ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী বাজেট প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

আগামী বাজেট প্রত্যাশা

শুরু হয়েছে প্রাক বাজেট আলোচনা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট শেষ হতে আর মাত্র দুই মাস বাকি। আগামী বাজেট নিয়ে মানুষের রয়েছে আশা, আকাক্সক্ষা, রয়েছে শঙ্কাও। বাজেটকে সুষম, গণমুখী, ব্যবসাবান্ধব করতে প্রতিবছরই বিভিন্ন পর্যায়ের করদাতা, বিভিন্ন শিল্প ও বণিক সমিতি, ব্যবসায়ী সমিতি, পেশাজীবী সংগঠন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও দেশের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতাই এবার দুই মাসব্যপী প্রাক-বাজেট আলোচনা ৮ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে যা চলবে ৪ মে পর্যন্ত। প্রতিবছরই বাড়ছে বাজেটের আকার। বাজেটে কিছু পণ্যের দাম বাড়বে বা কমবে এ নিয়ে আগ্রহ আপামর জনসাধারণের। আবার অনেকে জানেই না বাজেট কি? তবে অনেক সাধারণ মানুষই বোঝে প্রতিবছর জুন-জুলাই এলে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য পরিবর্তিত হয়। আর এটা হবে জনকল্যাণমূলক, প্রত্যাশা এটাই। বরাবরের মতো এবারও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আসছে বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কিছু খাতে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে আর তা হলোÑ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুত, জ্বালানি, সড়ক, রেলপথ ও বন্দরসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসৃজন প্রকল্প, সরকারী সেবা প্রদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, জলবায়ু মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন এবং বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিকতর ব্যবহার ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন রফতানি বাজার অনুসন্ধান। পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিসহ রফতানিজাত পণ্যের বহুমুখীকরণ, সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক খাতের প্রসার ও এই খাত থেকে রফতানি আয় বৃদ্ধি, ওষুধ শিল্পের মান উন্নয়ন এবং রফতানি বাজার সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনাও থাকবে বাজেটে। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মহাসড়কে রয়েছে। বিভিন্ন সূচকে লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে গত এক দশকে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে বর্তমানে ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এমনটাই আশা করা যায়। লক্ষ্য রাখা দরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি যেন মধ্যস্বত্বভোগী বা সুবিধাভোগীদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের সকল শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে বিস্তৃত থাকে। তাহলেই এ প্রবৃদ্ধি হবে টেকসই। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে সফল খাত হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ। এ খাতটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কর্তৃক সর্বোচ্চ সফল খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করছে। তাই প্রত্যাশা আগামী বাজেট হিসেবে সেবা খাত এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীগুলো চলমান ও শক্তিশালী করা হবে। বর্তমান সরকার কৃষির ওপর শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কৃষির উন্নয়নে বাজেটে ধারাবাহিকভাবে নানা প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় যাদের ঘাম ঝড়িয়ে আমাদের এই সাফল্য, সেই কৃষকরা পাচ্ছে না ন্যায্য মূল্য, ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়ছে। তাদের জন্য এবারের বাজেটে কৃষিঋণ মওকুফের ব্যবস্থা করলে অসহায় কৃষকরা হবে আরও উদ্যমী। দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্তদের সংসার চালানো। বছর পেরোলেই বেড়ে যায় বাসা ভাড়া। বাড়ির মালিকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলছে লাগামহীম। অনেক পরিবার প্রতি মাসের বাসা ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে ন্যূনতম সঞ্চয়টুকু করতে পারছে না। তাই বাসা ভাড়া বৃদ্ধির ওপর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আরোপ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম খাত রেমিটেন্সের প্রবাহ বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে উদ্বেগজনকভাবে কমে যাওয়ায় আগামী বাজেটে প্রবাসীদের প্রণোদনামূলক কর্মসূচি জোরালো হবে এটাই প্রত্যাশা। দক্ষ জনশক্তি গড়তে প্রতিটি জেলাভিত্তিক কারিগরি শিক্ষার প্রসারে করমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিস্তার ঘটানো যেতে পারে। নতুন বাজেটে বাস্তবায়িত হবে নতুন ভ্যাট আইন। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হলে জিডিপি বাড়বে দেড় শতাংশ বলে উল্লেখ করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে সংবাদমাধ্যম। জানা যায়, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক স্থীতিশীলতা বজায় রাখতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। জাতিকে শিক্ষিত করতে বরাবরই শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তথাপি এখনও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি কিছু সুবিধাভোগীদের জন্য। তাই শিক্ষা খাতে বাজেট অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বাস্তবায়নে আরও কড়াকড়ি হলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। সামাজিক সুরক্ষায় প্রতিবন্ধী, অটিজম, বয়স্ক, স্বামী পরিত্যক্ত, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, একই সঙ্গে আশ্রয়হীন মানুষের সহায়তায় বিশেষ তহবিল গঠন এবং ওই তহবিলে বরাদ্দ বাড়ানোর মতো পদক্ষেপগুলো বাজেটে যেন অগ্রাধিকার পায়। মানুষের জীবন মানের উন্নয়নের পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান, প্রস্তাবিত নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহকে দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নেয়া হোক এটাই প্রত্যাশা। জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব হলে সুফল পাবেন দেশ ও দেশের জনগণ। এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হবে আরও উজ্জ্বল।
×