ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

সরকারের দেয়া শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

সরকারের দেয়া শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আধুনিক শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে সকল শিক্ষার্থীর জন্য সরকারের দেয়া শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার একমাত্র উপায় হিসেবে সরকার শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আধুনিক শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে সকল শিক্ষার্থীর জন্য সরকারের দেয়া শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। রবিবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডের উপদেষ্টা পরিষদের চতুর্থ সভায় সভাপতিত্বকালে এ আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানান, বৈঠকে আগের বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা খাতের প্রসারে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে গুরুতর আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সরকার একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ ও নারীদের শিক্ষাকে অবৈতনিক করেন এবং নারীদের শিক্ষাকে সম্পূর্ণ পরিপূরক করেন। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর সরকারগুলো ক্ষমতা কুক্ষিগত করে সাধারণ মানুষকে শিক্ষাসহ তাদের মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করেছে। সবার জন্য শিক্ষা এবং মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরের প্রথম দিনই সরকার প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে অভিভাবকদের এ সংক্রান্ত খরচ লাঘব করেছে। তিনি বলেন, স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, বিজ্ঞান গবেষণাগারসহ জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তার সরকার পার্বত্য অঞ্চলে এবং হাওড় এলাকায় আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করেছে। বৈঠকে বলা হয়, সরকার ২০১৫-২০১৬ শিক্ষা বছরে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭৭৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে মোট ২ হাজার ৪৬৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি, বৃত্তি ও অন্যান্য বৃত্তি বিতরণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা চালুর পর থেকে দেশে এসএসসি পরীক্ষার ফল ভাল হচ্ছে। আগামী দিনে বাঙালী জাতি একটি সুশিক্ষিত, উচ্চপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, একটা জাতিকে সুস্থভাবে গড়ে তুলতে হলে তার ভিত্তিটাকে মজবুত করে গড়ে দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ করেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেছিলেন, নারী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সময়ে ৩৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাতীয়করণ হয়েছিল। এরপর আমরা ক্ষমতায় আসার পর ২৬ হাজার স্কুল জাতীয়করণ করি। এর মাঝে কিন্তু আর কেউ কিছু করেনি। কারণ পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের শিক্ষা দীক্ষার দিকে তেমন নজর ছিল না। অবৈধভাবে কুক্ষিগত করা ক্ষমতাকে কিভাবে তারা কুক্ষিগত করে রাখবে সেদিকেই বেশি নজর দিয়েছে। আর জনগণ সবচেয়ে অবহেলিত ছিল। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক অনুদান এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে দুইজন বীরশ্রেষ্ঠ এবং ১০ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যেকে তিন লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের মা মোছাম্মাৎ মালেকা বেগম, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের মা মোছাম্মাৎ ফজিলা খাতুন, বীর উত্তম শাহ আলমের স্ত্রী ফাতেফা খাতুন, বীর উত্তম আবদুস সাত্তার ছিলেন চেক গ্রহণকারীদের মধ্যে। এছাড়া বীর বিক্রম আবুল বাশারের ছেলে মহিন উদ্দিন, বীর প্রতীক সামছুল হকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম এবং বীর প্রতীক মোক্তার আলী আর্থিক অনুদানের চেক নেন। আর একজন বিদেশে থাকায় তার পক্ষে চেক গ্রহণ করেন একজন কর্মকর্তা।
×