ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অপারেশন সাউথ প’ শেষে ডিআইজির ব্রিফিং ॥ উদ্ধার হয়েছে ২০ ড্রাম হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড

ঝিনাইদহের আস্তানায় মিলল অস্ত্র গুলি বোমা ও বিস্ফোরক

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

ঝিনাইদহের আস্তানায় মিলল অস্ত্র গুলি বোমা ও বিস্ফোরক

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ, ২২ এপ্রিল ॥ ঝিনাইদহের পোড়াহাটি গ্রামের জঙ্গী আস্তানার ‘অভিযান শেষ’ ঘোষণা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার সকাল সোয়া নয়টা থেকে অভিযান শুরু হয়ে দুটো পর্যন্ত চলে। পাঁচ ঘণ্টার এ অভিযানের পর ‘অপারেশন সাউথ প’-এর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এর আগে শুক্রবার বিকেলে জঙ্গী আস্তানা নও মুসলিম আব্দুল্লাহর বাড়িটি রাতভর ঘিরে রাখে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। দুপুর দুটো পর্যন্ত জঙ্গী আস্তানা থেকে পর্যায়ক্রমে উদ্ধার করা হয়েছে ২০ ড্রাম হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ১০০ লোহার বল, তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট, নয়টি সুইসাইডাল বেল্ট, বিপুল ইলেক্ট্রিক সার্কিট, ১৫ জিহাদী বই, একটি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, একটি মোটরসাইকেল, একখানি চাপাতি, বিপুল বিস্ফোরক, ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের ছয়টি শক্তিশালী বোমা। এর মধ্যে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট ও দুটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। শনিবার সকালে অভিযান শুরুর সময় জঙ্গী আস্তানার আশ-পাশের বাড়িঘর থেকে লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়। অভিযান চলাকালে বোমা নিস্কিৃয় করার বিকট শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। অভিযান শুরু হওয়ার আগে জঙ্গী আস্তানা থেকে ৫শ’ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ভয়ে আতঙ্কে থাকে গ্রামবাসী। অভিযান শেষ হওয়ার খবরে গ্রামবাসীর মুখে হাসি ফেরে। দুপুর দুটায় অভিযান শেষে ঘটনাস্থলেই প্রেস ব্রিফিং করেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ। তিনি বলেন, পোড়াহাটি গ্রামের নও মুসলিম আব্দুল্লাহ নিউ জেএমবির সদস্য। ওই বাড়িতে শীর্ষ জেএমবি নেতাদের আনাগোনা ছিল। এলাকায় বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে সে এগোচ্ছিল। তিনি বলেন, অপারেশন কার্যকর করেছে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের এলআইসি, কাউন্টার টেররিজম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ, রেঞ্জ ফোর্স অফিসাররা। তিনি বলেন, জঙ্গী আস্তানা থেকে বিপুল বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, অস্ত্র, গুলি, জিহাদী বই, সুইসাইডাল ভেস্ট ও বেল্ট উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হযেছে। তিনি বলেন অভিযানে কোন জঙ্গী পায়নি, কিন্ত তার ঠিকানা আনুসঙ্গিকতা পেয়েছি। জঙ্গী অভিযান শেষ হয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শেষ হয়নি। তাকে না ধরা পর্যন্ত অভিযান চলবে। কারা এর সঙ্গে জড়িত সব পেয়ে গেছি। তদন্তের স্বার্থে তা বলছি না। আব্দুল্লাহ নিউ জেএমবির সদস্য। সে এই আস্তানায় যেভাবে বিস্ফোরক জড়ো করেছে তাতে বড় ধরনের কোন অঘটন ঘটানোর প্রস্তুতি ছিল। বাড়িটি জেএমবি তাদের অস্ত্রশস্ত্র তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করত। এখানে জেএমবির বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের আনাগোনা ছিল। তাদের পেছনে আমরা আছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে। জিআইজি আরও বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে মারা গেলে বেহেস্তে যাব; এ ধরনের বিভ্রান্ত করার সুযোগ বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশের সকল মানুষই ধর্মভীরু। তারা জঙ্গী দমন অভিযান সমর্থন করেন। জনগণের সহযোগিতায় আমরা এ অভিযান শেষ করতে পেরেছি। বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গীবিরোধী শক্ত অবস্থান নিয়েছে। নির্বিঘেœ এ অভিযান শেষ করতে পেরে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় খুলনা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদারসহ পুলিশ, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান এডিসি নাজমূল, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান এডিসি রহমতসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন পোড়াহাটি গ্রামের ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী আব্দুল্লাহর বাড়ি ঘিরে ফেলে। অভিযান শুরু করে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে রাত দশটার দিকে অভিযান স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ডিআইজি দিদার আহম্মেদ বলেন, জঙ্গী আস্তানায় বিপুল বিস্ফোরক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। রাতে অভিযান শেষ করা সম্ভব নয়। শনিবার সকালে অভিযান শুরু করা হবে। সে পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বাড়িটি কর্ডন করে রাখবে। রাতে ওই এলাকা বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে ভুতুড়ে রূপ নেয়। সে সময় পুলিশ এলাকায় জেনারেটর দিয়ে লাইটিং করে। পরে সকালে অভিযান শুরুর সময় জঙ্গী আস্তানার আশপাশের বাড়ি থেকে লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়। উল্লেখ্য, নও মুসলিম আব্দুল্লাহ ৫ বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। আগে তার নাম ছিল প্রভাত ওরফে বেড়ে। পিতার নাম চৈতে বিশ্বাস। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে তার বাড়ি।
×