ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তাব কার্যকর হলে বিলের পরিমাণ এক লাফে বাড়বে ৫০ ভাগের বেশি

সামর্থ্যবান গ্রাহকের বিদ্যুতে ভর্তুকি তুলতে চায় পিডিবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

সামর্থ্যবান গ্রাহকের বিদ্যুতে ভর্তুকি তুলতে চায় পিডিবি

রশিদ মামুন ॥ সামর্থ্য রয়েছে এমন আবাসিক গ্রাহকের বিদ্যুত ক্রয় থেকে ভর্তুকি তুলে দিতে চায় বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া চলছে সেখানে নতুন আঙ্গিকের এ প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। প্রাথমিকভাবে সামর্থ্যবান আবাসিক গ্রাহক হিসেবে ফ্ল্যাট, এ্যাপার্টমেন্ট অথবা সমিতির মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করে বসবাসকারীদের চিহ্নিত করার কথা বলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিপিডিবির বিতরণ এলাকার জন্য দেয়া প্রস্তাবটি মেনে নিলে তা অন্য বিতরণ কোম্পানির ওপরও বর্তাবে। সেক্ষেত্রে সব সামর্থ্যবান গ্রাহকের বিদ্যুতের দরই একলাফে ৫০ ভাগের বেশি বেড়ে যাবে। বিপিডিবি সূত্র বলছে, কয়েক বছর আগে বিপিডিবি রাজধানীর বারিধারা-বনানী এবং গুলশান এলাকায় ভর্তুকি তুলে দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের চিন্তা করে। এজন্য স্থানীয়ভাবে জরিপও চালায় সংস্থাটি। কিন্তু তখন অভিজাত এই তিন এলাকার কেউই বাড়তি দরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত গ্রহণে রাজি হননি। এরপর এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের দর নির্ধারণের সø্যাব পদ্ধতি বিলুপ্ত করে। এতে করে গ্রাহকের বাড়তি বিল গুনতে হয়। সমালোচনার মুখে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সেই সিদ্ধান্তও প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। এখন সব আবাসিক গ্রাহককেই সমান দরে বিদ্যুত কিনতে হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে জমা দেয়া বিদ্যুতের গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে ভর্তুকি তুলে দিয়ে এই শ্রেণীর মানুষের জন্য প্রতি ইউনিটের দাম ৭ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এদের জন্য সø্যাব শ্রেণীও তুলে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন একজন গ্রাহকের জন্য যেভাবে বিদ্যুতের দর নির্ধারণ করা হয় তাও তুলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এখন বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১ থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৩৩ পয়সা, ১ থেকে ৭৫ ইউনিট ৩ টাকা ৮০ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ৫ টাকা ১৪ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ৫ টাকা ৩৬ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ৫ টাকা ৬৩ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট ৫ টাকা ৮০ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের বেশি ৯ টাকা ৯৮ পয়সা। এর মধ্যে প্রথম ধাপের সুবিধা পায় একেবারে প্রান্তিক গ্রাহক। যাদের ব্যবহার কেবল ১ থেকে ৫০ ইউনিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এছাড়া অন্য শ্রেণীর গ্রাহকের বিদ্যুতের দর নির্ধারণের সময় সø্যাবের সুবিধা পান সকল গ্রাহক। কোন গ্রাহক ২৩৬ ইউনিট বিদ্যুত ব্যবহার করলে তার প্রথম ৭৫ ইউনিটের দর নির্ধারণ করা হয় ইউনিট ৩ টাকা ৮০ পয়সা হিসেবে, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিটের দর নির্ধারণ করা হয় ৫ টাকা ১৪ পয়সা এবং বাকি অংশের দাম পড়ে ৫ টাকা ৩৬ পয়সা হিসেবে। অর্থাৎ ২৩৬ ইউনিট ব্যবহারকারী গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম পড়ে কোন রকম কর এবং সার্ভিস চার্জ ছাড়াই এক হাজার ১১৫ দশমিক ৩২ টাকা। এক্ষেত্রে বিপিডিবির প্রস্তাব মেনে সামর্থ্যবান গ্রাহকের বিদ্যুত বিল প্রদানের নতুন পদ্ধতি মেনে নিলে (প্রস্তাব উল্লেখিত দর ধরে) দাম পড়বে এক হাজার ৮৪০ টাকা ৮০ পয়সা (কর এবং সার্ভিস চার্জ ছাড়া)। এতে এই শ্রেণীর গ্রাহকের দর একবারে বেড়ে যাবে ৬৫ ভাগের মতো। বিপিডিবির প্রস্তাবের উল্লেখিত পরিমাণ বৃদ্ধি হলে দাম বাড়বে অন্তত ৬৫ শতাংশ। যা গ্রাহকের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে সরকার বিদ্যুত এবং জ্বালানিতে আর কোন ভর্তুকি দেবে না। এর ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমাচ্ছে না। ভর্তুকি উঠে গিয়ে ব্যবসা হলেও সরকার জ্বালানি তেলের দাম না কমানোর বিষয়ে উল্টো নানা যুক্তি হাজির করছে। এমনকি বাড়তি দরের এই জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করতে গিয়ে বিপিডিবির যে লোকসান হচ্ছে তাও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের পকেট থেকে তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিপিডিবি তাদের প্রস্তাবে দাবি করেছে এখন গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুত সরবরাহের ক্ষেত্রে গড়ে তারা ৬ টাকা ৭০ পয়সার মতো খরচ করছে। তাদের এই দাবি সঠিক হলে ৬০০ ইউনিটের নিচে যারাই বিদ্যুত ব্যবহার করছে সকলেই বিদ্যুতের ভর্তুকির আওতায় রয়েছে। জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ নিয়েই আমাদের আপত্তি রয়েছে। আমরা বলছি তেলের দাম সমন্বয় করে বিদ্যুতের দাম আরও কমানো যায়। সেখানে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফ্ল্যাটে বসবাস করলেই তাদের বেশি বিদ্যুতের দাম দিতে হবে এটা কোন যুক্তি হতে পারে না। বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থায় সø্যাব প্রথা রয়েছে। এখানে একজন গ্রাহক তার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে দাম কমাতে পারে। সেখানে তা তুলে দিলে গ্রাহকের ওপর অবিচার হবে বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, প্রস্তাবটি পর্যালোচনা হচ্ছে। এরপর গণশুনানি হবে। গণশুনানির পর আদেশ দেয়া হবে। সুতরাং এখনই বলা যাবে না চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি হবে। বিপিডিবি কিসের প্রেক্ষিতে প্রস্তাব দিয়েছে তারাই ভাল বলতে পারবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিপিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালিদ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
×