাড়িটি কিনে দিয়েছেন। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার কাজেই মূলত ব্যবহার করত গাড়িটি। তার সহপাঠী এক বন্ধুরও গাড়ি আছে। বন্ধুটি ২৮ দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা করে উবার সার্ভিসের হয়ে গাড়ি চালিয়ে ৮৭ হাজার টাকা আয় করেছে। অবশ্য এই আয় থেকে জ্বালানি খরচ বাদ দিতে হবে। বন্ধুর দেখাদেখিও এই ছাত্রটি শখ করেই বলা যায় উবারে রেজিস্ট্রেশন করে গাড়ি চালাতে শুরু করেছে। এটি সে উপভোগই করছে। উপার্জনও হচ্ছে আশাতীত। ক্লাসের বাইরে নিজের লেখাপড়া-বিনোদনের জন্য বরাদ্দ সময়ের বাইরে কয়েক ঘণ্টা নিয়মিত গাড়ি চালিয়ে সহজেই ষাট-সত্তর হাজার টাকা মাসে উপার্জন করা সম্ভব বলে তার মনে হচ্ছে। আর যাত্রীরাও ভদ্র ও শিক্ষিত। কোন অভিযোগ বা ঝামেলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহন ব্যবস্থায় উবার ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছেÑ একথা দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি। আগামীতে বড় সংখ্যায় ছাত্ররা এ সার্ভিসে যুক্ত হবেÑ এটাও আশা করা যায়। উবারের চালকের কোন অপশন নেই যাত্রীকে না বলে দেয়ার। অথচ সিএনজি অটোরিক্সা ও ট্যাক্সিক্যাবের বেলায় আমরা আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখছি যাত্রীর গন্তব্য পছন্দ না হলে তারা ভাড়ায় যেতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, অথবা বাড়তি বখশিশ দাবি করছে। এ ব্যাপারে কড়াকড়ি অভিযান চালানো জরুরী। বিদায় লাকী আখান্দ্ এই নিষ্ঠুর নগরী কতশত কবি-শিল্পীকেই না ধারণ করে রাখে। শহরের অলিতে গলিতে লতিয়ে থাকে কতশত স্মৃতি। একজন যুগস্রষ্টা সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীকে জন্ম দিয়েছে এই মহানগর। আবার তার জীবনাবসানও প্রত্যক্ষ করল শহরটি। এই শহরই হলো শেষ ঠিকানা। লাকী আখান্দ নাগরিক সমাজে বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন তার যৌবনের শুরুর দিকেই। অসামান্য সঙ্গীত প্রতিভা ও ব্যতিক্রমী গায়কী প্রথম থেকেই তাকে শত শিল্পীর ভিড়ে ব্যতিক্রমী ঔজ্জ্বল্য দান করেছে। সিনেমায় গান গেয়ে বা গানে সুর না করেও যে সমাজে অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়া সম্ভব তার বিশেষ দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। এ্যাকোর্ডিয়ান ও কী বোর্ডের মতো বাদ্যযন্ত্র এদেশে ব্যবহৃত হওয়ার শুরুর দিনগুলোতেই এই সুরস্রষ্টা দক্ষতার সঙ্গে তার নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেন সেসব। শিক্ষিত আধুনিক মনন কোন সুরের জাদুতে মোহিত হয় তিনি সেটা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাকে নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প। অনেক মানুষের। লাকী আখান্দের অকাল প্রয়াত অনুজ হ্যাপি আখান্দের এক বন্ধুর তরুণ বয়সের গল্প এখানে তুলে দিচ্ছি। তিনি গীতিকার, যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রফেসর ড. সেজান মাহমুদ। এই সুন্দর গল্পটি তিনি ফেসবুকে বন্ধুদের শেয়ার করেছেন। সেজান লিখেছেন: সেই মেডিক্যাল কলেজের দিনগুলোর কথা; সবে মাত্র গান লেখা শুরু“ করেছি; প্রায় প্রতিদিন হোস্টেলে চলে আসে হ্যাপি আখন্দ আর আমার রুমে বসে গিটার বাজায়। আর আমি সুযোগ পেলেই চলে যাই লাকী ভাইয়ের বাসায় আজিমপুর কলোনি থেকে মিরপুরের কলোনি, পরে রাজারবাগ। আমাদের বার্ষিক পিকনিক হবে। আয়োজন হলো সারাদিন জাহাজে করে বুড়িগঙ্গায় ভেসে বেড়ানো হবে। সকাল বেলা জাহাজ ছাড়া হলো মিটফোর্ড থেকে। ভাটির দিকে চলবে সারাদিন। দুপুরে জাহাজের মধ্যেই রান্না এবং খাওয়া-দাওয়া। সে এক হুলস্থূল কাণ্ড, আনন্দ। সবাই দেখেছে আমি আমার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি যে চাপ দাড়িওয়ালা, চোখে সান গ্লাস। মাথায় পাগড়ির মতো কাপড় বাঁধা। আমার এই বন্ধু বেরসিক এবং অসামাজিক ধরনের, কারণ সে সারাক্ষণ একটি কেবিনে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। আমি তাকে প্লেটে খাবার দিয়ে আসি। দু’একজন কৌতূহলী হয়ে জিগ্যেস করলে বলি- এক বন্ধু, ওর মন খারাপ তাই সঙ্গে নিয়ে এসেছি। জাহাজ চলতে চলতে যখন পড়ন্ত বিকেল তখন জাহাজের ছাদের ওপরে গোল হয়ে শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমি উপস্থাপনা করছি। একজন একজন করে আমাদের ক্লাসের ছেলেমেয়েরা কেউ কেউ একা কেউ কেউ দলগত সংগীত পরিবেশন করল। কেউ কবিতা আবৃত্তি করল, কেউ বলে কৌতুক। আর আমার লেখা প্যারাডি গান তো আছেই যা মিটফোর্ডের যে কোন অনুষ্ঠান হিট আইটেম হিসেবে থাকত। কিন্তু আজকে প্যারোডি শেষ করে আমি একটু সিরিয়াস হয়ে গেলাম; বললাম, -আচ্ছা, এই রক্তিম বিকেলের আলো পার হয়ে সন্ধ্যা আসি আসি করছে। এই সময় যদি লাকী আখন্দের গাওয়া ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা গানটা গাই তাহলে কেমন হয়? কেউ কেউ চিৎকার করে,- আরে রাখ তো আতলামি প্যাঁচাল, গানটা ধর। আমি বলি, -না, গান তো ধরবোই, কিন্তু যদি গানটা আমাদের সঙ্গে লাকী আখন্দ ধরেন তাহলে কেমন হয়? আবারও কয়েকজনের চিৎকার- -এই তোর চাপাবাজি বন্ধ কর। গানটা ধর। আমি গান ধরলাম, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা শুধু দু’জনে, চলো না ঘুরে অজানাতে ...’ ঠিক তখন আমার সেই চাপ দাড়িওলা বন্ধু সকলের সামনে এগিয়ে এসে একে একে পাগড়ি, দাড়ি, সানগ্লাস খুলে ফেলে মাইক হাতে নিলেন এবং গান ধরলেন, আবার এলো যে সন্ধ্যা... তিনি আর কেউ নন স্বয়ং লাকী আখান্দ্ (ছবি দেখুন)। এতক্ষণ এভাবেই ছদ্মবেশে ছিলেন আমাদের মাঝে। বুঝতেই পারছেন আমার ক্লাসমেট ছাত্রছাত্রীদের কী অবস্থা হতে পারে! সকলের উন্মাতাল চিৎকার, আনন্দ, উল্লাস। হ্যাঁ, লাকী ভাইকে এই প্রস্তাবটা যখন দিয়েছিলাম, যেখানে সবাই তাঁকে টাকা পয়সা দিয়ে নিয়ে অনুষ্ঠান করে, আর আমি কিছুই দেব না শুধু সকলের জন্য সারপ্রাইজ ছাড়া, তিনি বলেছিলেন ‘তুমি আমাদের মতোই পাগল, চলো মজা করি।’ এভাবেই লাকী আখান্দ্ শুধু আমার গানের জগতে নয় আমার মননে এঁকে দিয়েছেন এক ধরনের প্রশ্রয়, অহংকার, স্নেহ, ভালবাসা। এই যে তিনি হারমোনিয়াম নিয়ে আর আমি পাশে হাটুভেঙ্গে বসে, এমন কত যে রাত কেটেছে গান নিয়ে; এক সময় মধ্য রাতে নিজে উঠে গিয়ে ভাত চড়িয়ে, শিং মাছের ঝোল রেঁধে খাইয়েছেন। এতো শুধু গান করার জন্যে না; একজন মানুষ হিসেবে কোথায় যেন যোগসূত্র গেঁথে গিয়েছিল বয়সের ব্যবধান পার হয়ে। আমি আমার কোন আপন আত্মীয়কে হারিয়েও তো এতটা নিঃস্ববোধ করব না। এতটা চোখের জল ফেলবো না। শেষবার বাংলাদেশ থেকে আসার সময় বলেছিলেন, আমাকে নিয়ে যাও, একটা স্টুডিও বানাও ওখানে... আমরা কেউ কাউকে নিতে পারি না লাকী ভাই, শুধু বুকের মধ্যে ধারণ করতে পারি। চির বিদায়, চিরদিন থাকবেন আমাদের বুকের চিনচিনে ব্যথায়, আনন্দে, গানে, স্মৃতিতে...’ শাহবাগে শুক্রবার সন্ধ্যায় তারুণ্যের প্রাণোচ্ছল এলাকা হয়ে উঠেছে শাহবাগ বহু আগে থেকেই। শুক্রবার ছুটির দিনে এলাকাটি রীতিমতো সরগরম হয়ে ওঠে। চারুকলা বা টিএসসি প্রাঙ্গণ কিংবা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের কথা বলছি না; সেখানে তো প্রতিটি দিনই বসে তারুণ্যের মেলা। দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় এলাকাটি বিশেষ চারিত্র্য অর্জন করেছে সেই আশির দশকের প্রথমার্ধ থেকেই। আজ বলছি শুধু শুক্রবার সন্ধ্যার শাহবাগ এলাকার কথা। এলাকাটি প্রজন্ম চত্বর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের পর। এই চত্বর সংলগ্ন জাতীয় যাদুঘর এবং পাবলিক লাইব্রেরি বা গণগ্রন্থাগার অঙ্গনটি ছুটির দিনগুলোতেই বেশি জমজমাট থাকে। পাবলিক লাইব্রেরির পেছনে শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে থাকে কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অপরদিকে জাদুঘরের নিচতলা ও ওপরের দুটি সুশোভিত মিলনায়তনেও কখনো কখনো একই সন্ধ্যায় থাকে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। তার ওপর যদি নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনশালায় থাকে কোনো প্রদর্শনী, তাহলে তো কথাই নেই। জাদুঘরই হয়ে ওঠে শাহবাগের প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। গত শুক্রবার পাবলিক লাইব্রেরিতে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রের ব্যতিক্রমী আয়োজনের (আপন পথের যাত্রী- তৃতীয় পর্ব) কিছুটা উপভোগ করেই ছুটলাম প্রাচীরের ওপাশের প্রাঙ্গণে, মানে জাতীয় যাদুঘরে। দুই মিলনায়তনের দুটি আয়োজনেই যেতে হবে। প্রধান ব্যক্তিদ্বয়ের বিশেষ আমন্ত্রণ উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। ওপরে প্রধান মিলনায়তনে চলছে সুরস্রষ্টা আজাদ রহমানের পৌরহিত্যে বাংলা খেয়াল ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের অনুষ্ঠান। আয়োজক ঢাকাস্থ ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আর নিচের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জাদুঘরের নিজস্ব উদ্যোগে তরুণ রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী জয়ন্ত আচার্য্যরে একক অনুষ্ঠান। যেতে যেতে দেখলাম ‘পাখির দেশ বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতেও দর্শনার্থীদের ভিড়। জয়ন্ত বর্ষণসিক্ত ঢাকার কথা স্মরণে রেখেই শুরুর দিকে শুধু বর্ষার গানই গেয়েছেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার যোগ্য এই শিষ্য সংগীতপ্রেমীদের মোহিত করে রাখেন তার পরিবেশনা দিয়ে। বাংলা খেয়াল ও উচ্চাঙ্গ সংগীত শীর্ষক অনুষ্ঠানে ছিল চার গুণী শিল্পীর পরিবেশনা। ২৪ এপ্রিল ২০১৭ [email protected]
×