ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেলার নেতা এমপিদের সঙ্গে আজ থেকে বৈঠক

আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা ও দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনে একগুচ্ছ পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা ও দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনে একগুচ্ছ পরিকল্পনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই দলকে চাঙ্গা এবং তৃণমূলে সৃষ্ট কোন্দল-দ্বন্দ্ব নিরসনে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান এবং তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব নিরসনে আজ রবিবার থেকে জেলার নেতা ও এমপিদের সঙ্গে ঢাকায় ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করছে দলটি। শুধু দলীয় নেতাকর্মীদেরই ঐক্যবদ্ধ করা নয়, একইসঙ্গে সমমনা নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকেও একাট্টা করতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। সম্প্রতি তৃণমূলের অনেক স্থানেই আওয়ামী লীগে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ রীতিমতো সংঘাতে রূপ নিয়েছে। কিছুদিন পর পরই দেশের কোথাও না কোথাও নিজেদের মধ্যে ভাতৃঘাতী সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এতে করে সম্প্রতি কয়েকটি স্থানে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে বেশ ক’জন নেতাকর্মীর প্রাণও ঝরে গেছে। এসব ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ দলটির হাইকমান্ড। দ্রুত এসব দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হাইকমান্ডের নির্দেশেই এই ধারাবাহিক বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই স্বীকার করেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ভেতরে আধিপত্য বিস্তারের কোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠলেও সংঘাত থামানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এসব ঘটনায় দলটির নীতিনির্ধারক মহল রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ কারণেই শক্ত হাতে দলের হাল টেনে ধরতে এবং তৃণমূলের দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জর্জরিত জেলার নেতাদের ঢাকায় তলব করে বৈঠকের মাধ্যমে তা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র মাহবুবউল আলম হানিফ জনকণ্ঠকে জানান, বর্তমানে আমাদের দলের অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা। আর এ লক্ষ্যেই দেশের যেখানে যেখানে দলের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ছোট-খাট সমস্যা রয়েছে, দ্বন্দ্ব-কোন্দল রয়েছেÑ তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলে সারাদেশেই দলকে শক্তিশালী সাংগঠনিক শক্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য আমরা যেসব জেলায় সমস্যা রয়েছে তাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকে বসে তা নিরসন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। জানা গেছে, তৃণমূলের কোন্দল-দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলকে শক্তিশালী ও চাঙ্গা করে গড়ে তুলতে আজ রবিবার থেকেই তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। আজ প্রথম দিন কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলার নেতাদের সঙ্গে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া আগামীকাল সোমবার যশোর, ২৭ এপ্রিল নীলফামারী এবং ৪ মে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্ট জেলার সংসদ সদস্যের নিয়ে বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার নেতা এবং সংসদ সদস্যদের বৈঠকের বিষয়টি অবহিত করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই পেশাজীবী সংগঠন আইনজীবী এবং সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে বৈঠকের সূচী চূড়ান্ত করেছে দলটি। আগামী ২৬ এপ্রিল বিকেল ৫টায় সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে এবং ৩০ এপ্রিল আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। উক্ত বৈঠকগুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। গত ১৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকম-লীর সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সভায় সাংগঠনিক বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক অবস্থা, সংকট এবং সমাধান নিয়ে আমাদের সাংগঠনিক নেতারা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। আমাদের কিছু কিছু সংকট আছে। সেগুলো আমরা ধারাবাহিকভাবে জেলা-উপজেলা নেতৃবৃন্দকে সভানেত্রীর কার্যালয়ে ঢাকায় ডেকে এনে এই মাস থেকেই আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করব। আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। সভায় আমাদের এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুতেই থামছে না আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাত। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কুমিল্লার মুরাদনগরে এবং নরসিংদীর রায়পুরায় ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে তিনজনের প্রাণ গেছে। একই সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কয়েকদফা সংঘর্ষে জড়িয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাও স্বীকার করেছেন। দেশের অধিকাংশ জেলাতেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। তৃণমূলের এসব কোন্দল-দ্বন্দ্বে শুধু জেলার নেতারাই নন, সংসদ সদস্য এবং অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও জড়িত রয়েছেন। এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই আজ থেকে কোন্দল থাকা জেলার তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে তা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের এক প্রতিনিধি সভাতেও শনিবার প্রকাশ্য ক্ষোভ ঝেড়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কিছু আছে আওয়ামী লীগ করে, আবার নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এদের দলের প্রতি কোন আনুগত্য, ভালবাসা নেই। যে নেতারা এই বিদ্রোহীদের মাঠে নামায়, দলের গলা কাটেন, ছুরিকাঘাত করেন, সেই নেতারা বিদ্রোহীদের চেয়েও বেশি দলের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। কিন্তু সবাই সতর্ক থাকবেন, উস্কানিদাতাদের সম্পর্কে সমস্ত রিপোর্ট রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। সময় মতো সবাই টের পাবেন, কত ধানে কত চাল।
×