ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাথমিক রিপোর্ট;###;তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ;###;হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে মরা মাছ

আরও দুটি বাঁধ ভেঙ্গে হাওড় এলাকার পরিস্থিতির অবনতি ॥ তেজস্ক্রিয় পদার্থ নেই

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

আরও দুটি বাঁধ ভেঙ্গে হাওড় এলাকার পরিস্থিতির অবনতি ॥ তেজস্ক্রিয় পদার্থ নেই

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকার পরিস্থিতি দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। পাহাড়ী ঢলের পানিতে জেলার বোরো ধানের ভা-ার বলে খ্যাত শনির হাওড়ের দুটি বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার আধাপাকা ধান। রবিবার ভোর রাতে লালুর পশ্চিম সাইট এবং শাহেদনগর সাইটসহ আহম্মকখালী বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় এই বৃহৎ বোরো ধানের ভা-ার। এদিকে হাওড়ের পানিতে প্রাথমিকভাবে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন হাওড়ে মাছ মরে ভেসে ওঠার ঘটনায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সকাল থেকে দেখার হাওড়, খড়চার হাওড় ও যাদুটাকা নদীসহ বিভিন্ন হাওড় পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে পানি, উদ্ভিদ, মাটি, মরে ভেসে ওঠা মাছ, মরা হাঁস ও বিভিন্ন কীটপতঙ্গ প্রাথমিক পরীক্ষা করে এই তথ্য সাংবাদিকদের জানান। অন্যদিকে, সিলেটের হাকালুকি ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওড়ে মরে যাওয়া মাছ এই অঞ্চলের হাট-বাজার ও হোটেল-রেস্তরাঁয় অবাধে বিক্রি হচ্ছে। সিলেটের বাইরে ও এই সব মাছ সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি বরফজাত করে দেশের বাইরে সরবরাহ করার ও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে বিষাক্ত মাছ ও স্বাভাবিক মাছের তফাত বোঝা যাচ্ছে না। বরফে মোরা বিষাক্ত মাছ সড়ক ও নদীপথে সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরে নিয়ে আসছে মাছ ব্যবসায়ীরা। সে সব মাছ স্বাভাবিক হিসেবেই বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে হোটেল এবং রেস্টুরেন্টগুলোতে। এমনকি, রাতের আঁধারে যেসব বাস সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছে, সেগুলোর ছাদে করে এসব মাছ ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। সুনামগঞ্জের হাওড়ে বিষাক্ত মাছ না ধরতে জেলা প্রশাসন এক সপ্তাহের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তা মানছে না অসাধু লোকজন। এতে করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। অনুরূপ পরিস্থিতি সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোনাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায়। এছাড়া, নেত্রকোনায় অপ্রতুল বরাদ্দ ও ডিলারের সংখ্যা কম থাকায় বন্যাদুর্গত হাওড়দ্বীপ খালিয়াজুরিতে ‘ওএমএস’র মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রির চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এ কারণে ওই উপজেলায় ওএমএস’র বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ছয় ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ডে ডিলার নিয়োগের দাবি উঠেছে। এমরানুল হক চৌধুরী সুনামগঞ্জ থেকে জানান, জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সকল শ্রেণী পেশার লোকজনের টানা ২৫ দিন বাঁধের সঙ্গে লড়েছেন। রাব রার ভেরে হাওড়ের বাঁধ টিকিয়ে রাখতে সর্বস্তরের মানুষ প্রাণান্ত চেষ্টা করে ব্যর্থ করে দুটি বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি ঢুকতে শুরু করে। হাওড়ের বাঁধ ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত জেলার সকল হাওড়ই পানিতে তলিয়ে গেল। বাঁধ এলাকায় পাউবো’র কোন কর্মকর্তা বা পিআইসি’র সদস্যদের দেখা যায়নি। এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, সুনামগঞ্জের সব হাওড় তলিয়ে গেলেও শনির হাওড়টি এতদিন স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় ২৫ দিন টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলাম। আজ ভোরে লালুর পশ্চিম সাইট, সাহেদনগর সাইট ও আহমক খালী বাঁধ ভেঙ্গে ১৩ হাজার হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় আর কোন হাওড় রইল না আমাদের। হাওড়ের ফসল হারিয়ে কৃষকরা দিশেহারা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারী সাহায্য দেয়ার দাবি করছি। জানা গেছে, সুনামগঞ্জের হাওড়ের পানিতে প্রাথমিকভাবে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন হাওড়ে মাছ মরে ভেসে উঠার ঘটনায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনরে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সকাল থেকে দেখার হাওড়, খড়চার হাওড় যাদুটাকা নদীসহ বিভিন্ন হাওড় পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে পানি, উদ্ভিদ, মাটি, মরে ভেসে উঠা মাছ, মরা হাঁস ও বিভিন্ন কীটপতঙ্গ প্রাথমিক পরীক্ষা করে এই তথ্য সাংবাদিকদের জানিছেন। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ফিজিক্যাল সাইন্স এটোনিমিকেল কমিশনের সদস্য ড. দিলীপ কুমার সাহা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে হাওড়ের পানিতে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার কোন সিমটম নাই। তবে তিনি আরও জানান, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওড় থেকে বিভিন্ন প্রকার পানি, মরা মাছ ও মরা হাঁসের নমুনা সংগ্রহ করে তাদের আরও একটি দল ঢাকায় নিয়ে গেছে। সেখানে ল্যাব টেস্টের পর নিশ্চিতভাবে বলা যাবে এই পানিতে আসলেই কোন ইউরেনিয়াম আছে কিনা। হাওড়ে মাছ মরে যাওয়ার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাওড়ের ধান পচে ও ধানে সার প্রয়োগ করার ফলে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলে এই মাছ মারা যেতে পারে। তারপরও তারা সারাদিনে জেলার আরও কয়েকটি আক্রান্ত হাওড়ে গিয়ে কাজ করবেন। পরমাণু প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আরও আছেন বাংলাদেশ এ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের প্রধান সাইন্টিফিক অফিসার ড. দেবাশীষ পাল ও বাংলাদেশ ক্যামিস্টি ডিভিশনের হেড ড. বিলকিস আরা বেগম। শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের এই প্রতিনিধি দল সুনামগঞ্জে পৌঁছান। আজ সকাল ৮টায় সুনামগঞ্জের দেখার হাওড়ের পানি পরীক্ষা করে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন কমিশনের মুখ্য গবেষক দিলীপ কুমার সাহা। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি দল খড়চার হাওড় ও যাদুকাটা নদীর পানি পরীক্ষা করেও পানিতে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতে পাননি তারা। তারা সারাদিন জেলার বিভিন্ন হাওড়ে এ ধরনের পরীক্ষা চালাবেন এবং নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় বাংলাদেশ এ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের প্রধান সাইন্টিফিক ল্যাবে নিয়ে আরও নীবির পরীক্ষা-নীরিক্ষা করবেন। এর আগে রবিবার আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওড়ের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর হাওড়ের পানিতে মাছ, হাঁস ও কীটপতঙ্গ ভেসে উঠতে শুরু করে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগও হাওড়ের পানি পরীক্ষা করে ইউরেনিয়াম উপস্থিতির বিষয়টিকে প্রোপাগান্ডা হিসেবে উল্লেখ করে। উল্লেখ্য, পানি দূষণ ও বাসাতে মাত্রাতিরিক্ত দুর্গন্ধের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে সরকারের আরও একাধিক এক্সপার্ট টিম। জেলার বিভিন্ন হাওড়ের ধান পচে পানিতে হাইড্রোজেন সালফাইট ও এ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হওয়ার কারণে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ার মাছ মরতে শুরু করে। সেই সব ধানে ব্যবহৃত কীটনাশনক ও রাসায়নিক সার যোগ হয়ে হাওড়ের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। হাওড়ের মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে গত তিনদিন বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বাতাসে এ্যামেনিয়া গ্যাসের আধিক্য কমেছে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষতিকারক এ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ কমাতে এবং পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে বিভিন্ন হাওড়ে চুন ও জিওলাইট দেয়ার। সালাম মশরুর, সিলেট অফিস থেকে জানান, হাকালুকি ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওড়ে বিষক্রিয়ায় মরে যাওয়া মাছ এই অঞ্চলের হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তরাঁয় অবাধে বিক্রি হচ্ছে। সিলেটের বাইরে ও এই সব মাছ সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি বরফজাত করে দেশের বাইরে সরবরাহ করার ও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে বিষাক্ত মাছ ও স্বাভাবিক মাছের তফাত বুঝা যাচ্ছে না। বরফে মরা বিষাক্ত মাছ সড়ক ও নদীপথে সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরে নিয়ে আসছে মাছ ব্যবসায়ীরা। সেসব মাছ স্বাভাবিক মাছ হিসেবেই বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোতে। এমনকি, রাতের আঁধারে যেসব বাস সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাচ্ছে, সেগুলোর ছাদে করে এসব মাছ ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। সুনামগঞ্জের হাওড়ে বিষাক্ত মাছ না ধরতে জেলা প্রশাসন এক সপ্তাহের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মানছে না অসাধু লোকজন। এতে করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে বিস্তীর্ণ হাকালুকি হাওড় মৎস্যভা-ার হিসেবে পরিচিত। এ হাওড় থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিকটন মাছ আহরণ করা হয়। সুনামগঞ্জে রয়েছে হাওড়, বরাম হাওড়, হাইল হাওড়, নলওয়ার হাওড়, মৈইয়ার হাওড়, থাল হাওড়, খড়চার হাওড়, মাটিয়ান হাওড়ের মতো বড় বড় হাওড়সহ শতাধিক হাওড়। একটানা কয়েকদিন পানির নিচে তলিয়ে থাকায় কাঁচা ও আধপাকা বোরো ফসল পচে বিষাক্ত হয়ে পড়ে হাওড়ের পানি। পানিতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় হাইড্রোজেন সালফাইড ও এ্যামোনিয়া গ্যাসের মাত্রা। বিপরীতে অস্বাভাবিকভাবে কমে আসে অক্সিজেনের মাত্রা, কমে যায় পানির এ্যাসিটিক ও ক্ষারীয়ভাব। এছাড়া, ধানে ছিটানো কীটনাশক ও রাসায়নিকও ছড়িয়ে পড়ে হাওড়জুড়ে। ফলে ভয়ঙ্করভাবে বিষাক্ত হয়ে পড়ে হাওড়ের পানি। মরতে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এসব মাছ খাওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা। এমনকি এসব মাছ খেলে মানবদেহে টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কতিপয় অসাধু লোকজন এসব বিষাক্ত মাছ কৌশলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রেস্তরাঁয় সরবরাহ করছে। এতে জনস্বাস্থ্য পড়ছে হুমকির মুখে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) মাইক্রোবায়োলাজি এ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান ড. মাহবুব-ই-এলাহী বলেন, ‘হাওড়ের পানি ও বাতাস দূষিত হয়ে পড়েছে। এ্যামেনিয়া গ্যাসের প্রভাবে মারা পড়ছে মাছ। এসব মাছ খেলে মানবদেহে টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে মানুষ মারাও যেতে পারে। সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের উপ-পরিচালক ড. মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, হাওড়ের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে প্রচুর পরিমাণে চুন ছিটানো হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে হাওড়ের পানি। ধান ও হাওড়ের শ্যাওলা শিকড় পচে গিয়ে হাকালুকি হাওড়ের পানি বিষাক্ত এ্যামোনিয়ার প্রভাবে প্রচুর মাছ, হাঁস মারা গেছে। এ দুর্যোগ মোবাবিলায় সন্তুষ্টজনক কাজ করছে জেলা, উপজেলা প্রশাসন। চুন ছিটানো, কীটনাশক, টিকা বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আর্থিক সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ উপপরিচালক। মৃত হাঁস, মাছ বর্জন করতে নিষেধাজ্ঞা করে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ড. রমাপদ দে বলেন, আক্রান্ত হাসের ডিম নিরাপদ। ডিম খাওয়া, ক্রয়, বিক্রিতে কোন বাধা নাই। স্থানীয়রা মনে করছেন, হাঁস ও হাঁসের ডিমের বাজার মান্দা করতে একটি মহল এ্যামোনিয়াকে ইউরেনিয়াম বলে প্রচার করছে। যা ভুল ও মিথ্যা। এসব ভুয়া খবরে প্রভাবিত না হতে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে অনুরোধ জানানো হয়। বন্যার পরপর তীব্র রোদে হাওড়ের ধান পচে কালচে হয়ে গেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওড়ের পানি। আর এতে ব্যাপক হারে মরছে হাওড়ের মাছ ও হাঁস। বাতাসে তীব্র পচা গন্ধ। এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, কাঁচা ধান পচে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমেছে ও এ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে। তাই মারা যাচ্ছে হাওড়ের মাছ। শুধু মাছ নয়, একইসঙ্গে হাঁসও মারা যাচ্ছে ব্যাপকভাবে। এ অবস্থায় তীব্র হুমকির মুখে পড়েছে হাওড়ের জলজ জীববৈচিত্র্য। সবচেয়ে কাছে থেকে হাওড় এলাকায় মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ও গবেষণার লক্ষ্যে কাজ করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। জলজ জীববৈচিত্র্যের এমন নাজুক অবস্থার প্রাথমিক কারণ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন সিকৃবির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা। হাকালুকি হাওড়ের জীববৈচিত্র্য গবেষক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাইমুল ইসলাম বলেন, অকাল বন্যায় ধান তলিয়ে যাওয়ার পর কয়েকদিন টানা তীব্র রোদ ওঠে। যার ফলে পানির তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং ধানে পচন শুরু হয়। পচন প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে পানি থেকে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং প্রচুর বিষাক্ত এ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করে। ফলে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, যা হাইপোক্সিয়া নামে পরিচিত। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় পচনক্রিয়া, সঙ্গে বেড়ে যায় বিষাক্ত এ্যামোনিয়ার মাত্রা, কমে যায় অক্সিজেন। এই সবকিছু মিলে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে মাছ মারা যায়। হাওড় এলাকায় হাঁসের মড়ক নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়া বলেন, হাঁসের মড়ক সৃষ্টির মূল কারণ হলো তার খাদ্যশৃঙ্খলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিষক্রিয়া সৃষ্টির কারণ প্রাকৃতিকও হতে পারে বা অন্য কোন কারণেও হতে পারে। তবে উচ্চতর পর্যায়ে পরীক্ষা না করে এ বিষয়ে বলা যাচ্ছে না। সৈয়দ হুমায়েদ শাহীন, মৌলভীবাজার থেকে জানান, অতিবৃষ্টি, অকাল বন্যা ও পাহাড়ী ঢলে হাকালুকি হাওড়সহ মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও জেলেদের সরকারীভাবে সহযোগিতা ও মৌলভীবাজার জেলাকে দুর্যোগপূর্ণ জেলা ঘোষণার দাবিতে রবিবার সকালে মৌলভীবাজারস্থ চৌমুহনী পয়েন্টে হাওড় বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক প্রভাষক মাহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হোসাইন আহমদের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মোঃ সিতাব আলী, সুমন আহমদ, জসিম উদ্দিন, বকসি ইকবাল আহমদ প্রমুখ মানববন্ধনে হাওড় বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মৌলভীবাজার জেলাকে দুর্যোগপূর্ণ জেলা ঘোষণা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতা, হাওড় পাড়ের এলাকায় ১০ টাকা দরে সরকারী চালের বরাদ্দ বৃদ্ধি, জেলেদের পুনর্বাসন, হাকালুকি হাওড়ে মাছের সঙ্কট কাটিয়ে উঠার জন্য বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত, হাওড় এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া, আগামী আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ, বীজ ও সার প্রদান, কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন করা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে তদন্ত টিম গঠন করে তা চিহ্নিত করা ও সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ হাতে নেয়া। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ স ম শফিক উজ জামান জানান সম্প্রতি ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওড়জুড়ে তলিয়ে যায় ধান। হাওড়ে ধান পচে গ্যাস তৈরি হয়ে পানি কালো ও ফ্যাকাসে বিবর্ণ রং ধারণ করে। বিষাক্ত হয়ে ওঠে হাওড়ের পানি। বিষাক্ত পানিতে মারা গেছে প্রায় ২৫ মেট্রিক টন মাছ ও কয়েক হাজার হাঁস। তিনি আরও জানান, হাওড়ে ধান পচে পানির পিএইচ, এ্যামোনিয়া, ডিও (পিপিএম) এবং টিডিএস অস্বাভাবিক হওয়ায় পানি বিষাক্ত হয়ে ওঠে। ফলে হাকালুকি হাওড়ের জুড়ি অংশে ৭ মেট্রিক টন, কুলাউড়া অংশে ৮ মেট্রিক টন এবং বড়লেখা অংশে ১০ মেট্রিক টন মাছ মারা যায়। তবে হাওড়ের মাছের যে ক্ষতি হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছের পোনা অবমুক্ত করে তা পুষিয়ে নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
×