ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গামাটিতে পাহাড় অশান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ইউপিডিএফ

প্রকাশিত: ০৮:০২, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

রাঙ্গামাটিতে পাহাড় অশান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ইউপিডিএফ

ফিরোজ মান্না, রাঙ্গামাটি থেকে ॥ ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট) সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য রোমেল চাকমা ওরফে সুপেনের মৃত্যুর পর পাহাড়কে অশান্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় গত কয়েকদিনে রাঙ্গামাটিতে ভাংচুর ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনা ঘটেছে। এখানেই শেষ নয়। রবিবার ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধসহ একের এর এক সর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘোষণার পরপরই রাঙ্গামাটি শহরে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন নানা প্রদক্ষেপ নিয়েছে। যৌথবাহিনী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৫ এপ্রিল রোমেল চাকমা ওরফে সুপেন নামে এক সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে আটক করে। সে ইউপিডিএফ সদস্য। ওই সন্ত্রাসী ২৩ জানুয়ারি বেতছড়ি এলাকায় ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছিল। ওই নাশকতায় প্রত্যক্ষভাবে সশস্ত্র অবস্থায় অংশগ্রহণকারী ইউপিডিএফের অপর একটি সূত্রে নিরাপত্তা বাহিনী জানতে পারে, রোমেল চাকমা অতীতেও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত ছিল। গত ২৩ জানুয়ারি তার নেতৃত্বে মালবাহী দুটি ট্রাকে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এই ঘটনার পর যৌথবাহিনী তাকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৫ এপ্রিল টিএ্যান্ডটি বাজারে অভিযানের সময় যৌথবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে রোমেল পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় একটি সিএনজির সঙ্গে ধাক্কা লেগে সে আহত হয়। এ অবস্থায় যৌথবাহিনী তাকে নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে কর্তব্যরত ডাক্তারের পরামর্শে তাকে গত ৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন ১৯ এপ্রিল সে মারা যায়। রোমেল চাকমা ইউপিডিএফের সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য হিসেবে যোগ দেয়, কোথায়-কতদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সে সম্পর্কে শনিবার এ প্রতিবেদককে বিস্তারিত তথ্য জানায় বিদ্রোহী গ্রুপ। সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহী ওই সদস্য গত ২৩ জানুয়ারির নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছে। সে জানায়, ওই নাশকতার ঘটনায় মোট ১৩ জন অংশ নেয়। এর মধ্যে ১১ জনের হাতে হালকা ও ভারি অস্ত্র ছিল। রোমেলের মৃত্যু নিয়ে ইউপিডিএফ রাঙ্গামাটিকে অশান্ত করার নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২৬ এপ্রিল ডিসি অফিস ও ২৭ এপ্রিল নানিয়ারচর বাজার বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। গত শনিবার এই নিয়ে রাঙ্গামাটি শহরে উত্তেজনা বিরাজ করে। ২১ এপ্রিল রাঙ্গামাটি-খাগড়াছডি সডকের কুতুকছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফের সন্তাসীরা একটি বাস ভাংচুর করে। বাসের হেলপার আরমান রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় বাস চালক আহত হন। রাঙ্গামাটির এসপি সৈয়দ তারিকুল হাসান জানান, ইউপিডিএফ কোন নিবন্ধিত সংগঠন নয়। সেহেতু তাদের সদস্যদের তালিকাও আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা জেনেছি, রোমেল চাকমা সংগঠনটির সশস্ত্র সদস্য ছিল। যৌথবাহিনীর অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে সে আহত হয়। পরে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যায়। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রয়েছে। আমরা এখনও মযনাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাইনি। তবে শনিবার রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকা-ে রাঙ্গামাটিবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। পার্বত্য এলাকার সাধারণ পাহাড়ী-বাঙালী এদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে আছে। দিন দিন বাড়ছে দূরত্ব। ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কের বদলে তৈরি হচ্ছে বৈরিতা। সম্পর্কের এই অবনতি ভবিষ্যতে আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে অনেকেই জানালেন। তবে শান্তি চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন ঘটলে সন্ত্রাসী কর্মকা- অনেকাংশে কমতে পারে বলে পাহাড়ের সাধারণ উপজাতিরা মনে করেন। কিন্তু উগ্রপন্থী গ্রুপগুলো পাহাড় অশান্ত করতে দেশে-বিদেশে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে এমনই জানালেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
×