ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দর সোনালু

ঝুলন্ত মঞ্জরী, কাঁচা হলুদ রঙের ফোয়ারা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

ঝুলন্ত মঞ্জরী, কাঁচা হলুদ রঙের ফোয়ারা

মোরসালিন মিজান ॥ সচিবালয়ের ঠিক উল্টোদিকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। মিলনায়তনের সামনে বেশ কয়েকটি সোনালু ফুলের গাছ। আগেও দেখা হয়েছে। শনিবার ফুলভর্তি গাছের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এই সুন্দর দেখার কোন শেষ নেই। বার বার দেখা যায়। বার বার দেখা চাই। অসংখ্য ফুল। যেন ফুলের মেলা। কাঁচা হলুদ রঙের উৎসব। ফুলভর্তি গাছ দেখে মনে হয় কেউ বুঝি হলুদ রঙের কৌটা উপুড় করে দিয়েছে! বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সোনালু মুগ্ধ করে রাখে। চোখ ফেরানো যায় না। শাওয়ার থেকে নেমে আসা শান্ত কোমল জলধারার সঙ্গে ঝুলন্ত দীর্ঘ মঞ্জরীর ভীষণ মিল। বৃষ্টির ঝিরিঝিরি হাওয়ায় দোল খাচ্ছিল। পাহাড়ী ঝর্ণার যে ছন্দ, তার সঙ্গেও একটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। উপর থেকে গড়িয়ে পড়া জলের মতো ফুলগুলোও যেন নিচের দিকে নেমে আসতে চাইছে। কিছু সময় পর রোদ দেখা দিলে হলুদ পাপড়িগুলোকে সোনারঙের মনে হয়। অমনি গুনগুন করে ওঠে মন- এ কী সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে...। অবশ্য শুধু ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নয়, শহর ঢাকার বিভিন্ন উদ্যানে আছে সোনালু গাছ। বিভিন্ন রাস্তার ধারে গাছটি লাগানো হয়েছে। সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়েই এমন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল। গত চৈত্রেও এসব গাছ ছিল বিবর্ণ। এখন এই গ্রীষ্মে, বৃষ্টিভেজা দিনে ফুল এসেছে। অনেক দূর থেকে দৃশ্যমান হচ্ছে প্রতিটি গাছ। সোনালু ফুল সোনাইল নামেও পরিচিত। ইংরেজী নাম গোল্ডেন শাওয়ার। আর বৈজ্ঞানিক নামটি ক্যাশিয়া ফিস্টুলা। এটি গ্রীক ভাষা থেকে নেয়া। ফিস্টুলা শব্দের অর্থ বাঁশি। সোনালু ফলের আকার-আকৃতি আমলে নিয়ে সোনালুকে ‘বানরলাঠি’ বলেও ডাকা হয়। সোনালুর ফল ও গাছের পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এ কারণেও একে ‘বানরলাঠি’ বলা হয়ে থাকে। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, সোনালু গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর বাকল পুরু এবং মসৃণ। ফাল্গুনে ব্যাপকহারে পাতা ঝরে। চৈত্রে পাতাহীন শুকনা কাঠির মতো গাছ হয়। প্রাণহীন দেখায়। ফুল ফুটলে বদলে যায় সব। সোনালুর পাঁচটি পাপড়ি। ফুল প্রায় এক ইঞ্চি চওড়া। একমাত্র গর্ভকেশরটি সবুজ। কাস্তের মতো বাঁকা। ফুলের মঞ্জরী প্রায় ২০ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। সোনালুর ফলগুলো এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ দেখতে হয়। পাকলে কালচে লাল। সোনালুর কিছু ঔষধিগুণও বিদ্যমান। ছাল, পাতা ও ফলের মজ্জা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার ও ভাইরাস প্রতিরোধে কাজে আসে। এছাড়া ডিপথেরিয়া গ-মালা, কুষ্ঠরোগের ক্ষত চিকিৎসায় কার্যকর। ফলের মজ্জা কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যায় উপকারী। আরও অনেক উপকারের কথা বলা যাবে। তবে সোনালুর যে সৌন্দর্য তা লিখে বোঝানো কঠিন কাজ। বরং দেখুন। একবার দেখে বুঝে নিন, কেন বলে বোঝানো যাবে না সোনালুর সুন্দর!
×