ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মধুপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ধনীর বাস ॥ গরিবের আর্তনাদ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

মধুপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ধনীর বাস ॥ গরিবের আর্তনাদ

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ ভূমিহীন, দুস্থ-অসহায় মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করতে সরকারীভাবে করা আশ্রয়ণ প্রকল্প। এসব প্রকল্পে বাস্তুহারা মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে সরকার অনেক জায়গায় সরকারীভাবে পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে, যেখানে অসহায়, বাস্তুহারা মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে নিশ্চিন্তে বসবাস করবে। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য ও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে মধুপুর উপজেলার পিরোজপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। সেখানে ভূমিহীনদের পরিবর্তে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ও অনিয়মে স্থান পেয়েছে ধনী, গৃহস্থ ও প্রবাসী লোকেরা। আর ভূমিহীন, দরিদ্র, বাস্তুহারারা সংসদ সদস্য, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কাছে আর্তনাদ করছে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে একটি কক্ষ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কেউ শুনছে না তাদের কথা। কার্যকর হচ্ছে না প্রকল্পের উদ্দেশ্য। সরেজমিন এলাকাবাসী আব্দুর করিম, আব্দুর রহমান, আব্বাস ও সিদ্দিক অভিযোগ করে জানান, ১০-১৫ বিঘা জমির মালিক, বাড়িতে পাকা ঘর, ছেলে বিদেশ থাকে তাদের নামেও আশ্রয়ণ প্রকল্পে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল জানান, সরেজমিন তদন্তসাপেক্ষে যাচাই-বাছাই করে তালিকা করা হয়েছিল। সে তালিকা ছিঁড়ে ফেলে ভূমিহীনদের নাম বাদ দিয়ে বিত্তশালীদের নামে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের নামে পাঁচ কক্ষ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে ভূমিহীনরা আর্তনাদ করে মরছে। ভূমিহীন হাওয়া বেগম, মুরশিদা ও রিনা জানান, তারা ভূমিহীন, কোন ঘরবাড়ি নেই, অন্যের বাড়িতে থাকেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে তৈরি ঘরের একটি কক্ষ বরাদ্দ পেতে আবেদন করেছিলেন। তালিকায় নামও ছিল। কিন্তু পরে তাদের কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এক লিখিত বক্তব্যে তারা আরও জানান, কক্ষ বিতরণের জন্য এক গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত গণশুনানিতে মধুপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অরনখোলা ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বারের উপস্থিতিতে পিরোজপুর, চাপাইদ ও কুড়াগাছা গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশ্য শুনানিকালে পূর্বের তালিকাভুক্ত ভূমিহীন, দুস্থ, বাস্তুভিটাহীনদের সর্বসম্মতিক্রমে বাছাই করা হয়। কিন্তু বাছাইকৃত ফরমগুলো নিয়ে তারা একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রুদ্ধদার বৈঠকে বসেন। বৈঠকের একটু পরই তাদের কক্ষের চাবি বিতরণ করতে দেখা যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিতরণক্ষেত্রে দেখা যায়, অসহায়, ভূমিহীন, দরিদ্র লোক যারা নিয়মানুসারে বাস করার জন্য কক্ষ বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য তাদের বাদ রেখে যাদের জায়গা-জমি, ঘরবাড়ি আছে এবং শুনানিকালে বাদ পড়েছেন, বিস্ময়করভাবে তাদের হাতেই কক্ষের চাবি তুলে দেয়া হয়। এতে উপস্থিত এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা দুর্নীতি, প্রভাব, অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে সরকারের এ সফল প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরেজমিন তদন্ত, যাচাই-বাছাই করে নিয়মানুসারে প্রাপ্য দরিদ্র, বাস্তুহারাদের মাঝে কক্ষ বরাদ্দ দিতে স্থানীয় এমপি ড. আব্দুর রাজ্জাকসহ উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, তার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগপত্র আসেনি। এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প, কোন অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না, এসব দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×