ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেকৃবিতে সেমিনার

জিনম এডিটিংয়ের মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

জিনম এডিটিংয়ের মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেকসই কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিতে বায়ো-টেকনোলজির ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ে বায়ো-টেকনোলজি বিজ্ঞানের অন্যতম আশীর্বাদ। বায়ো-টেকনোলজির বিবর্তনের ফলে সম্প্রতি উদ্ভাবিত ‘জিনম এডিটিং’-এর মাধ্যমে ফসলের যে কোন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গমে যে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে- জিনম এডিটিং’র মাধ্যমে গমের ডিএনএ থেকে ওই জিনটি সরানো সম্ভব হলে গমের নতুন জাত উদ্ভাবন সম্ভব হবে। উদ্ভাবিত জাতটি হবে ব্লাস্ট প্রতিরোধী। এ জাত উদ্ভাবনে আরও ৩ বছর সময় লাগতে পারে। একইভাবে সম্প্রতি ধানে ছড়িয়ে পড়া ব্লাস্টের জীবন রহস্য উন্মোচনের কাজ চলছে। জিনম এডিটিং’র মাধ্যমে রোগটি প্রতিরোধের চেষ্টা করছে দেশের একদল বিজ্ঞানী। আর এসব সম্ভব হয়েছে কেবল বায়ো-টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে। কৃষিতে বায়ো-টেকনোলজির প্রসারে দেশের সরকারও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের কৃষি অনুষদের সেমিনার কক্ষে ‘প্রসপেক্ট অব এগ্রিকালচার বায়ো-টেকনোলজি ফর সাসটেইনেবল ফুড সিকিউরিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। এর আগে বাংলাদেশ এলায়েন্স ফর সায়েন্স ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মার্চ ফর সায়েন্স নামক বিজ্ঞান র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীসহ দু’শতাধিক বিজ্ঞানপ্রেমী তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞানের পক্ষে নানা সেøাগান সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা। র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। প্রসঙ্গত, ওয়ার্ল্ড আর্থ ডে বা বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে বিশ্বের ৬০০টির বেশি শহরে একযোগে মার্চ ফর সায়েন্সসহ নানা কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কর্নেল এ্যালায়েন্স ফর সায়েন্স। দেশে এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে শেকৃবির এই বিজ্ঞান র‌্যালি ও সেমিনার। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ও গবেষক ড. আবেদ চৌধুরী ও মাসিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘বিজ্ঞান চিন্তা’র সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। মূল প্রবন্ধে ড. মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ২ হাজার বছর আগে থেকেই বিশ্বে বায়ো-টেকনোলজির প্রচলন ছিল। বায়ো টেকনোলজি যেভাবে বিবর্তিত হয়েছে বর্তমানে এর ব্যবহার অত্যাবশ্যক। প্রতিটি জীবের ডিএনএ’র মধ্যে জীবন রহস্য লুকিয়ে থাকে। ডিএনএ’র মধ্যে সকল বৈশিষ্ট লেখা থাকে। এটা এখন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অর্থাৎ জীবের জীবন বৈশিষ্ট্য এখন মানুষের নিয়ন্ত্রণে। কোন একটি ডিএনএ’র মধ্যে ডায়াবেটিকস রোগের কোড থাকলে এটা কেটে সরিয়ে দিলে ওই লোকটি আর ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত হবেন না। একইভাবে গমের ডিএনএ থেকে যদি ব্লাস্ট রোগের কোডটি সরিয়ে দেয়া যায়; তাহলে গম আর ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হবে না। গমের ডিএনএ থেকে সংবেদনশীল অংশটুকু জিনম এডিটিং’র মাধ্যমে সরিয়ে আমরা উন্নত জাতের গম উদ্ভাবন করব। আর উদ্ভাবিত জাতটি হবে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। তিনি বলেন, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী গম উদ্ভাবন করতে আরও বছর তিনেক সময় লাগবে। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের সহায়তায় আমরা এই পরীক্ষা চালাচ্ছি। প্রফেসর সাফিয়ান কামাউন ও নিকোলাস এলবর্ড এই টিমে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিতে নতুন নতুন ঘাত প্রতিঘাত আসছে। এই সময়ে জিনম এডিটিং এক কথায় সুপার টেকনোলজি। এর প্রসার সম্ভব হলে ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। বায়ো-টেকনোলজির মাধ্যমেই টেকসই খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সিস্টেম (সাউরেস) এর পরিচালক ও শেকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ সেকেন্দার আলী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল হক বেগ। মার্চ ফর সায়েন্স-বাংলাদেশ-এর সমন্বয়ক শেকৃবির উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রির উর্ধতন যোগাযোগ কর্মকর্তা ও কর্নেল এ্যালায়েন্স ফর সায়েন্স ফেলো এম আব্দুল মোমিন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এ্যালায়েন্স ফর সায়েন্স-বাংলাদেশ-এর লীড ও কর্নেল ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো মোঃ আরিফ হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গসংগঠন ‘কর্নেল এ্যালায়েন্স ফর সায়েন্স’ বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক ইনোভেশন ও উদ্ভাবনের পক্ষে জনসচেতনতা তৈরি ও শক্তিশালী জনমত গঠন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করে। বিজ্ঞানের বিপক্ষে প্রচলিত নেতিবাচক প্রচারণা, প্রোপাগা-া বা কুসংস্কার সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে সচেতনতা ও জনমত গঠনের লক্ষ্যে বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এ্যালায়েন্স ফর সায়েন্স কাজ করে যাচ্ছে তারা।
×