ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

বিষণ্নতাই সমস্যা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

বিষণ্নতাই সমস্যা

বিষণ্নতা বিপন্ন করে তুলছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। এই ২০১৭‘তে ১৬ কোটি মানুষের ১২.৭ শতাংশ ভুগছেন বিষণœতায়। আর মনোবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২০৩০’এ বিষণ্নতা রোগে ভোগা মানুষের সংখ্যা দাড়াবে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তারপরও এ নিয়ে আমরা কতটা সচেতন। আর এই অসচেতনতার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। এখনই সময় বিষণ্নতা নিয়ে সচেতন হওয়ার। আজ আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পরা উগ্রবাদ, মাদকাশক্তি, মনোবৈকল্য, অপরাধ প্রবণতার পেছনের অন্যতম কারণ সহজে নিরাময়যোগ্য বিষণ্নতা নামক রোগটি। ‘বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৭ ভাগ মানুষ বিষণ্নতায় ভোগেন। অর্থাৎ ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে বিষণœতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা দুই কোটির বেশি।’ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। অর্টিজম ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন মনোরোগ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এই বিষণœতা থেকেই তরুণ-তরুণীরা বিপথে চলে যাচ্ছে। যারা উগ্রবাদে জড়াচ্ছে তাদের অধিকাংশই এই বিষণœতায় ভোগা রোগী। ফলে এখনই এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে আর ১০ বছরে অর্ধেক মানুষ এই বিষণœতায় ভোগা রোগী হয়ে যাবে।’ চিকিৎসকরা বলছেন, বিষণœতা এক ধরনের শারীরিক ও মানসিক রোগ। এটা আপনা আপনি ভাল হয়ে যায়। আবার অনেক সময় ভাল হয় না। তবে অবশ্যই এটা নিরাময়যোগ্য রোগ। এটা মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারে। বিষণœতায় ভোগার কারণে একটা লোক শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম হয়ে যেতে পারেন। মনোরোগ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘২০০৫ সালে বিষণœতায় ভোগা রোগী ছিল ৪ ভাগ। সর্বশেষ ২০১৬ সালের হিসাবে দেখা গেছে এটা বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৭ ভাগ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে এটা প্রায় ৫০ ভাগে পৌঁছে যাবে। অথচ এটা নিয়ে কেউ গুরুত্ব দেয় না।’ তিনি বলেন, এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আজ শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এসব বিবেচনায় এবারের স্বাস্থ্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘আসুন, বিষণœতা নিয়ে কথা বলি’। বিশ্লেষকরা বলছেন, সারা বিশ্বে যখন সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ শুরু হলো তখন এটা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেন। ১৪টি দেশ মিলে এই গবেষণা কাজ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে ওই গবেষণা টিমে কাজ করছেন মনোরোগ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, মনোবিজ্ঞানীরা এখন এটা নিয়ে বিষদভাবে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত গবেষণার যে ফল তাতে দেখা গেছে, ‘সারাবিশ্বের অর্ধেক মানুষ বিষণœতায় ভোগেন। হতাশা থেকে আসে বিষণœতা। বিষণœতা থেকে উগ্রবাদে জড়াচ্ছে উঠতি বয়সের যুবকরা। ১৪টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ পৃথকভাবেও গবেষণা করছে। সেই গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনিসহ এই ধরনের অসংক্রামক ব্যাধিতে যারা আক্রান্ত তাদের বেশিরভাগই বিষণœতায় ভোগেন। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের ২৭ ভাগ বিষণœতায় ভোগেন, হৃদরোগে আক্রান্তদের ৪৬ ভাগই বিষণœতায় ভোগেন। ক্যান্সারের আক্রান্তদের ৫৪ ভাগ বিষণœতায় ভোগেন। ফলে এরা দ্রুত মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছেন। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যার ঘটনার ৭০ ভাগই বিষণœতায় ভোগেন। এর মধ্যে যাদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর তারাই বেশি। বলা হয়, অসংক্রামক ব্যাধির সহোদর হলো এই বিষণœতা। বাংলাদেশে আত্মহত্যার সবচেয়ে বেশি প্রবণতা ঝিনাইদহ ও যশোরে। দেশে মোট আত্মহত্যার বড় অংশ ওই এলাকায়। সেখানে ২৫ বছরের কম বয়সী ৬৭ ভাগ গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন। গোলাম রাব্বানী বলেন, এই রোগে যারা ভোগের তাদের সাহস দেওয়া দরকার। স্বজনদের সবসময় তাদের পাশে থাকতে হবে। মনোরোগ গবেষকরা বলেন, ‘যে কোন কারণে হতাশা, আর এই হতাশা থেকে বিষণœতা। ওই সময় তার কোন কাজ ভাল লাগে না। বিষণœতার দিকে মনোযোগ না দিলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সামাজিকভাবেও এর প্রভাব পড়ে। পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করতে বিষণœতায় ভোগা রোগীদের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে হবে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিষণœতা বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। এই রোগ সম্পর্কে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গ্রামাঞ্চল থেকেও চিকিৎসকরা এসে এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সূত্র : ইন্টারনেট
×